Site icon দ্বিপ্রহর ডট কম

জাপানে ঈদ আনন্দমেলা ও মীনাবাজার অনুষ্ঠিত

জাপানের গুম্মা প্রিফিকচারে গুন্মা, তোচিগি ও সাইতামা প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে প্রথমবারের মতো ঈদ আনন্দমেলা ও মীনাবাজার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গত শুক্রবার ১৬ আগস্ট গ্রীষ্মের লম্বা ছুটিকে সামনে রেখে দিনটি উদযাপন করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

জাপানে ১১ আগস্ট পালিত হয় পবিত্র ঈদ-উল আযহা। ঈদের আনন্দ কে পূর্ণতা দিতে, ঈদের ৪ দিন পর ১৬ই আগস্ট গুম্মা, তোচিগি ও সাইতামা প্রবাসী বাংলাদেশী ‘রা আয়োজন করে ঈদ আনন্দমেলা ও মীনাবাজার ২০১৯।

গুম্মার ঐজুমি বুনকামুরা কালচারাল সেন্টারে আয়োজিত এই ইনডোর মীনাবাজারে স্টল ছিল মোট ১৭ টি | স্বদেশী বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের মধ্যে ছিল চটপটি-ফুচকা, সিঙ্গারা, মিষ্টি, রসমালাই, লাড্ডু, চমচম, ছানা মিষ্টি, চিকেন ফ্রাই স্টিক, নানরুটি-কারী-ডাল, সাদা ভাত-মাছ-ভর্তা-গরুর ভূনা, পেটিস, মুরালি, ঝালমুড়ি, বিরিয়ানী, চা-ঠান্ডা পানীয়সহ আরো অনেক খাবারের স্টল।

খাবারের স্টলের নামগুলোও ছিল নজরকাড়া – শাহাদাৎ দম্পতি পরিচালিত “ইয়ান তুন খাই যান”, শাহেদ আলম দম্পতি পরিচালিত “দেশী স্বাদ”, সুবিনয় দাস দম্পতি পরিচালিত “ভিলেজ ফুড”, আলম শীলা দম্পতি পরিচালিত “শীলার সৃষ্টি রসে ভরা মিষ্টি” সহ ছিল প্রবাস হালাল ফুড এর স্টল।

এছাড়াও বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, জুয়েলারী, কসমেটিক্স, জুতা; ছেলেদের পাঞ্জাবী- পায়জামা; ছোট বাচ্চাদের ড্রেস, খেলনার স্টল।

স্টলগুলোর নামকরণ ছিল- নাইস কালেকশন, ইউনিক, বাংলার ললনা শাড়িতে অনন্যা, মেইড ইন বাংলাদেশ, A to Z, B & C শপিং, টোকিও বুটিকস & জুয়েলারী, ফ্যাশন ফরএভার, স্বপ্নালোকে বুটিকস ইত্যাদি |

এছাড়াও ছিল ট্যুরস এবং এয়ার টিকেটিং স্টল “গিয়াস ট্যুরিজ্ম & ট্র্যাভেল সার্ভিসেস”, রেমিট্যান্স কর্নার “Pay forex”, সিডি ও বই এর স্টল “নীরব আশা”।

ইনডোরে এতোগুলো আইটেমসমৃদ্ধ স্টল পরিদর্শণ করা ছিল অতিথিদের জন্য দারুণ উপভোগ্য |

দিনটিতে কিছু অফিস খোলা থাকার কারণে এবং শুক্রবার জুমা নামাজ থাকার কারণে শুরুটা কিছুটা বিলম্বিত হয় ।
আশিকুর রহমান রনি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন হাফিজ কবির খান নাঈম ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করে ছোট বন্ধু নাফি।
তারপর সব ছোট বন্ধুদেরকে নিয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেষণ করেন রওশন আফরোজ রুম্পা। এসময় সবার হাতে থাকে বাংলাদেশের পতাকা | দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতকে সম্মান প্রদর্শণ করেন উপস্থিত সবাই।

জাতীয় সংগীত শেষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ই আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে প্রাণদানকারী বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকলের উদ্দেশ্যে শোক প্রকাশ করে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

কমিউনিটির পক্ষ্য থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে মাসুদ আখতার লাবু ও ফারহানা আফরুজ মিতু।
মীনাবাজারে স্টলদাতাদের পক্ষ্য থেকে বক্তব্য রাখেন ফাতেমা লুৎফর চম্পা।
উপস্থিত বিশেষ অতিথিদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন আসলাম খন্দকার হীরা, শাহীন চৌধুরী, মো. গিয়াস, মোখলেসুর রহমান মনি ও মো. জসিম।
বক্তব্যের পালা শেষ হলে গুণীজন সংবর্ধণা পর্ব পরিচালনা করেন আয়েশা সিদ্দিকা মিতু।

গুম্মায় আয়োজিত প্রথম মীনাবাজারে কম্যুনিটির পক্ষ্য থেকে জাপানে বাংলা সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ও সম্প্রতি কলকাতা থেকে রবীন্দ্র সংগীতের এ্যালবাম নীরব আশা প্রকাশ উপলক্ষ্যে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীতে স্নাতক ডিগ্রিধারিণী শাম্মী আখতার বাবলীকে বিশেষ সংবর্ধণা প্রদান করা হয় |

এছাড়াও জাপানে প্রথম বাংলা কাগজের পত্রিকা মানচিত্র এর সম্পাদনা, কথাসাহিত্য ও রবীন্দ্র গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রবীর বিকাশ সরকারকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয় | উনার রচিত ২৩ টি গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে শিশু কিশোর ছড়াগ্রন্থ, কাব্যগ্রন্থ, প্রবন্ধ ও উপন্যাস।
বিশিষ্ট এই সাংবাদিক ও লেখক এই হঠাৎ দেশে যাওয়ার কারণে তিনি উপস্থিৎ থাকতে পারেননি | উনার অবর্তমানে উনার পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন আরেক বরেণ্য সাংবাদিক মোখলেসুর রহমান মনি।

এরপর স্থানীয় প্রতিভার মূল্যায়ন পর্ব পরিচালনা করেন জনাব মিন্টু বড়ূয়া। স্থানীয় গুণী কণ্ঠশিল্পী দু’জন রাবিতা নওশী ও সাবরিনা জাহান এবং গুণী আবৃত্তিকার আয়েশা সিদ্দিকা মিতুকে বিশেষ মূল্যায়ন ও শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেন কণ্ঠশিল্পী শাম্মী আখতার বাবলী।

তৃতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যা উৎসর্গিত হয় প্রয়াত: বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীকে।

সংগীত পরিবেশনায় স্থানীয় শিল্পীদের মধ্যে একে একে মঞ্চে আসেন মিন্টু বড়ূয়া , রওশন আফরোজ রুম্পা, মৃদুল বর্মণ , জাকির হোসেন, সামিনা পপি, ইউনিক জ্যোতি , হাফিজ কবির খান নাঈম এবং দুই গুণী কণ্ঠশিল্পী সাবরিনা জাহান ও রাবিতা নওশী | আবৃত্তি পরিবেষণ করেন আয়েশা সিদ্দিকা মিতু, বিশেষ কৌতুক পরিবেষণ করে সবাইকে আনন্দ দেন আবু সুফিয়ান জুয়েল।

শিশুদের জাপানীজ গান পরিবেশনায় ছিল সুহান, রাইনা, আরিয়ান, জেসিন, অরিস্যা, হরফ, আরোহা, আয়ান প্রমুখ শিশুশিল্পীরা।

পরবর্তী পর্বে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে করা হয় আকর্ষণীয় কুইজ | কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে কুইজে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেন যথাক্রমে আয়েশা সিদ্দিকা মিতু, মোখলেসুর রহমান মনি ও মৌরি বড়ূয়া।

সবশেষে মঞ্চে উঠে আসে জাপানে প্রথম বাংলা ব্যান্ডদল ঝিঁঝিঁপোকা। দিনটি ছিল বাংলাদেশের কিংবদন্তী শিল্পী ও রকস্টার আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিন তাই ঝিঁঝিঁপোকা ব্যান্ড এর সদস্যরা সবাইকে নিয়ে কেক কেটে পালন করে আইয়ুব বাচ্চুর মরণোত্তর প্রথম জন্মদিন। আর কেক কাটার সাথে সাথে ঝিঁঝিঁপোকা পরিবেষণ করে ট্রিবিউট সং ” চলো বদলে যাই “।

এরপর ঝিঁঝিঁপোকার মূল কনসার্ট এর আগে ব্যান্ডের মিউজিকে সংগীত পরিবেষণা করেন রোমেল দিদার ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শাম্মী আখতার বাবলী।
তারপর ঝিঁঝিঁপোকা ব্যান্ডের অনবদ্য পরিবেশনা দর্শকদের মাতিয়ে রাখে সন্ধ্যা ৭.৩০ পর্যন্ত। প্রায় ২০ টির মত অবিরত মনমাতানো গানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ঝিঁঝিঁপোকা ব্যান্ডের গুম্মায় প্রথম স্টেজ শো।

সেই সাথে শেষ হয় গুম্মা, তোচিগি ও সাইতামা প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত প্রথম মীনাবাজার ও ঈদ আনন্দমেলা যেটাকে সংক্ষেপে E S C ও বলা যায় |
E ( Entertainment ) S ( Shopping) C ( Charity )

উল্লেখ্য, ‘ মানুষ মানুষের জন্য ‘ – স্লোগানটি বুকে ধারণ করে মীনাবাজার এর মাধ্যমে সংগ্রহিত হয় বাংলাদেশের বন্যাদুর্গত ও দু:স্থ ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্তদের জন্য বিশেষ তহবিল।
আয়োজক ও স্টলদাতাদের বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন বিশেষ অতিথিবৃন্দ, যেন ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে এ অঞ্চলে ধারাবাহিক ভাবে অনুষ্ঠিত হয় মীনাবাজার।

Exit mobile version