প্রায় সাত মাস আগে নতুন তিনটি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশে এই প্রথম কোনও বড় প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের আগে সম্পন্ন হয়েছে এবং ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। এটি বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকারের জন্য একটি মাইফলক ও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এটি সম্ভব হয়েছে দুটি কারণে— সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মনিটরিং এবং জাপানের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও তাদের কর্মদক্ষতায়।
নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস আগেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করেছে জাপানি জয়েন্টভেঞ্চার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সেতুটি যান চলাচলের জন্য এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি পেলে সেতুটি উদ্বোধনের পর এ মাসেই যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে শুরু হবে পুরনো মেঘনা সেতুর সংস্কারের কাজ। নতুন সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে এই মহাসড়কে এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে চার লেনবিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানবাহন এসে মেঘনা সেতুতে উঠছে এক লেনে। এ কারণে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের সময়, এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও মেঘনা সেতুর পশ্চিমপাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। তবে আশা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় মেঘনা সেতু চালু হলে যানজটের ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবেন এ পথে চলাচলকারী চালক ও যাত্রীরা। স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারবেন তারা। চালক ও যাত্রীদের দাবি, ঈদের আগেই যেন খুলে দেওয়া হয় চার লেনবিশিষ্ট এই নতুন সেতুটি।
জানা গেছে, চার লেনবিশিষ্ট দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৩০ মিটার। ১১টি পিয়ার ও দুটি অ্যাপার্টমেন্ট জয়েন্টের ওপরে নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৮শ’ কোটি টাকা। পুরনো মেঘনা সেতু সংস্কারে ব্যয় হবে আরও ৪০০ কোটি টাকা। মোট ব্যয় হবে ২২শ’ কোটি টাকা। সেতুর ঢাকা প্রান্তে প্রায় এক কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম প্রান্তে এক কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং পশ্চিম পাশে সেতুর নিচ দিয়ে ৫০৭ মিটার দৈর্ঘ্যের সার্ভিস রোড নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় কাচঁপুর, দ্বিতীয় মেঘনা এবং দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণ এবং পুরনো তিনটি সেতুর সংস্কারসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়েছিল প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার।
জাপানের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি এসপি ফাউন্ডেশন ও স্টিল কনক্রিট কম্পোজিটের ওপর এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ ব্যবহারের কারণে নির্ধারিত সময়ের প্রায় চার-পাঁচ মাস আগে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। এতে একদিকে যেমন সরকারের টাকা সাশ্রয় হয়েছে, অন্যদিকে সেতুটি খুলে দেওয়া হলে যাত্রী ও চালকদের যানজটের ভোগান্তি লাঘব হবে।’
পুরনো মেঘনা সেতুতে প্রায় ১০ থেকে ১২টি এক্সপেনশন জয়েন্ট রয়েছে। কিন্তু ৯৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতীয় মেঘনা সেতুতে মাত্র একটি জয়েন্ট এক্সপেনশন। যে কারণে এই সেতুতে যানবাহন চলাচলে কোনও বিঘ্ন সৃষ্টি হবে না। বিমানবন্দরের রানওয়ের মতো খুব দ্রুতগতিতে সেতুতে যানবাহন চলাচল করবে। এছাড়া, দ্বিতীয় মেঘনা সেতু চার লেনের এবং পুরনো সেতুটি দুই লেনের। অর্থাৎ দুটি সেতুতে মোট লেন আছে ছয়টি। চার লেনের সড়ক দিয়ে যানবাহন এসে দুটি সেতুতে ছয় লেনে চলাচল করতে পারবে। ফলে আগের মতো সেতুর কারণে আর যানজট হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই।