পেনাল্টি শুটআউটে প্যারাগুয়েকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিল।
সবকিছু ‘চিত্রনাট্য’ অনুযায়ীই এগোচ্ছিল প্যারাগুয়ের জন্য। ২০১১ ও ২০১৫ সালের কোপা আমেরিকার মতো এবারও কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে পেয়েছিল তারা। সে দুবার পেনাল্টি শুটআউটের ভাগ্যে চড়ে ব্রাজিলকে কাঁদিয়েছিল প্যারাগুয়ে। এবারও কোয়ার্টার ফাইনালে সেই ব্রাজিলকে পেয়েছিল তারা। নব্বই মিনিট দাঁতে দাঁত চেপে ব্রাজিলের মুহুর্মুহু আক্রমণ সামলে পেনাল্টি শুটআউট পর্যন্ত পৌঁছেও গিয়েছিল তারা। কিন্তু এবার আর পেনাল্টি শুটআউট জেতা হলো না। অ্যালিসন বেকার ছিলেন যে!
লিভারপুলে খেলা এই ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক কিছুদিন আগেই জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ। বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হিসেবে তাঁর নাম এখন বেশ ভালোভাবেই আসে। কেন আসে, সেটা এবার ব্রাজিল ভক্তদের ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলেন তিনি। পেনাল্টি শুটআউটে প্যারাগুয়ের একটা শট আটকে না দিলে ব্রাজিলের যে আজ সেমিফাইনালে যাওয়া হয় না! নব্বই মিনিট গোলশূন্য থাকার পর পেনাল্টি শুটআউটে প্যারাগুয়েকে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে কোপা আমেরিকার সেমিতে উঠেছে ব্রাজিল।
ম্যাচের শুরুতেই একটা দুঃসংবাদ মাথায় নিয়ে খেলতে নামে ব্রাজিল। গোটা টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলা এভারটনের উইঙ্গার রিচার্লিসন মাম্পসে আক্রান্ত হয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যান। শোনা যাচ্ছে, বাকি কোপা আমেরিকাতেও আর খেলা হবে না তাঁর। ওদিকে নিষেধাজ্ঞার খাঁড়ায় পড়ে কাসেমিরো নেই, চোটের বলি হয়েছেন ফার্নান্দিনহো। এই অবস্থায় প্যারাগুয়ের বিপক্ষে খেলতে নামে ব্রাজিল। স্প্যানিশ লিগের খেলা যারা নিয়মিত দেখে থাকেন তাঁরা প্যারাগুয়ের বর্তমান কোচ এদুয়ার্দো বেরিজ্জোকে চিনে থাকবেন। সেল্টা ভিগো, সেভিয়া ও অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের মতো ক্লাবকে কোচিং করানো এই ম্যানেজার আক্রমণাত্মক ম্যানেজার হিসেবেই সুবিদিত। কিন্তু এ ম্যাচে ব্রাজিলকে আটকানোর জন্য শরীরনির্ভর খেলা বেছে নিলেন তিনি। প্রথম থেকেই মোটামুটি মেরে-ধরে খেলা শুরু করে প্যারাগুয়ে। প্রথমার্ধে তিনটি হলুদ কার্ড দেখে ফেলা যার প্রমাণ। দ্বিতীয়ার্ধের তেরো মিনিটের মাথায় লিভারপুলের ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনোকে অনৈতিকভাবে আটকাতে গিয়ে লাল কার্ড দেখে বসেন ওয়েস্ট হামে খেলা ডিফেন্ডার ফাবিয়ান বালবুয়েনা। এ কারণে রেফারি প্রথমে পেনাল্টি দিলেও পরে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফ্রি-কিক দেন ব্রাজিলকে। শেষ ৩৩ মিনিট দশজন নিয়েই খেলতে হয় প্যারাগুয়েকে। একজন বেশি নিয়েও প্যারাগুয়ের রক্ষণভাগ টলাতে পারেননি জেসুস-ফিরমিনো-উইলিয়ানরা। ফলে পেনাল্টিতে গড়ায় খেলা।
প্যারাগুয়ের প্রথম শটটাই আটকে দেন গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। পরে একে একে ব্রাজিলের হয়ে গোল করেন উইলিয়ান, মার্কিনহোস ও ফিলিপ কুতিনহো। ওদিকে প্যারাগুয়ের হয়ে গোল করেন মিগুয়েল আলমিরন, ব্রুনো ভালদেজ ও রদ্রিগো রোহাস। ব্রাজিলের হয়ে ফিরমিনো পেনাল্টি মিস করলে ২০১১ ও ২০১৫ সালের দুঃসহ স্মৃতি ক্ষণিকের জন্য ফিরে আসে ব্রাজিল সমর্থকদের মনে। কিন্তু ঠিক পরমুহূর্তেই স্ট্রাইকার দার্লিস গঞ্জালেস পেনাল্টি মিস করে প্যারাগুয়েকে পিছিয়ে দেন। শেষ পেনাল্টিতে ব্রাজিলের হয়ে গোল করতে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের কোনো সমস্যা হয়নি।
আজ দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও ভেনেজুয়েলা। এই ম্যাচে যারা জিতবে, সেমিতে তারা খেলবে ব্রাজিলের বিপক্ষে।