বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। গত সেপ্টেম্বর থেকে এই শ্রমবাজারটি স্থগিত রয়েছে। জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে বড় পরিসরে কর্মী যাওয়ার মাঝখানে সিন্ডিকেশনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বাজারটি স্থগিত ঘোষণা করে মালয়েশিয়া সরকার। মাঝখানে উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দুটি বৈঠক হলেও দীর্ঘ ৮ মাসেও স্থগিত এই বাজারটি খোলেনি। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারটি দ্রুত খুলতে বেশ কিছুদিন ধরেই তৎপর সরকার। শনিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০০৯ সালের পর বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। ২০১৩ সালের পর জিটুজি (সরকার টু সরকার)পদ্ধতিতে স্বল্প পরিসরে দেশটিতে কর্মী যাওয়া শুরু করে। এই পদ্ধতি ফ্লপ করায় সরকারে সাথে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে উভয় দেশের মধ্যে ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তি সই হয়।
২০১৭ সালের মার্চ থেকে এই পদ্ধতিতে কর্মী যাওয়া শুরু করে। গতি আসে শ্রমিক রপ্তানিতে। প্রায় দেড় বছরে দুই লাখের বেশি কর্মী যায় মালয়েশিয়ায়। তবে বিগত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কর্মীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেয়া ও ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ সামনে আসে। মালয়েশিয়ান কোম্পানি সিনারফ্লাক্সের অনলাইন সিস্টেম এসপিপিএ সিস্টেম বাতিল করে ‘আপাতত’কর্মী নেয়া বন্ধ ঘোষণা করে মাহাথির মোহাম্মদের সরকার। খুব দ্রুত উভয় সরকার বসে নতুন সিস্টেমে কর্মী নেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও দীর্ঘ ৮ মাসেও সুরাহা হয়নি। বাজারটি খুলতে ইতোমধ্যে ঢাকা ও কুয়ালালামপুরে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হয়েছে। কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সাথে বৈঠক করেছেন। সেখানেও আলোচনায় আসে শ্রমবাজারের বিষয়টি।
বাজারটি ফের খুলতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। প্রতিনিধি দলে অন্যরা হলেন-জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সেলিম রেজা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন ও উপ সচিব মোহাম্মদ আবুল হোসাইন। তবে, অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনকে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি।
জনশক্তি রফতানির দ্বার উন্মোচনের লক্ষ্যে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার জন্য প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ প্রতিনিধি দল শনিবার মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই প্রতিনিধি দল আগামী ১৬ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় অবস্থান করবেন। এ সফরকালে প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল পুত্রাজয়ায় মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারান’র সাথে জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা হবে।
এদিকে গত মার্চ মাসের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমদ সিদ্দিকি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদের সাথে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে শ্রমবাজারের বিষয়টিও উঠে আসে। মাহাথির মোহাম্মদকে বাংলাদেশে সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তাতে সম্মতি প্রদান করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ের দিকে বাংলাদেশ সফর করবেন। তার সফর নিয়ে ঢাকা-কুয়ালালামপুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, চলতি মাসে ওআইসি’র (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) একটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মাহাথিরের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকের পর তার বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। জানা গেছে, মাহাথিরের বাংলাদেশ সফরে ঢাকার পক্ষ থেকে চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে। এগুলো হচ্ছে, শ্রমবাজার, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও রোহিঙ্গা ইস্যু। এছাড়া বাংলাদেশ সফরের সময় কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন মাহাথির মোহাম্মদ।
মাহাথিরের সফরের ঠিক আগে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের মালয়েশিয়া সফর গুরুত্ব বহন করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭৬ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত মোট ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৬ বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ার গেছেন। যা বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক শ্রম বাজারের ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অন্যদিকে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৩ কোটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ মুদ্রার রেমিটেন্স মালয়েশিয়া থেকে পাওয়া গেছে।