1. mdabirhossain.6894@gmail.com : Abir Hossain : Abir Hossain
  2. info@diprohor.com : admin :
  3. bappi.kusht@gmail.com : Bappi Hossain : Bappi Hossain
  4. biplob.ice@gmail.com : Md Biplob Hossain : Md Biplob Hossain
  5. mahedi988.bd@gmail.com : Mahedi Hasan : Mahedi Hasan
  6. mamunjp007@gmail.com : mamunjp007 :
  7. media.mrp24@gmail.com : এস এইচ এম মামুন : এস এইচ এম মামুন
  8. rakib.jnu.s6@gmail.com : Rakibul Islam : Rakibul Islam
  9. mdraselali95@gmail.com : Rasel Ali : Rasel Ali
  10. rockyrisul@gmail.com : Rocky Risul : Rocky Risul
  11. rouf4711@gmail.com : আব্দুর রউফ : আব্দুর রউফ
  12. sohan.acct@gmail.com : Sohanur Rahman : Sohanur Rahman
মেয়েটিকে ঠেকাতে পারেনি কোনো অস্ত্র | দ্বিপ্রহর ডট কম
বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:১৬ অপরাহ্ন

মেয়েটিকে ঠেকাতে পারেনি কোনো অস্ত্র

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম: বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০১৯
  • ৭৫১ বার পঠিত
মেয়েটিকে ঠেকাতে পারেনি কোনো অস্ত্র

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করতে মুখিয়ে ছিল এক দল সশস্ত্র ব্যক্তি। মেয়েরা যেন স্কুলে ঢুকতে না পারে, এ জন্য অস্ত্র হাতে স্কুল ঘিরে রাখত তারা। সেই অস্ত্রের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছেন পাকিস্তানের নাঈমা জেহরি। সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সেই নারীর সংগ্রামমুখর জীবনের গল্প উঠে এসেছে বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে।

নাঈমা জেহরি এখন পাকিস্তানের কোয়েটা শহরের সরদার বাহাদুর খান নারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘আমার শৈশব কেটেছে ভয়ে ভয়ে। এখনো সেসব দিনের কথা মনে পড়লে শিরদাঁড়ায় ভয়ের হিমস্রোত বয়ে যায়।’

পাকিস্তানের অস্থিতিশীল প্রদেশ বেলুচিস্তানে খুজদার জেলার আদিবাসী গ্রাম জেহরি জামশারে বেড়ে ওঠেন নাঈমা। তাঁর ভাষ্যমতে, সে সময় অনাচার চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছিল। বালুচ পুরুষদের অপহরণ ও হত্যার খবরে ভরে থাকত পত্রিকা। শঙ্কা, কুসংস্কার আর অস্ত্রে ভরপুর সে জীবনে প্রতিটি নিশ্বাসের সঙ্গে মিশে থাকত বেঁচে থাকার আকুতি।

পাকিস্তানের দরিদ্রতম প্রদেশ বেলুচিস্তান। বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের সাক্ষী প্রদেশটি। প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামগুলোয় টিকে থাকাই দায়। তবে অন্যদের চেয়ে নারীদের দুর্দশা মাত্রাতিরিক্ত ছিল বলে জানান নাঈমা। তিনি বলেন, ‘আমার শৈশবের পুরোটা জুড়েই ছিল দারিদ্র্য। আমরা সাত ভাইবোন। বাবা আমাদের ফেলে আরেকজনকে বিয়ে করেন। আমার মা পড়ালেখা জানতেন না। কাজেই অন্যের দয়ার ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হতো। শিক্ষা তখন এতটাই বিলাসবহুল ছিল যে তা বহন করার সামর্থ্য আমাদের ছিল না।’

বেলুচিস্তানে মেয়েদের পড়ালেখা করতে হয় যুদ্ধ করে। ছবি: বিবিসি।
বেলুচিস্তানে মেয়েদের পড়ালেখা করতে হয় যুদ্ধ করে। ছবি: বিবিসি।

নাঈমার জীবনে শিক্ষা ছিল যুদ্ধের শামিল। সরকারি এক বিনা মূল্যের প্রাথমিক স্কুলে পড়ালেখায় হাতেখড়ি হয় তাঁর, ১০ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানেই পড়েন তিনি। এরপর বন্ধ হয়ে যায় স্কুলটি। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত স্কুলটি সন্ত্রাসীদের কবজায় ছিল। স্থানীয় গোত্রপ্রধানের মদদপুষ্ট অপরাধীরা স্কুলের সামনে বেড়া তুলে মেয়েদের প্রবেশ নিষেধের ব্যবস্থা করেছিল। বেলুচিস্তানে সে সময় এ ধরনের ঘটনা বিরল নয়।

নাঈমা বলেন, ‘সারাক্ষণ স্কুলের গেট আটকে দাঁড়িয়ে থাকত ছয় থেকে আটজন সশস্ত্র প্রহরী। ছোটবেলায় ওই গেট পার হয়ে যাওয়ার কথা এখনো মনে আছে। লোকগুলোকে দেখলেই গা শিউরে উঠত। সব সময় মনে হতো, এই বুঝি ওরা গুলি ছুড়ল। সালোয়ার–কামিজ পরা লোকগুলোর মুখ ঢাকা থাকত মাফলারে, কেবল চোখ দুটোই দেখা যেত তাদের।’

মেয়েদের স্কুলে যেতে দিয়ো না
সশস্ত্র লোকগুলো কখনো স্কুলের ভেতরে ঢুকত না, মেয়েদের হুমকি দিত না। নাঈমা বলেন, ওই বেড়াগুলো দুটি কাজ করত। মেয়েদের পড়ালেখা থেকে দূরে সরিয়ে রাখত। আর গোত্রপ্রধানের সশস্ত্র লোকজন গা ঢাকা দেওয়ার জন্য স্কুল ক্যাম্পাসটি অবাধে ব্যবহার করতে পারত। মুখ ফুটে না বলেও বুঝিয়ে দিত, মেয়েদের স্কুলে যেতে দিয়ো না।

এই এক বেড়ার কত যে প্রভাব ছিল গ্রামটিতে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সরকারি শিক্ষকেরা এমন পরিস্থিতিতে পড়াতে আসার সাহস পেতেন না। নাঈমাসহ আরও কয়েকজন মেয়েকে পাশের গ্রামের একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়। কিন্তু এটি ছিল কেবলই আনুষ্ঠানিকতা। মেয়েদের স্কুলে পাঠালে বিনা মূল্যে রান্নার তেল পাওয়া যাবে, এটিই ছিল মেয়েদের স্কুলে ভর্তির প্রধান কারণ। আন্তর্জাতিক দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ওই এলাকার মেয়েদের শিক্ষায় সম্পৃক্ত করতে বিনা মূল্যে খাদ্যদ্রব্য বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছিল। মেয়ের মা–বাবারাও এই সুযোগ নিতে মেয়েদের নিয়মিত স্কুল পাঠাতেন। মেয়েরা হাজিরা খাতায় নাম লিখিয়েই বাড়ি চলে আসত।

সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন নাঈমা। ছবি: বিবিসি।
সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন নাঈমা। ছবি: বিবিসি

নাঈমা বলেন, শিক্ষকেরাও ভয়ে থাকতেন। তাঁদের মধ্যেও দুর্নীতি ঢুকে যাওয়ায় কেউ কিছু বলতেন না। বেলুচিস্তানে কেবল কাগজে-কলমে অস্তিত্ব নিয়ে টিকে ছিল অনেক স্কুল। স্কুলগুলোয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হতো, তাঁরা নিয়মিত বেতনও পেতেন। তবে আক্ষরিক অর্থে সেখানে কোনো পড়ালেখা হতো না। স্কুলগুলো ছিল অকেজো।

এর মধ্যে বেলুচিস্তানে আনুষঙ্গিক সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এক বছরের মধ্যে নাঈমার আপন দুই মামাকে অপহরণের পর খুন করা হয়। একদম হুট করেই গায়েব হয়ে যান দুজন। কয়েক মাস পরে গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নাঈমার পরিবার একদম ভেঙে পড়ে। তাজা দুটি প্রাণ ঝরে যাওয়ার দুর্বিষহ স্মৃতি ভুলতে অনেক সময় লেগে যায় তাঁদের।

তবে এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে নতুন করে উদ্যমী হন নাঈমা। মাধ্যমিক পর্যায় শেষ করে পড়াশোনায় বিরতি দিতে বাধ্য হন তিনি। তবে এর কারণে নিজের শিক্ষায় বিঘ্ন ঘটতে দেননি। তাঁর পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য ছিল না। গ্রামবাসীর চাপে পড়ে মেয়েদের সুশিক্ষিত করতে এগিয়ে আসার সাহসও তাঁরা পাননি। মেয়েদের পড়ালেখা বলতে মাদ্রাসায় যাওয়ার চল ছিল তখন।

নাঈমা বলেন, মেয়েদের ঘিরে যে নিয়মকানুনের বেড়াজাল তুলে দেওয়া হয়েছিল, তাতেও ছিল ভণ্ডামি। মেয়েরা ঘর ছেড়ে স্কুলে গিয়ে পড়ালেখা করতে পারবে না। অথচ যখন পুরুষদের সাহায্য করতে মাঠে কাজ করার প্রসঙ্গ আসে, তখন কোনো নিয়ম নেই। মেয়েরা ঘরে বসে সেলাইয়ের কাজ করে। অথচ তাঁদের পারিশ্রমিক তুলে দেওয়া হয় পুরুষের হাতে।

ঘরে বসেই পড়ালেখা চালিয়ে যান নাঈমা। ব্যক্তিগত প্রার্থী হিসেবে পরীক্ষায় অংশ নেন। উচ্চবিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে ভাইদের বিরোধিতায় কিছুদিনের জন্য থমকে যেতে বাধ্য হন তিনি। তবে মামাদের মৃত্যু তাঁকে থেমে যেতে দেয়নি। গণমাধ্যমের নীরবতা তাঁকে আরও ব্যথিত করে। নাঈমা প্রশ্ন তোলেন, ‘বালুচরা কি মানুষ না? তাঁদের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? এমন উপেক্ষা মেনে নেওয়া যায় না।’ গণমাধ্যমের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা তাঁকে সাংবাদিকতার প্রতি আকৃষ্ট করে।

নিজ অঞ্চলের মানুষের গল্প তুলে ধরা
কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি ছাড়া আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বেলুচিস্তান নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে না। এই বিশেষ অনুমতি মেলাও কঠিন। এ অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশে পাকিস্তানের মূলধারার গণমাধ্যমকেও হাজারো ঝক্কি পোহাতে হয়।

নাঈমা বলেন, বেলুচিস্তানের একমাত্র নারী বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর পেয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পরিবারকে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। ভাইয়েরা তাঁকে সমর্থন না দিলেও এক মামার সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। এক বছরের পড়ার খরচও দেন ওই মামা। এরপর অর্থের জোগান ফুরিয়ে গেলেও ইউএস এইডের অর্থায়নে বৃত্তির অবদান করেন তিনি। মার্কিন সরকারের সহায়তায় পড়ালেখা নিয়ে এখন আর কোনো চিন্তা নেই তাঁর।

নাঈমা এখন স্বপ্ন দেখেন সাংবাদিক হওয়ার, বেলুচিস্তানের মানুষের দুর্বিষহ জীবনের গল্প সবার সামনে তুলে ধরার। নির্ভীক নাঈমা আজীবন সত্যের হাত ধরে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত দ্বিপ্রহর ডট কম-২০১৭-২০২০
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazardiprohor11