কোনো এক বিচারে আমার কাছে মনে হয় আমরা কেউই অপরাধী না। হ্যাভেন থাকলেও হেল এর অস্তিত্ব এই পৃথিবীতেই আছে শুধু। আমরা সবাই করো না করো কাছে মহামানব বা মহাপাপী। এমন মানুষ নেই যেকিনা সকল মানুষের কাছে অপরাধী। হিটলারেরও একশো একটা ফ্যান খুজলে পাওয়া যাবে, এখনো!
চিরাচরিত সমস্যা বিষয়বস্তু থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়া। লেখার চেষ্টা করতেছি প্রেমের ক্ষেত্রে সৎ থাকা নিয়ে। কোনো লেখার বিষয় বা টাইটেল লিখে দেওয়া অনেকটা কোকিল আঁকে নিচেই লিখে দেওয়া এটা কোকিল!
প্রেমের প্রথম এবং প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে বিশ্বাস। মূলত বিশ্বাস এটাই করতে হয় যে আমরা মিথ্যা বলবো কিন্তু দু’জন দু’জনকে বিশ্বাস করবো। মিথ্যা বলা আর্ট এর পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিশ্বাস খুব একটা চাপে অনুভব করে না। কারণ ওই পর্যায়ে দু’জনই ব্যাপারটা শিল্পশিল ভাবে উপস্থাপন করে।
এই একই ফর্মুলাতে সত্য কাজ করে। শুধু মিথ্যা কেটে সত্য করে দিলেই হিসেব মিলে যাবে। আমি যতটা সৎ থাকবো আমার বিপরীতের মানুষটাও যদি সেই পরিমাণ সৎ থাকে তাহলে বিশ্বাস অটুট থাকবে।
মিথ্যার সাথে মিথ্যা বলার গড়মিল হলে আমরা কষ্ট পাই না। হই কিছুটা সাবধান। ভবিষ্যতের আরো সাবধানে বলার চেষ্টা করা হয় যেনো ধরা না পড়ি।
কিন্তু অপর দিকে সত্যের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। সত্যের কম বেশি হওয়ার মানে কেউ সত্য বলছে তার বিপরীতে বিপরীত জন মিথ্যা বলছে। এই সত্যের বিপরীতে মিথ্যা আমরা সহ্য করতে পারি না। জীবনের কোন ক্ষেত্রেই আমরা এটা সহ্য করতে পারি না। তখনই আমরা কষ্ট পাই। আসলে কষ্টের সাথে কোনো বিশেষ বিশেষণ যায় না। তাতে কষ্ট কম বা বেশি হয়ে যায় না। তাই কষ্ট শুধু কষ্টই।
এই গড় মিলের গড়ে আমরা কেউ হয়ে উঠি মহান, কেই হয়ে উঠি মহাপ্রতরক। সবসময় একটা ব্যাপার আমাদের খেয়াল রাখা উচিত যে আমরা শুধুই মজা নেওয়ার জন্যে যদি কোনো কিছু করে থাকি তো সেখানে ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত না যে; বিপরীতের মানুষটার মানুষের প্রতি ঘৃণা জন্ম নেই। যদিও আমরা সবাই জানি আমাদের বেশিরভাগ সম্পর্ক গুলো তৈরি হয় বাজি ধরা বা জিদ করার মাধ্যমে। ব্যাপারটা এমন যে “দোস্ত, মাইয়াটা জোস। চল একটা টুকা দেই” এই টিকাটুকির ফিরিঙ্গে আমরা জড়িয়ে পড়ি গভীর থেকে গভীরতর সম্পর্কে। এই সম্পর্কের ভবিতব্য ঘুটঘুটে অন্ধকার। যদিও সব সম্পর্কের ভবিতব্যই ঘুটঘুটেময়।
মিথ্যে দিয়ে শুরু সম্পর্ক গুলো একটা সময় সত্যবাদী যুধিষ্ঠির হয়ে উঠে। না দুই পক্ষই না। একটা পক্ষ। লক্ষণ গুলো বুঝতে বিপরীত পক্ষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তথাকথিত ব্রেকআপ, তোমার সাথে আমার যায় না, তুমি সন্দেহপ্রবণ কিংবা যারযার সাধ্যমতো আঘাত করে সরে যায়। হয়ে যায় প্রাক্তন। এমনটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরা করে। মেয়ে যদি সত্যি ছেলেটাকে ভালোবাসে আর ছেলেটা ভালো না বাসে তবুও সে তাকে ছেড়ে দেই না। কারণ ছেলেরা ক্ষুধার্ত।
সব লেখার বা বলার পরিসমাপ্তি হয় না। আমার সব থেকে ভয়ের যায়গা হচ্ছে সম্পর্ক। আসলে মিডিয়াম গুলো শুধু বদলে গেছে আমাদের। চিঠি, এসএমএস, ম্যাসেঞ্জার। দূরত্ব অতিক্রম করে ঠিকই কাছে কাছে চলে আসে। নিজেকে বিশ্বাস করে কাউকে ভালোবাসি বলার পরে আর নিজেকে বুঝে উঠা যায় না। নিজের সাধ্যের বাধ্যতা জানা থাকলে অচিরেই চির ধরে বাধার দেওয়ালে। নিজেকে নিজের জানার বাইরে নিয়ে যায়। ঘটিয়ে ফেলা হয় নানা অসাধ্য সাধন। যে মাধ্যমেই হোক অনুভূতি তো সেই তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে।
প্রতিটি মেয়েই মহামানবীয় গুণ নিয়ে জন্ম নেই। ছেলেরা সেটা পারে না। সত্যি বলতে সম্পর্কের মায়াময়ীতা অগ্রাহ্য করা যায় না। মহামানবেরও পারে না। তারা যেটা পারে সেটার নাম অভিনয়। চর্ম চৌক্ষে দেখার সুযোগ হয়েছে শুধু একবার শুনবে “ভালোবাসি তোমাকে” অথবা “কেনো ভালোবাসো না আমাকে”। আর কিচ্ছু না। শুধু এইটুকু শুনেই জীবন পার করে দিতে চাই। আবার এমনও দেখেছি পাগলের মত ভালোবাসে অথচ কথার মালা গাথে না। তার প্রতিটি শ্বাসের উষ্ণতা মাখে গোপনে। উষ্ণশিক্ততা রেখে দেই বুকের খাজে খুব গোপনে।
সত্য মিথ্যা যেটা দিয়েই সম্পর্ক শুরু হোক না কেনো সেটা কখনোই এমন পর্যায়ে নেওয়া উচিত না যেনো কাটানো সময় গুলো মিথ্যে হয়ে যায়। দোষ আদান প্রদানের মাধ্যমে মুহূর্ত গুলো অপরাধী হয়ে যায়। যে মুহূর্ত গুলো নিয়েই আমরা অনন্তকাল বেঁচে থাকি, থাকবো অন্য কারোর বুকের খাজে খুব গোপনে। ঝুলে যাওয়া থুরথুরে গালে যেনো কখনো কাউকে অপরাধী করে মুখ বিষন্ন না হয় বরং ফুটে উঠে মিষ্টি হাসি।
জীবনের শেষ মুহূর্তে ভালোবাসার মানুষটার সাথে থাকা যাক বা না যাক। থেকে যায় যেনো বুকের গহীনে সত্য নিয়ে। নিজের অবস্থান থেকে সত্যের সাতকাহন গেঁথে কারোর সাথে সম্পর্ক করলে থাকাই যায় বিদ্যমান আজীবন।
“কিচ্ছু চাইনি আমি আজীবন ভালোবাসা ছাড়া, আমিও তাদের দলে বারবার মরে যায় যারা!”
…
এনামুল খান
জানুয়ারি ৩০, ২০১৯ইং