পাকিস্তানকে ৮৯ রানে হারাল ভারত। ৪০ ওভারে ৩০২ রানের লক্ষ্য পেয়ে ২১২ রানে থেমেছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপে এ নিয়ে ভারতের কাছে টানা সাত ম্যাচ হারল পাকিস্তান।
হরভজন সিংয়ের কথাই তাহলে শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো! সপ্তাহ দু-এক আগে সাবেক ভারতীয় অফ স্পিনার বলেছিলেন, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মিডিয়ার জন্য বড় ম্যাচ হতে পারে। কিন্তু ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি এখন আর উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ নয়। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা হরভজনের কথাকেই পদে পদে সত্যি প্রমাণ করলেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচেও ৮৯ রানে হেরেছে পাকিস্তান।
৩৫ ওভার শেষে বৃষ্টি নেমেছিল। পাকিস্তানের রান তখন ৬ উইকেটে ১৬৬। ১৫ ওভারে ১৭১ রানের লক্ষ্যটা এমনিতেই প্রায় অসম্ভব ঠেকছিল। বৃষ্টির পর সেই ‘প্রায়’ শব্দটাও উবে গেল। নতুন লক্ষ্য ৪০ ওভারে ৩০২ অর্থাৎ ৫ ওভারে ১৩৬ রান। সে লক্ষ্য ৪ উইকেট কেন, ১০ উইকেট হাতে নিয়েও জেতা সম্ভব না। পাকিস্তান ৪৬ রান তুলে শেষ ৫ ওভারের অর্থহীন অধ্যায় শেষ করেছে।
পুরো ম্যাচে পাকিস্তান একবারের জন্যও মনে করাতে পারেনি, এ ম্যাচে তারা জিততে পারে। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই পরিষ্কার ব্যবধানে পর্যুদস্ত হয়ে পাকিস্তান যেন আরও একবার বুঝিয়ে দিল, বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয়ের মন্ত্র জানে না তারা। এই নিয়ে বিশ্বকাপে সাত ম্যাচের প্রতিটিতেই ভারতের কাছে হারের লজ্জা পেতে হলো পাকিস্তানকে।
৩৩৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে হলে যেরকম শুরু দরকার, সেটি দিতে পারেননি দুই পাকিস্তানি ওপেনার ফখর জামান ও ইমাম-উল হক। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম বলেই ইমামকে ফিরিয়েছেন বিজয় শংকর। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে বাবর আজমের সঙ্গে মিলে ফখর ১০৪ রানের জুটি গড়েছেন বটে, তবে যে গতিতে রান তুলছিলেন, ভারতকে চিন্তায় ফেলার জন্য তা একদমই যথেষ্ট ছিল না।
উইকেট হাতে রেখে দেখেশুনে খেলার পরিকল্পনা পুরোপুরি মার খেয়েছে ২১ থেকে ৩০—এই ১০ ওভারে। পাকিস্তানের পুরো মিডল অর্ডারকেই ভারতীয় বোলাররা ফেরত পাঠিয়েছেন এই সময়ের মধ্যে। পাকিস্তানের এ ব্যাটিং লাইনআপে টেকনিকের দিক থেকে সেরা ব্যাটসম্যান মানা হয় যাঁকে, সেই বাবর আজম ৪৮ রানে ফিরেছেন কুলদীপ যাদবের অসাধারণ এক বলে। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে যেভাবে বল মিডল স্টাম্পে আঘাত করেছে, বাবরের সাধ্য ছিল না সেটি মোকাবিলা করার।
ফর্মের সঙ্গে লড়তে থাকা কুলদীপ ঠিক পরের ওভারেই তুলে নিয়েছেন ফখর জামানকে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিপক্ষেই সেঞ্চুরি করা ফখর ৬২ রান করে আজও দলের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক, কিন্তু পাকিস্তানকে জয় এনে দিতে এটি যথেষ্ট ছিল না মোটেও।
পাকিস্তান আরও বড় ধাক্কা খেয়েছে ২৭তম ওভারে। বিপর্যয়ের মধ্যে দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিককে বড্ড বেশি দরকার ছিল পাকিস্তানের। দুজনকেই পরপর দুই বলে তুলে নিয়ে ম্যাচ ওখানেই একপ্রকার শেষ করে দিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। ওখান থেকে ম্যাচে ফিরে আসাটা অসম্ভবই ছিল ৯২ এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
ইমাদ ওয়াসিমকে নিয়ে মেরুদণ্ড–ভাঙা পাকিস্তানকে টানার শেষ চেষ্টা করছিলেন অধিনায়ক সরফরাজ। কিন্তু আজ দিনটাই বোধ হয় তাঁর ছিল না। টসে জিতেও আগে ব্যাটিং না করে পূর্বসূরিদের কড়া সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। ব্যাট হাতেও খেলেছেন চোখের জন্য বেদনাদায়ক এক ইনিংস। ৩০ বল খরচায় মাত্র ১২ রান করে সরফরাজের বিদায়ের পাঁচ বল পরেই বৃষ্টি এসে থামিয়েছে খেলা। অবশ্য ততক্ষণে ম্যাচের ফল নিয়ে সংশয় ছিল না কারও মনেই। জেতার মতো খেললে তবে না জয়ের আশা করবে পাকিস্তান!