Site icon দ্বিপ্রহর ডট কম

জাপানের আত্মহত্যা- আশির আহমেদ

জাপানের আত্মহত্যা

আত্মহত্যা নিয়ে এমন মজা করে মানুষ কথা বলতে পারে ?

জাপানে বছরে ৩৩০০০ লোক আত্মহত্যা করে। দিনে গড়ে ৯০ জন। এর মধ্যে আবার ২০-৪৪ বছরের লোক সংখ্যা বেশী [১] । বুঝতেই পারছেন, কত বড় এক সামাজিক সমস্যা।

২০০৫ সালের কথা। তখন আমি টোকিও তে একটা করপোরেটে কাজ করি। কর্মী সংখ্যা ২৪০০০ এর উপরে। আমাদেরকে একটা মানসিক ট্রেনিং দেয়া হলো- লক্ষ্য হলো আত্মহত্যা প্রতিরোধ নিয়ে আমাদের সচেতন করা। বছরে এ কিসিমের ট্রেনিং অনেক হয়। লোকজনের মনোযোগ কম। তবে মজার ট্রেনিং ও আছে। যেমন ধরেন- হাউ টু ওয়ার্ক উইথ ডিফিকাল্ট পিপল। হাউ টু কনভিন্স য়োর ইল্লোজিক্যাল বস। ইত্যাদি।

যাই হোক, আত্মহত্যার ট্রেনিংএর শুরুতে উনি একটু ভূমিকা দিলেন। বল্লেন- আত্মহত্যা আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার/অধিকার। আজকের বক্তৃতার উদ্দেশ্য আপনার আত্মহত্যাকে বাধা দেয়া না। তবে কোথায় কম খরচে কিভাবে আত্মহত্যা করা যায় – তার কিছু টিপস দেবো।

এই ভূমিকার পর কেউ কি আর অমনোযোগী থাকতে পারে? পুরো ট্রেনিং রুম ওনার দখলে চলে এলো। 
প্রথমেই কিছু পরিসংখ্যান দিলেন – 


১। টোকিওতে যারা আত্মহত্যা করেন তার অধিকাংশই “চলন্ত ট্রেনের নীচে ঝাপিয়ে পড়া” কে পছন্দ করেন। পছন্দের মূল কারন হলো অল্প সময়ে নিশ্চিত মৃত্যু। এই পরিসংখ্যান উনি কিভাবে পেলেন জানিনা, আত্মহত্যার পর নিশ্চয়ই কোন মৃত ব্যাক্তি ফেসবুকে লাইক দিতে আসেন না। 


২। সময় হিসেবে বেছে নেন সোমবার সকাল ৮ টা থেকে ১০ টা। এটা বেছে নেয়ার একটা যুক্তি আছে। ট্রেনে আত্মহত্যাকারীরা নাকি অনেক লম্বা সময় ধরে প্ল্যান করেননা। সোমবার সাধারনত সাপ্তাহিক মিটিং থাকে। সাপ্তাহিক পারফরমেন্স ভাল না থাকলে বস কে কি অজুহাত দেবেন এ চিন্তা করতে করতে বাসা থেকে বের হন। কিন্তু উপায় খুঁজে পান না। আত্মসম্মান রক্ষা করা পবিত্র মনে করেন। অফিসে যাবার পথে সুবিধা মত একটা ট্রেন বেছে নেন। ঠুস। 

যিনি মরেন উনিতো মরে বেঁচে যান। সমস্যায় পড়েন উনি যে কোম্পানীতে চাকরি করেন, সেই কোম্পানী আর ওনার পরিবার। প্রথম ধাক্কাটা অর্থনৈতিক।

টোকিওতে য়ামানোতে লাইনে রাশ আওয়ারে প্রতি আড়াই মিনিটে একটা করে ট্রেন আসে। দিনে সাড়ে তিন মিলিয়ন লোক চলাচল করে [২]। আত্মহত্যার কারনে ট্রেনটি যদি ১০ মিনিট বন্ধ থাকে (শুনেছি এখন এক্সপার্ট রা আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ৫ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে লাশ ক্লিন করে ট্রেন চলাচল শুরু করাতে পারেন), তাহলে অর্থনৈতিক ক্ষতি ১০ কোটি টাকার উপরে চলে যায়। ট্রেন কর্তৃপক্ষ এই বিলখানা উকিলের মাধ্যমে তাঁর কোম্পানী অথবা পরিবার কে পাঠিয়ে দেন। ১০ কোটি টাকা চাট্টি খানি কথা নয়। কোন কোন পরিবারে চেইন অব সুইসাইড শুরু হয়ে যায়।

ট্রেইনার বল্লেন- কম খরচে আত্মহত্যার জায়গা আছে। যেমন সাইতামা অঞ্চলের ট্রেন গুলো। ইন্টার এরাইভাল সময় বেশি, যাত্রী সংখ্যা ও কম। যদি শনিবার, রোববার কে সিলেক্ট করেন তাহলে খরচ কমপক্ষে ১০ গুন কমিয়ে আনতে পারবেন। এতে আপনার কোম্পানীর খরচ কমবে।

P= N*p/T


P হল পেনাল্টি, N ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা, pজনপ্রতি পেনাল্টি আর  T হলো ট্রেনের ইন্টার-এরাইভ্যাল টাইম।

মনে রাখবেন আত্মহত্যা আপনার একান্তই ব্যাক্তিগত অধিকার। তবে অন্যের ভোগান্তি একটু কমিয়ে গেলে ভাল হয়না?

এই বক্তৃতার ইফেক্ট কি-না জানিনা। তারপর ঐ অফিসে কোন আত্নহত্যার খবর শুনিনি।

——————–
তথ্যসূত্র

[১] জাপানের আত্মহত্যারপরিসংখ্যান  http://en.wikipedia.org/wiki/Suicide_in_Japan

Exit mobile version