প্রবীর বিকাশ সরকার: বিংশ শতাব্দীতে যে ক’জন বড়মাপের ন্যাশনালিস্ট সারা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছিলেন তাঁদের অন্যতম ছিলেন বিপ্লবী মহানায়ক রাসবিহারী বসু (১৮৮৬-১৯৪৫)। তিনি শুধু দুর্ধর্ষ বিপ্লবীই ছিলেন না, একজন কোমলচিত্ত রোমান্টিক বাঙালিও ছিলেন। না, তাতেও তাঁর বহুত্বকে জানা যায় না। বলা ভালো, বহুমুখী বিপ্লবী ছিলেন তিনি। রাজনীতিক, যোদ্ধা, সাহিত্যিক, শিক্ষক, অনুবাদক, সম্পাদক, প্রেমিক, বন্ধু, কূটনীতিক, সংস্কৃতিসেবী, ধার্মিক,
রন্ধনশিল্পী এবং সন্তানবৎসল পিতা।
জাপানের প্রবাসজীবনে তাঁর বহুমুখী প্রতিভা ও মননের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছিল। তিনি জাপানে না এলে যে ভারতবর্ষ কবে স্বাধীনতা অর্জন করত বলা কঠিন! কী অমানুষিক পরিশ্রম এবং ক্রমাগত স্বদেশি-বিদেশি শত্রু, প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে লড়াই করে গেছেন তা বিভিন্ন গ্রন্থাদি, পত্রিকা ও দলিলপত্র না পাঠ করলে জানা যাবে না, বোঝাও যাবে না।
এই যে আজকে এই প্রজন্মের বাঙালি আমরা জাপানে এসে সংস্কৃতি-সাহিত্যচর্চা করছি, সংগঠন করছি, রাজনীতি করছি, ব্যবসা করছি, পত্রপত্রিকা প্রকাশ করছি, বই লিখছি, আন্দোলন করছি, সমাবেশ করছি, বিয়েসাদি করছি—-এই সবকিছুরই পথিকৃৎ হচ্ছেন বিপ্লবী রাসবিহারী বসু। বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ থেকে মধ্যভাগ পর্যন্ত এই বীর বাঙালি—রক্ষণশীল, নীতিবাগিশ, আইনানুগ, কট্টর জাতীয়তাবাদী জাপানে নির্ভয়ে প্রবল দাপটের সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করেছেন। তাঁর প্রচলিত ‘ইনদো কারি’ তথা ‘কারেএরাইস’ ৯২ বছর ধরে লোকপ্রিয়তা ধরে রেখেছে টোকিওর শিনজুকু শহরস্থ সুবিখ্যাত “নাকামুরায়া” ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
এরকম বর্ণাঢ্যজীবন যাঁর তাঁকে নিয়ে বারংবার লিখেও সাধ মেটে না। নতুন নতুন তথ্য সংযোগে লেখাটাই আমার নেশা। বহূল প্রচারিত দৈনিক জনকণ্ঠের ঈদ সংখ্যায় তাঁকে নিয়ে লিখিত আমার বড় প্রবন্ধ। প্রায় সবই অজানা তথ্যের এক মহাভারত।