বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী পালন করতে সমগ্র জাতি যখন শোকাহত তখন জাপানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করেছে দেশটিতে বসবাসরত এক জামায়াত নেতা, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রবাসী বাঙালিরা।
প্রতিবাদ জানিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় জামায়াত নেতা হিসেবে পরিচিত রফিক আজিজ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তার নিজস্ব পাতায় লিখেন, ‘আজ ১৫ই আগস্ট! ইসলামী শিক্ষা দিবস! ইসলামী আন্দোলনের কিংবদন্তি শহীদ আব্দুল মালেকের শাহাদাত বার্ষিকী। আল্লাহ শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন।’
স্থানীয় প্রবাসীদের সংগঠন কানসাই বাংলাদেশ সোসাইটির সদ্য বিদায়ী কমিটির সদস্য জাতীয় শোক দিবসকে ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া রফিক আজিজ সেই পোস্টে মন্তব্যে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যার জন্য খুনিদের দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
রফিক আজিজ বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বাকশাল প্রতিষ্ঠাতা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সকল সদস্যকে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও মুক্তি যোদ্ধাদের একটি অংশ এই দিন নির্মমভাবে হত্যা করে। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন এই দিনটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করে।”
সেখানে মেজবাহ্ উদ্দিন নামে আর একজনকে জাতীয় শোক দিবস নিয়ে ‘অশালীন ভাষায়’ মন্তব্য করেন।
এদিকে রফিক আজিজের ফেইসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় প্রবাসী বাঙালিরা।
ফখরুল ইসলাম দিদার নামের এক জাপান প্রবাসী বলেন, “যারা বঙ্গবন্ধুকেই মানে না, তারা কিভাবে বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দেয়? এরা স্বাধীনতা বিরোধী। বিদেশে এসে বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র ছাড় দেয়া হবে না। আমি তেজগাঁ ও বিমানবন্দর থানায় তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ (স্বাচিপ) জাপান শাখার সদস্য সচিব মারুফ হক খান বলেন, “জাপানের ওসাকায় বসে ধর্মীয় উন্মাদনা ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এই জামায়াত নেতা। ধিক্কার জানাই এইসব পাকি প্রেতাত্মাদের। এদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।”
এদিকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করায় রফিক আজিজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছে স্থানীয় কানসাই আওয়ামী লীগ। সংগঠনের আহ্বায়ক আবু সাদাত সায়েম ও সদস্য সচিব হারুন-অর-রশিদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, “জাপানের ওসাকা শহরে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী রফিক আজিজ ১৫ ই আগস্ট – জাতীয় শোক দিবস এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার ব্যাপারে কটূক্তি, ইতিহাস বিকৃতি এবং মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে বক্তব্য প্রচার করায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, কানসাই, জাপান শাখা তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছে।”
‘রফিক আজিজ একজন চিহ্নিত জামাত নেতা যিনি বাংলাদেশে জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “বাংলাদেশে সে (রফিক আজিজ) কয়েকটি বিচারাধীন সন্ত্রাসী মামলার আসামী। জাপানে এসেও সে (রফিক আজিজ) কানসাই অঞ্চলে জামাত-শিবিরের প্রধান সংগঠক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। এর আগেও রফিক আজিজ বিভিন্ন সময়ে তার কথা বার্তায় কিংবা তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে বাংলাদেশ বিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করে প্রকাশ্যে বক্তব্য প্রচার করে। এমনকি বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পক্রিয়া শুরু হওয়ার পর এর বিরুদ্ধে ওসাকা এবং টোকিওতে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশি এবং জাপান সরকারের কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করে।”
উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতিমূলক অপপ্রচার এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননার দায়ে রফিক আজিজের মতো একজন বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতা বিরোধী ব্যক্তিকে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনা এবং তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিলের দাবি উঠে আসে বিবৃতিতে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেন এই ধরনের প্রচারণা, এ সম্পর্কে রফিক আজিজ বলেন, “যারা বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন, তারা তো সেনাবাহিনীর একটি অংশ এবং তারা মুক্তিযোদ্ধাও ছিল।”
খুনিদের দেশপ্রেমিক আপনি মনে করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দেখুন আমরা তো সেনাবাহিনীকে দেশপ্রেমিক হিসেবেই জানি। যারা খুন করেছেন, তারা তো দেশের হয়ে মুক্তিযুদ্ধও করেছে। পরবর্তীতে যাদের শাস্তি হয়েছে তাদের তো পরিচয় আমরা জেনেছি। আমার লেখার ক্ষেত্রে আমি হয়তো কিছুটা রং চটিয়ে লিখেছি মাত্র। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে এই কথা অস্বীকারের সুযোগ নেই।”
সতের বছর ধরে জাপানে আছেন উল্লেখ করে রফিক আজিজ জানান তার দেশের বাড়ি সাতক্ষীরা সদরে। এসময় তিনি দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই।