চা খেতে খেতে মিরাজ ইমরানকে বলেন, – শোন, তোমাকে বলি, আজকাল ফেইসবুকে কত কিছু দেখি। তুমি আমাদের এই এলাকা একবার আমার সাথে ঘুরে দেখে এরপর ফেইসবুকে লিখতে থাক। এসব অনিয়ম তুলে ধরলে দেখবে মানুষ একসময় তোমাকে সমর্থন দিবে। আজকাল অনেকেই রাস্তায় পুলিশের ঘুষ খাওয়া নিয়ে ছবি এবং ভিডিও করে ফেইসবুকে ছেড়ে দেয়। সেগুলো ভাইরাল হলে পর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত চলে যায়। প্রধানমন্ত্রীও দেখি এসব দেখে নানা ধরনের উদ্যোগ নেন। তুমি শুরু করলে মারীয়াও তোমাকে তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে ফেইসবুকে লাইক শেয়ার দিয়ে সাহায্য করতে পারবে।
মাঝে মধ্যে তুমি যদি এলাকায় আস আমি তোমাকে আসা যাওয়ার খরচ দিব দরকার হলে।
মার্টিন প্রশ্ন করে, কিন্তু আংকেল, আপনি এসব করতে বলছেন কারণ কি?
বিদেশে ছিলাম তো, মন মানসিকতা বিদেশের মতই হয়ে গেছে। এসব নোংরা পরিবেশ আর অনিয়ম দেখে ভালো লাগে না। আমরা যদি নিজের এলাকা নিজেরা পরিষ্কার না করি অন্য কেউ এসে করে দিবে না। আমাদেরই তো উদ্যোগ নিতে হবে। দেখবে একসময় সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নজরে পড়বে। তখন তারাই শহরের অন্য এলাকা পরিষ্কার করতে উদ্যোগ নিবে।
রাস্তা ঘাট পরিষ্কার করার সাথে তো পুলিশ বা রাজনৈতিক নেতা পাতি নেতাদের অনিয়মের কোন সম্পর্ক নেই। সেগুলো ঠিক করবেন কিভাবে?
প্রধানমন্ত্রীও যে খুব ভাল আছেন তা কিন্তু না। তারও ইচ্ছে তার ক্লিন ইমেজ নিয়ে ক্ষমতায় থাকার। মুখ ছোট করে বলেন, – শেখ হাসিনাও আসলে চায় না সে ক্ষমতায় থাকা কালে এমন কোন দুর্নীতি হোক, যাতে তার সরকারের আমলে ইমেজ নষ্ট হোক। যারা করছে তাদের তথ্য ভিতরে ভিতরে খোঁজ করছে না যে তা কিন্তু না। সময় আসলে সব সাইজ করবে সে। মেখ হাসিনা আসলে খুব কঠিন মহিলা।আপনারা এগিয়ে না এসে আমাদের দিয়ে করানোর ইচ্ছে কেন শুনতে পারি?
তোমরা ছাত্র মানুষ। এখনই করার সময়। আমরা তোমাদের পিছনে আছিতো। এমন তো না যে নেই। মারীয়া থাকা মানে তো আমার থাকা। আমরা ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে আছি। এক সাথে দুটো কাজ করলে কোনটাই শেষে হবে না।
আপনি কোন দেশে ছিলেন আংকেল? মার্টিনের প্রশ্ন।
ইমরান উত্তর দেয়, আমার বাবার সাথেই ছিলেন।
দেশে আসছেন কত বছর হয়?
-পাঁচ বছর তো হবে হয়তো।
মারীয়ার মা খেয়ে খালি প্লেট সামনে নিয়ে বসে কথা শুনছিলেন। আনিকা আর মারীয়া তাদের কথার নীরব শ্রুতা। মারীয়া উঠে এসে তার মার প্লেট হাতে নিয়ে বলে, – তুমি যাও উঠে গিয়ে হাত ধুয়ে আসো। এতক্ষণ পর জানালায় মারীয়ার সাথে থাকা সেই ছোট ছেলেটি ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। এসে বলে, – আমি নীচে যাই, খেলে আসি। ইমরান জানতে চায়, – ও কে?
আমার, কেন তুমি এর আগে এসে দেখনি? তুমি যখন এসেছিলে তখন হয়তো খেয়াল করো নি। কেন তোমার বাবা মা তো জানেন।
হেসে বলল, মারীয়া থেকে বয়সের পার্থক্য অনেক মনে হয়। এজন্য মনে হয় সবার সামনে আনেন নাই, তাই না?
আরে না। তেমন কিছু না। আমি তো পারলে এখন আবার বাচ্চা নেই। আমার কাছে বাচ্চা লালন পালন করতে অনেক ভালো লাগে। বলেেত বলতে মারীয়ার মা উঠে বেসিনে যান হাত ধুইতে। ছেলেটি বাইরে যাবার আগে তার জুতা মুজা ঠিক মত পড়ে তারপর কিছুটা ঘরের ভিতর ঢুকে মারীয়াকে বলে, – মারীয়া আপু নীচে আমি যাই। বলে সে লাফাতে লাফতে চলে যায়।
এতক্ষণ ও ভিতরের ঘরে একা বসে কি করছিল?
পড়ছিল।
ইমরান বলে, – আমরা আসলে আজ বাসায় না বলে এসেছি। অনেক দেরী হয়ে গেছে। আজ না হয় আসি। অন্য আরেকদিন আসবো। তখন মাকে বলে সাথে নিয়ে আসবো।
ঠিক আছে তাই করো। তোমাদের আর আটকাবো না।
আজ না হয় থেকেই যাও। মারীয়ার মা বললেন।
ইমরান বলে, – আন্টি আজ না, অন্যদিন না হয় এসে থাকবো। তার আগে আপনারা একদিন আসেন। আমাদের বাসায় এসে বেড়িয়ে যান। বলেই আনিকাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে, মামী, আপনি কতদিন আছেন? আপনিও না হয় একদিন আমাদের বাসায় আসেন বেড়িয়ে যান।
আমি কালকেই চলে যাবো। আসছিলাম বাসায় আজকে মারীয়াকে দেখতে আসছিল এই জন্য। এখানে বেশী থেকে তো আর লাভ নেই। তবে আমার কিন্তু অনেক দিনের ইচ্ছে নুহাশ পল্লী দেখতে যাবার। এবার না হয় আপনারা যান পিকনিক করে আসেন। পরে আমরা সবাই মিলে একসাথে একটা গাড়ি ভাড়া করে সাদাদিনের জন্য যাবো। তখন আরো বেশী মজা হবে।
মারীয়া বলে ভাইয়া সবাই মিলে গেলে খুব মজা হবে। আমারও অনেকদিনের সখ। হূমায়ুন স্যার মারা যাবার আগেই যেতে চেয়েছিলাম। মাকে অনেক বলেছি, মা যেতে না করছিল।
না করেছি, তখন তুই আরো কত ছোট। আমাদের ছাড়া গেলে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কেমন হত? এখন তো না করি না। তোর মামী আছে তাকে নিয়ে যা। ইমরান ওর মাকে নিয়ে গেলে আমিও যেতে পারি।
মারীয়ার মা আবার বলেন, – বাসায় গিয়ে কি করবে, তুমি আজ থেকে যাও। রাতে ভাল কিছু রান্না করবো তোমার জন্য। মারীয়া আছে ওর সাথে গল্প করতে পারবে।
মারীয়ার মার এমন আগ্রহ দেখে মার্টিন বলে, – একদিন আপনার বাসায় আমি ওর সাথে আসবো। এসে সারাদিন বেড়াবো। সেদিন মামীকৈ আসতে বইলেন। মারীয়ার বাবা উঠে বারান্দায় যান। ওনার ধূমপানের কোন অভ্যাস না থাকলেও বসে থাকতে থাকতে মনে গয় অস্থির হয়ে উঠেছেন। বারান্দায় গিয়ে হাত পা ঝাড়া দিয়ে ব্যায়াম করার মত অঙ্গভঙ্গী করছেন।
নাহিয়ান ঘরে আসে। এসে তার মায়ের কাছে একটু ঘেষে দৌড়ে আবার ওয়াশ রুমে যায়। হাত মুখ ধুয়ে বাইরে এসে তার মাকে বলে, – মা চা আছে? চা খাবো।
নাহিয়ান, কেমন আছ? এবার কিসে পড়?
জি ভাইয়া, ভালো আছি। এবার ফার্ষ্ট ইয়ারে পড়ি।
কি বলো? তোমাকে তো দেখে মনে করেছি সেভন এইটে পড় বুঝি।
নাহিয়ান তো মারীয়ার দুই বছরের ছোট। মারীয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়লে ও কলেজেই থাকার কথা। মারীয়ার মা বললেন।
আপনি না অনেক আগে আমাদের বনশ্রীর বাসায় আসছিলেন?
তোমার মনে আছে এতদিন আগের কথা?
আমার সবই মনে আছে। আপনি খুব দুষ্টমী করেছেন আমাদের বাসায় এসে। বাবা আপনার জন্য খেলনা পিস্তল এনেছিল। আপনার বাবা দিয়েছিল মনে হয় সেটা। সেটা দিয়ে সারাক্ষণ আমার আর মারীয়ার সাথে চোর পুলিশ খেলা করেছেন।
মারীয়ার বাবা বারান্দা থেকে এসে এবার নাহিয়ান সম্পর্কে বলছে, নাহিয়ান তো একদম কথা শোনে না। কলেজে ভর্তি করার পর থেকে কাদের সাথে চলে কোথায় যায় কি করে কিছুই বুঝি না। ওরে নিয়া খুব চিন্তায় আছি। কোন রকম ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলে ভাবছি বাইরে কোন দেশে পাঠিয়ে দেবো। দেশে থেকে ও অমানুষ হয়ে যাচ্ছে। সাড়া রাত জেগে কি করে আল্লাহই জানে। সকালে ডাকলেও ঘুম থেকে উঠে না। ঘুম ভাঙ্গে তার সকাল এগারোটার সময়। একটু যে সকালে উঠে মসজিদে যাবে, নামাজ কালাম পড়বে তা না করে ঘুমাইয়া শরীর মোটা বানাচ্ছে।
নাহিয়ান বলে, – আচ্ছা ভাইয়া আপনি বলেন তো, এখন আমার কোন ক্লাশ নেই। কাজও তেমন নেই, সকালে উঠে আমি করবো কি? কাজ থাকলে তো ঠিকই উঠে যাই। ক্লাশে তো কখনও দেরী করে যাই না।
ওর মা ওকে আরো বেশী খারাপ বানাচ্ছে। এই বয়সের ছেলেরা করে কি আর ও করে কি। দেখো না।
আনিকা মারীয়ার বাবাকে ধমক দেয়, আরে রাখেন তো দুলাভাই আপনি। আপনি একটু বেশী বেশী করেন। এই বয়সের ছেলে মেয়েদের সাথে একটু ফ্রি হয়ে বন্ধুর মত কথা বলতে হয়। আপনি বিদেশে থেকে এসব বোঝেন না?
মারীয়ার বাবা চুপ হয়ে থাকেন।য়। পরিবেশ কেমন থমথমে হয়ে য সুযোগ বুঝে ইমরান সবার কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসে।
(চলবে) —–