বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে সবার আগে আসেন আর যান সবার পরে-মুশফিকুর রহিমকে কেউ এক কথায় প্রকাশ করতে গেলে এভাবেই বলে থাকেন।
এমনিতেই ফিটনেস টেস্টে জাতীয় দলে তাকে হারানোর মতো নেই কেউই।
তবে বিশ্বকাপ ঘিরে সেই ফিট মুশফিকই, নিজেকে যেন নিয়ে গেছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এটা কি বড় মঞ্চ সামনে রেখে বড়সড় কোন প্রস্তুতি?
”অবশ্যই, তাতো বটেই। বিশ্বকাপ সামনে রেখে একটু আলাদা করেই ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছি। হালকা ইনজুরি ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর সময়টা কাজে লাগিয়েছি।”
এরপর একটু মজা করেই মুশফিক বলে বসেন বয়সটাতো আর কম হলনা!
তাইতো! সেই ২০০৫ সালে সতের পেরুনো যুবা মুশফিকুর রহিম জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলেন ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে।
এরপর প্রায় ১৪ বছর পেরুতে চললো। নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপের সামনে দাঁড়িয়ে ৩২ ছুঁতে যাওয়া পরিণত এক ক্রিকেটার।
‘ভালো-মন্দ মিলিয়ে কেটেছে, আর এটাই ক্রিকেট। তবে এবার আমি মনে করি এই ফরম্যাটে নকআউট পর্বে যাবার ভালো সম্ভাবনা আছে আমাদের।
আর নকআউট পর্বে গেলে যেকোন কিছুই হতে পারে। কে কি ভাবছে জানি-না তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক বড় চিন্তা করছি এই বিশ্বকাপ নিয়ে।’
শুধু মুশফিক নন, আপামর ক্রিকেট ভক্তরাও যে এবার বিশ্বকাপ ঘিরে বড় স্বপ্ন দেখছেন সেটা কিন্তু ঐ পাঁচজনের উপর বাজি ধরেই।
মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও রিয়াদ-অনেকেই আদর করে তাঁদের পঞ্চপান্ডব ডাকেন।
তা মহাভারতের চরিত্রের মতোই বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গেও জড়িয়ে আছেন তাঁরা।
পাঁচ জনই রয়েছেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে।
আর গত ক’বছরে জেতা ম্যাচগুলোর প্রতিটির সঙ্গে কোন না কোন ভাবে জড়িয়ে আছে এই ৫ জনের নাম।
মুশফিকুর রহিমের কথাই ধরা যাক।
ক্যারিয়ার গড় যেখানে ৩৪.৯৫ সেখানে গত দু’বছরে তার ব্যাটিং গড় ৫২.৬১।
এ সময়ে ৩৪ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরিতে ১৩৬৮ রান করেছেন।
আর কেন তিনি দলের ব্যাটিংয়ের মেরুদন্ড হয়ে উঠেছেন সেটা বোঝা যায় গত ২৪ মাসে রানচেজের সময় তার ব্যাটিং গড়ের দিকে তাকালে; ৬১.৪৪ নি:সন্দেহে ঈর্ষণীয়।
তবে মুশফিক অবশ্য দলগত পারফরম্যান্সেই বরাবর বিশ্বাসী।
‘এটা একটা ব্লেসিং যে আমরা ৪-৫ জন অনেক বছর ধরে একসাথে খেলছি।
তবে এসময়ে তরুণরাও কিন্তু অনেক ইমপ্রুভ করেছে। তারা যদি কন্ট্রিবিউট রাখতে পারে, তাহলে অন দ্য ডে আমরা যেকোন টিমকে হারাতে পারি।’
কিছু অতীত পিছু ছাড়ে না কখনোই। কিছু স্মৃতি যায় না ভোলা কিছুতেই।
হলোই বা টি-টোয়েন্টি, মুশফিক কি ভুলতে পারবেন ভারতের বিপক্ষে ২০১৬-এর বেঙ্গালুরু দু:খ? বরং তীরে এসে তরী ডোবার এই ভূত ফিরে এসেছে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময়।
এই ফিনিশিংয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই মুশফিক খানিকটা রক্ষণাত্মক।
‘আমি এখন মনে করি আগের চেয়ে অনেক বেশি ম্যাচিউরড। তাছাড়া এরপর কিন্তু শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আমি ম্যাচ শেষ করে এসেছি। আসলে এটা নিয়ে অনেক কাজ করেছি আমি।’
কিন্তু সবশেষ ত্রিদেশীয় সিরিজেও তো আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দারুণ খেলেও ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি?
আর তার ব্যাটিং অর্ডার যেহেতু পাঁচে থিতু হয়েছে, বিশ্বকাপেও তো এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। এবার আক্রমণাত্মক মুশি।
‘শেষ ৪-৫ বছর আমি যেভাবে খেলছি, বিশেষ করে শুধু রান করা নয়, স্ট্রাইক রোটেট করা, ভালো স্ট্রাইক রেটে খেলা, এসবে যথেষ্ট উন্নতি করেছি।
তবে উন্নতির তো শেষ নেই। আমি শুধু চাইবো বিশ্বকাপে ওরকম সিচুয়েশন আসে তাহলে আমিই যেন সেই ব্যক্তিটা হই যে কি-না ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত বের করে নিয়ে আসতে পারি।’
মুশফিকের জেদটা টের পাচ্ছেন তো?
ইংল্যান্ডেই জাতীয় দলে অভিষেক। সেখানে সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিটাও দারুণ কেটেছে।
৪ ম্যাচে ২ ফিফটিতে ১৬৩ রান। তারপরও আক্ষেপ মুশির কন্ঠে।
বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের (৫৪০ রান) পরই ২য় সর্বোচ্চ ৫১০ রান তাঁর।
পুরো ক্যারিয়ারে ৬টি শতক থাকলেও বিশ্বকাপের মঞ্চেই যে এখনো ছোঁয়া হয়ে উঠেনি তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার।
‘সেখানে আসলে টেস্টে খুব ভালো করতে পারিনি। তবে এবার ইচ্ছে আছে ভালো কিছু করার। আর ইংল্যান্ডে এটাই আমার শেষ বিশ্বকাপ। চাইবো বিশেষ কিছু করতে।’
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসালের (২০৯) রেকর্ডটা নিজের কাছে রাখা মুশফিক জানিয়েছেন ব্যাটসম্যান ও উইকেটকীপার দুই ভূমিকাতেই নিজেকে দেখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি।
একইসাথে জোর দিয়ে বললেন-‘এটাই রাইট সময় যে বাংলাদেশকে ভালো কিছু দিতে পারি।’