বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ব্রেনডেড ঘোষিত (রোগীর হার্টবিট থাকলেও লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেললে মারা যাবে এমন রোগী) রোগীর কাছ থেকে সংগৃহীত কিডনি বিকল রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন হতে পারে আগামী সপ্তাহেই। দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে দেশীয় কিডনি বিশেষজ্ঞ সার্জনরা অস্ত্রোপচার কাজে অংশগ্রহণ করবেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদ এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশেষজ্ঞ দল এক সপ্তাহের (১১-১৭ ফেব্রুয়ারি) জন্য বাংলাদেশে আসছেন।
বাংলাদেশে অবস্থানকালে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), বারডেম, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ও কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) পরিদর্শন করবেন।
এছাড়া তারা বাংলাদেশি কিডনি বিশেষজ্ঞদের জীবিত ও মৃত রোগীর দেহ থেকে কিডনি সংগ্রহ করে তা কিডনি বিকল রোগীদের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয় এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মশালায় প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন।
এছাড়া কোনো আইসিইউতে ব্রেনডেড ঘোষিত রোগীর অভিভাবকদের সম্মতি সাপেক্ষে তাকে (রোগীকে) মৃত ঘোষণা করে ওই রোগীর দেহ থেকে কিডনি সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপন করা হতে পারে।
তিনি বলেন, অনেক সময় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীকে ব্রেনডেড ঘোষণা করা হয়। এ ধরনের রোগীর হার্টবিট চললেও মস্তিষ্কসহ অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে না। এসব রোগী লাইফ সাপোর্ট নিয়ে নামেমাত্র বেঁচে থাকেন। লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেললে তারা মারা যান। এ ধরনের রোগী পাওয়া গেলে এবং অভিভাবকরা রাজি হলেই তবেই মৃত রোগীর দেহ থেকে দুটো কিডনি দুইজন রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে।
ইতোমধ্যেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই কিডনিই বিকল এমন কমপক্ষে ৭-৮ জন কিডনি রোগীকে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট করতে তৈরি রাখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৮২ সাল থেকে বাংলাদেশে কিডনি প্রতিস্থাপন হচ্ছে। কিন্তু আগে আইনি বাধা থাকায় মৃত রোগীর দেহ থেকে কিডনি সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু গত বছর বিদ্যমান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আইনের সংশোধনীতে মৃত রোগীর দেহ থেকে কিডনি সংগ্রহ করে অস্ত্রোপচার করতে যাবে- এই মর্মে আইনের সংশোধনী হওয়ায় বর্তমানে মৃত রোগীর দেহ থেকে কিডনি সংগ্রহে আর কোনো বাধা নেই।
তবে আইনি বাধা না থাকলেও এখনও ব্রেনডেড ঘোষিত রোগীর দেহ থেকে কিডনি সংগ্রহ করতে পরিবারগুলোতে মানসিকতা তৈরি হয়নি। ব্রেনডেড ঘোষিত রোগীর অভিভাবকদের সম্মতি সাপেক্ষে দুটো কিডনি পাওয়া গেলে ঢামেক, বিএসএমএমইউ কিংবা কিডনি হাসপাতালের যেকোনো দুটিতে দুজন কিডনি রোগীর দেহে প্রতিস্থাপিত হবে।
অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন বলেন, মৃত রোগীর দেহ থেকে কিডনি সংগ্রহ যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা সহজ হবে না। পরিবার থেকে বিরাট বাধা আসবে। তবে তারা সকলেই কামনা করছেন যেন আগামী সপ্তাহেই দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হবে এমনটা আশা করছেন।