দু’টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের খোলা দুটি কোম্পানির মাধ্যমে সৌদি আরবের ভিসা সার্ভিস সেন্টার (ড্রপ বক্স) চালুর উদ্যোগ অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিক্ষুব্ধ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানিয়ে বলা হয়, এই ড্রপ বক্স চালুর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সৌদি আরবের শ্রমবাজারও মালয়েশিয়ার মতো সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাবে। সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে আর সাধারণ এজেন্সি মালিকরা পথে বসবে। এই সিন্ডিকেটের সাথে ‘অনির্বাচিত’ বায়রার কমিটি জড়িত অভিযোগ করে তীব্র সমালোচনা করা হয় মানববন্ধনে।
সৌদি ভিসা সার্ভিস সেন্টার(ড্রপ বক্স) নির্মূল কমিটির ব্যানারে কমিটির আহবায়ক বায়রার সদস্য আবদুল আলিমের সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল, সমন্বয়ক ফজলুল মতিন তৌহিদ, মতিউর রহমান খান, টিপু সুলতান, আরিফুর রহমান, মহিউদ্দিন, কেফায়েত উল্লাহ মামুন। উপস্থিত ছিলেন মো: ফারুকসহ প্রায় ৪শ’ বায়রার সদস্য।
মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, দুটি ভিসা সেন্টারের মাধ্যমে ভিসা জমা নেয়ার সব আয়োজন হলেও এজেন্সিগুলোর আন্দোলনের মুখে তা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে যেকোনো সময় সেন্টার দুটি চালুর আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই ভিসা সার্ভিস দুটি পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের অন্যতম নূর আলী ও আব্দুল হাই এখন সৌদি দুই ভিসা সার্ভিস সেন্টারের মূল হোতা বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।
বক্তারা বলেন, সৌদি আরবের বিশাল শ্রমবাজার দুটি এজেন্সির মাধ্যমে পরিচালিত হলে একটি এজেন্সি অন্য একটি এজেন্সিকে নথিপত্র জমা দিতে হবে। এতে ব্যবসার গোপনীয়তা থাকবে না। তারা সব ব্যবসা হাতিয়ে নিয়ে অন্য সব এজেন্সিকে পথে বসিয়ে ছাড়বে। তাছাড়া সৌদি আরবের বিশাল শ্রমবাজার দু-চারজনের কাছে কুক্ষিগত হয়ে গেলে জনশক্তি রফতানি কমে যাবে, রেমিটেন্স হারাবে দেশ। এই ড্রপ বক্সের নামে প্রতিবছর ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে। এখন পাসপোর্ট প্রতি ১১০০ টাকা নেয়ার কথা বলা হলেও পরে তা অনেকগুণ বাড়িয়ে নেয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
তারা অভিযোগ করেন, সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন তৎপরতা চালিয়ে সর্বশেষ বায়রার সুপারিশ নিয়ে সৌদি দূতাবাসকে প্রভাবিত করে এই সার্ভিস সেন্টারের অনুমতি আদায় করে। ফলে বায়রার সদস্যদের আন্দোলন সৌদি দূতাবাসের বিরুদ্ধে নয়। বরং দূতাবাসের নতুন কাউন্সিলর বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবেন বলেও তারা আশা করেন।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে যে ভিসা প্রসেসিং হচ্ছে তাতে সার্ভিস সেন্টারের প্রয়োজনীয়তাও নেই। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় এমন সার্ভিস সেন্টার চালুর তিনদিনের মাথায় বন্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশেও যাতে এই সার্ভিস সেন্টার চালুর চেষ্টা না করা হয় সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তুপক্ষের দৃাষ্টি আকর্ষণ করেন বক্তারা। তারা বলেন, সরকারের কোনো পর্যায়ে আলোচনা ছাড়াই অতি গোপনে এই সার্ভিস সেন্টার চালু এবং এক্ষেত্রে বায়রার বর্তমান শীর্ষনেতারাও গোপনীয়তা রক্ষা করে সিন্ডিকেটের পক্ষ নেয়ায় এটি যে বায়রার সদস্য এবং কারো জন্যই কল্যাণকর নয় তা পরিষ্কার হয়ে ওঠে। বায়রা যদি সবার স্বার্থ রক্ষায় এই সিন্ডিকেটের পক্ষ নিতো তবে তারা বায়রার ইজিএম ডেকে মতামত নিয়ে তা করতো; কিন্ত তা না করে এখনো একতরফাভাবে সেন্ডিকেটের পক্ষ নিয়ে তারা সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
বক্তারা আরো বলেন, অধিকাংশ সদস্য এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় বায়রার বর্তমান নেতারা আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য অপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। এমনকি সিন্ডিকেটের কিছু সদস্যকে দিয়ে সার্ভিস সেন্টারের পক্ষে কাউন্টার মানবন্ধনেরও কথা জানিয়ে ম্যাসেজ পাঠানো হয়।
মানবন্ধববন্ধনে বাংলা, ইংরেজী ও আরবী লিখিত বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন অংশগ্রহণকারীরা।