জাপানশীর্ষ রবীন্দ্রগবেষক, বাংলা ভাষা ও বাঙালি বলতে ছিলেন অজ্ঞান। যিনি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বলেছিলেন, পরজন্মে বাঙালি হয়ে জন্ম নিতে চাই।
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অধ্যাপক কাজুও আজুমা শুধু গবেষণাই করেননি, রবীন্দ্র-ওকাকুরা সম্প্রীতির সম্মানার্থে জীবনের ৪০ বছরের অধিক নিযুক্ত থেকেছেন জাপানি-বাঙালির মৈত্রীবন্ধনকে সুদৃঢ় করার জন্য। তাঁরই প্রবল আগ্রহ ও উদ্যোগের বদৌলতেই শ্রীনিকেতনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘নিপ্পন ভবন’ যা ছিল রবীন্দ্রনাথের স্বপ্ন। কলকাতার সল্ট লেকে নির্মিত হয়েছে জাপান-ভারত টেগোর অ্যাসোসিয়েশন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় ‘ভারত-জাপান সংস্কৃতি কেন্দ্র: রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবন’। বাংলাদেশের সিলেটেও ‘বাংলাদেশ-জাপান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ নির্মাণের জন্য সাড়ে ৬ কোটি টাকা দিয়েছিলেন তাঁরই স্নেহভাজন দারাদ আহমেদকে—পুরো টাকাই সে আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছে বাংলাদেশ ছেড়ে বলে জানা যায়। এই ঘটনায় কী প্রচণ্ড মানসিক আঘাত নিয়ে ২০১১ সালের ২৮ জুলাই তারিখে ইহজগৎ ছেড়ে চলে গেছেন ভাবলে লজ্জায়, দুঃখে, ক্ষোভে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে হয়। মাদাম কেইকো আজুমা ঘটনার তদন্ত করে একটা বিহিত করার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কিন্তু কোনো সাড়া পাননি আজ পর্যন্ত। চিঠিটি হয়ত তাঁকে পৌঁছানোই হয়নি!
জীবদ্দশায় অনেক পুরস্কার, পদক, সম্মানজনক ডক্টরেট ডিগ্রি তিনি অর্জন করেছেন। বিশ্বভারতী থেকে পেয়েছেন ‘দেশিকোত্তম’, পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ জাপানের রাষ্ট্রীয় পদক কোক্কা কুনশোও ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু তাঁর যে অবদান তার মূল্যায়নস্বরূপ ভারতের রাষ্ট্রীয় পদক পদ্মভূষণ পেতেই পারতেন। কেউ সুপারিশ বা প্রস্তাব করেননি। অথচ বাঘা বাঘা পণ্ডিত, গবেষক, অধ্যাপক ভারতে ছিলেন বা আছেন যাঁরা অধ্যাপক আজুমার কথা খুব ভালো করেই জানেন, জাপান ঘুরে গেছেন তাঁরা তাঁরই আমন্ত্রণে।
ঢাকার বাংলা একাডেমী নাকি বিদেশিদেরকে পুরস্কৃত করে না, নিয়ম নাকি আছে! একুশ শতকে এমন প্রতিষ্ঠানও আছে পৃথিবীতে! তবু প্রাক্তন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানকে অনুরোধ করে আমি একটা ফেলোশিপের ব্যবস্থা করেছিলাম। বলেছিলাম একটা সনদপত্র জাতীয় কিছু পাঠান যা আজুমা স্যার দেখে আনন্দিত হতে পারেন। বললেন, কীভাবে পাঠাব? বললাম, জাপানি দূতাবাসে পাঠিয়ে দিন। আজুমা স্যারের বাসায় পৌঁছে দেবে। কোনো সমস্যা হবে না। বললেন, ঠিক আছে।
সেই প্রতীক্ষার আজও অবসান হয়নি! মাদাম কেইকো আজুমাকে বলেছিলাম, বাংলা একাডেমীর ফেলোশিপের একটা প্রামাণিক সনদপত্র জাতীয় দলিল আসবে। ২০১০ সাল থেকে আজও তিনি আশায় আছেন।
বঙ্গবন্ধুর বড় মাপের ভক্ত ছিলেন কাজুও আজুমা। বঙ্গবন্ধুকন্যা বা আওয়ামী লীগ জীবদ্দশায় কোনোদিন খবরও নেননি! মুক্তিযুদ্ধে তাঁর যে অবদান তারও কোনো মূল্যায়ন হয়েছে বলে জানা নেই।
প্রবীর বিকাশ সরকার