Site icon দ্বিপ্রহর ডট কম

‘সফট সিগন্যালের’ বলি হলেন লিটন?

‘সফট সিগন্যালের’ বলি হলেন লিটন?

সফট সিগন্যাল নিয়ম নিয়ে বিতর্ক ছিলে আগে থেকেই। পরপর দুই দিনে দুটি সিদ্ধান্তের পর সেই বিতর্ক চাউর হয়েছে আবার।

পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার গতকালের ম্যাচেই আলোচনার খোরাক জুগিয়েছিল আম্পায়ারদের ‘সফট সিগন্যাল’। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচেও এবার আলোচনার কেন্দ্রে এই সফট সিগন্যাল। বিতর্কিত এ সিদ্ধান্তের বলি হয়েই যে ফিরে যেতে হলো লিটনকে।

গতকাল ক্রিস মরিসের বলটা সজোরে পুল করেছিলেন হারিস সোহেল। ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচটা তালুবন্দী করেই ট্রেডমার্ক দৌড় শুরু করেছিলেন ইমরান তাহির। তাহির একপ্রকার নিশ্চিতই ছিলেন, ক্যাচটা যথার্থভাবে ধরেছেন। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য থার্ড আম্পায়ারের কাছে পাঠানোর আগে মাঠের আম্পায়ার সফট সিগন্যাল দিলেন নট আউট। বারবার রিপ্লে দেখেও নিশ্চিত হতে পারেননি থার্ড আম্পায়ার। ফলে মাঠের আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেই নট আউট দেওয়া হয় হারিসকে। সিদ্ধান্তটি নিয়ে এরপর সমালোচনা হয়েছে বেশ।

আজ বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচেও একই দৃশ্য দেখা গেল। আফগান অফ স্পিনারদের সামলাতে বাঁহাতি সৌম্য সরকারের বদলে ওপেনিংয়ে পাঠানো হয়েছিল ডানহাতি লিটন দাসকে। সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে ভালো শুরুও করেছিলেন লিটন। দুই চারে পৌঁছে গিয়েছিলেন ১৬ রানে। কিন্তু পঞ্চম ওভারে মুজিব উর রেহমানের বলে ঘটল বিপত্তি।

বলটা হালকা ড্রাইভ করেছিলেন, শর্ট কভারে হাশমতউল্লাহ শহীদী সেটি ধরেই আউটের আবেদন করলেন। লিটন নিশ্চিত ছিলেন না আউট হয়েছে কি না, দুই আম্পায়ারও পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তাই থার্ড আম্পায়ারের কাছে পাঠানো হলো, কিন্তু তার আগে সফট সিগন্যাল দেওয়া হলো আউট। বারবার রিপ্লে দেখেও নিশ্চিত হতে পারছিলেন না থার্ড আম্পায়ার আলিম দার। শেষ পর্যন্ত মাঠের আম্পায়ারদের সফট সিগন্যালের ওপর ভিত্তি করে লিটনকে আউটই দিয়ে দিলেন আম্পায়ার।

কিন্তু সিদ্ধান্তটি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে যথেষ্ট। বারবার রিপ্লে দেখে মনে হচ্ছিল, শহীদী তালুবন্দী করার সময় বলটা কিছু সময়ের জন্য মাটি ছুঁয়েছিল। থার্ড আম্পায়ার বারবার জুম করে দেখেও নিশ্চিত হতে পারছিলেন না কিছুতেই। এসব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত সাধারণত ব্যাটসম্যানদের পক্ষেই আসে। কিন্তু লিটনের ক্ষেত্রে হলো উল্টোটা। এবং সেটির পেছনে দায়ী মাঠের আম্পায়ারদের সফট সিগন্যাল।এই সফট সিগন্যাল পদ্ধতিটা নিয়েই যত বিতর্ক। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ থাকলে থার্ড আম্পায়ারের শরণাপন্ন হবেন মাঠের আম্পায়াররা, কিন্তু তার আগে নিজেদের মতামত জানাবেন সফট সিগন্যালের মাধ্যমে। থার্ড আম্পায়ার যদি রিপ্লে দেখে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেন যে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ভুল, কেবল তখনই তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন। কিন্তু যদি থার্ড আম্পায়ার পুরোপুরি নিশ্চিত হতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে মাঠের আম্পায়ারদের দেওয়া সফট সিগন্যালের সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে।

গতকালের ম্যাচের পরই বেশ কয়েকজন সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার এই সফট সিগন্যালের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সাবেক ভারতীয় অফ স্পিনার হরভজন সিং টুইট করে নিজের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন, ‘থার্ড আম্পায়ারই যদি সিদ্ধান্ত নেবেন, তাহলে আর মাঠ থেকে সফট সিগন্যাল দেওয়ার দরকার কী? সিদ্ধান্তটা থার্ড আম্পায়ারকেই নিতে দিন না!’

পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ চলাকালীন সময়ে সফট সিগন্যাল নিয়মের বিরোধিতা করেছিলেন সাবেক ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিং। ছবি: টুইটার

আরেক ভারতীয় স্পিনার মুরালি কার্তিক তো আরও চাঁছাছোলা সমালোচনা করেছেন। গতকাল তাহিরের নেওয়া ক্যাচটিকে আউট মনে করেছেন তিনি, সিদ্ধান্তটাও দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে যাওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছেন, ‘এমন অনেক ক্যাচ দেখেছি, যেগুলোতে সফট সিগন্যাল আউট দেওয়া হয়েছিল। অথচ এখানে প্রথম দেখাতেই আউট মনে হওয়ার পরেও আম্পায়ার সফট সিগন্যাল দিলেন নট আউট। থার্ড আম্পায়ার কেন সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেন না? অদ্ভুত!’ সাবেক কিউই ক্রিকেটার স্কট স্টাইরিসও টুইটটি শেয়ার করে নিজের সমর্থন জানিয়েছেন।

আরেক ভারতীয় ক্রিকেটার সুব্রামানিয়াম বদ্রিনাথও এই সফট সিগন্যালের বিরোধিতা করে টুইট করেছেন, ‘ক্যামেরা দিয়েই যেটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে না, সেটি আম্পায়াররা খালি চোখে কিছুতেই নিশ্চিত হয়ে দেখতে পারেন না। তাহলে কি মাঠের আম্পায়ারদের কোনো না কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা?’ জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার অ্যালান উইলকিন্সও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।

এর আগে গত বছর এই সফট সিগন্যাল নিয়ম উঠিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন স্টিভেন স্মিথও। সিডনিতে এক ওয়ানডেতে বিতর্কিত ক্যাচের সিদ্ধান্তে আউট হওয়া সাবেক অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক স্মিথ বলেছিলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি এই নিয়মের সমর্থক নই। এই নিয়মের কারণে মাঠের সিদ্ধান্ত পাল্টানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ফিল্ডার একটু আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উদ্‌যাপন শুরু করলেই মাঠের আম্পায়াররা আউট দিয়ে দিচ্ছেন। আর সন্দেহ থাকলে দিচ্ছেন নট আউট। এরপর থার্ড আম্পায়ারের পক্ষে সিদ্ধান্ত বদলানো কঠিন হয়ে পড়ে। আমি চাই, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারটা থার্ড আম্পায়ারের কাছেই থাকুক।’

আজকে লিটনের আউটটি দেখার পর নিশ্চিতভাবেই এই সফট সিগন্যাল সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠবে আরও। আইসিসি কি উত্তর দেবে এতসব বিতর্কের?

Exit mobile version