বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩৬১ কোটি ৩৩ লাখ মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৬৮ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বলছে, এটাই বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ।
অবশ্য একটা চিত্র সুখকর নয়। ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আট বছরে বিদেশি ও যৌথ বিনিয়োগ নিবন্ধন চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ সময়ে প্রকল্পের সংখ্যা ২৩ শতাংশ ও বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৮৯ শতাংশ বেড়েছে। তবে কর্মসংস্থানের প্রস্তাব কমেছে ১৭ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন প্রযুক্তির কারণে বিনিয়োগের বিপরীতে কর্মসংস্থান ততটা হচ্ছে না। যেসব কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, সেখানে যোগ্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষার সঙ্গে বাজারের চাহিদার মিল নেই।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, উদ্যোক্তারা ভালো মানের পণ্য কম খরচে তৈরি করতে চায়। এ জন্য তারা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। বাজারে প্রচুর কর্মসংস্থান আছে। সেখানে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য দক্ষ লোক পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্র চাইলে এক বছরের মধ্যে করে ফেলা যায়। ভাড়ায়ও আনা যায়। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীকে এসএসসি পাস করাতেই ১০ বছর লাগে। আমাদের এখন দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সর্বাধিক জোর দিতে হবে।’
বিনিয়োগ রেকর্ড
২০১৭ সালে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল প্রায় ২১৫ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ কম। এ বছর বিদেশি বিনিয়োগ এক লাফে ১৪৬ কোটি ডলার বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে এই প্রথম বাংলাদেশ এক বছরে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি বিদেশি বিনিয়োগ পেল।
এত দিন বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কম ছিল। সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) ২০১৮ সালের বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মিয়ানমার ৪৩০ কোটি, ইথিওপিয়া ৩৬০ কোটি ও কম্বোডিয়া ২৮০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছিল। বাংলাদেশে এসেছিল ২১৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগ।
বিনিয়োগ কেন বাড়ল, জানতে চাইলে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ও এ দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে এত দিন বিনিয়োগকারীদের ধারণা ছিল না। এখন সেটা নানাভাবে বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ দেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো খুব ভালো ব্যবসা করছে, উচ্চ হারে লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। জাপানের বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা জেট্রোর প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মুনাফার সম্ভাবনা সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করা হচ্ছে। ব্যবসা সহজ করতে বিডা কাজ করছে, যা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়িয়েছে।
জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল গত বছর প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা দিয়ে আকিজ গ্রুপের তামাক ব্যবসা অধিগ্রহণ করেছে। সে অর্থ এখনো আসেনি উল্লেখ করে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৮ সালে আসা বিনিয়োগগুলো ২০১৬ ও ২০১৭ সালের দিকে নিবন্ধিত। গত দুই বছরে দেশে প্রচুর বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে প্রকৃত বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
মূলধন বিনিয়োগ দ্বিগুণ
বিদেশি বিনিয়োগের অর্থের ধরন তিনটি। এর মধ্যে একটি অংশ আসে মূলধন হিসেবে। একটি অংশ দেশে কর্মরত কোম্পানির আয়ের পুনর্বিনিয়োগ। তৃতীয় ধরনটি হলো আন্তকোম্পানি ঋণ, যার মানে হলো বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কোম্পানি তার মূল কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়ে যে বিনিয়োগ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মোট আসা ৩৬১ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের মধ্যে ১১২ কোটি ৪১ লাখ ডলার মূলধন, ১৩১ কোটি ডলার মুনাফার পুনর্বিনিয়োগ ও ১১৮ কোটি ডলার আন্তকোম্পানি ঋণ। ২০১৭ সালের তুলনায় গত বছর মূলধন বিনিয়োগ বেড়েছে ১০৯ শতাংশ। আন্তকোম্পানি ঋণ বেড়েছে ২৫৪ শতাংশ। তবে মুনাফার পুনর্বিনিয়োগ খুব বেশি বাড়েনি। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের কিছু বেশি।
বেসরকারি সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রবণতা ইতিবাচক। তবে এটা উৎপাদনশীল খাতে আসছে কি না, কর্মসংস্থান বাড়ছে কি না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ৮০০-৯০০ কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে। সে তুলনায় বিনিয়োগ এখনো কম।