Site icon দ্বিপ্রহর ডট কম

নুহাশ পল্লীতে একদিন (পর্ব-১): পি. আর. প্ল্যাসিড

মেয়েটির নাম মারীয়া। সেই ছোট বেলা একবার মারীয়াকে দেখেছিল ইমরান। এরপর আর কখনও মারীয়ার কথা মনে পড়েনি ইমরানের। একদিন হঠাৎ করেই মারীয়ার বাবার সাথে দেখা হয় এয়ারপোর্টের সামনে ফুটওভারে।


নীচে বাস আর প্রাইভেট গাড়ির বিকট হর্ণের শব্দ আর দূরে বিমান উড়ার শব্দে অন্য কোন শব্দ কানে আসে না। এর মধ্যে ফুট ওভারের উপর মানুষ হেটে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। কারো চলায় কোন ছন্দপতন নেই। এত লোকের মাঝে কেউ কারো দিকে খেয়াল করার কথা নয়। এরই মধ্যে ইমরান তার পরিচিত একজনকে দেখে থমকে দাঁড়ায়।


অপরিচিত জায়গায় লোকের ভিরে অপ্রত্যাশিত কোন পরিচিত মুখ দেখে ইমরানের ভিতর উদ্বেলিত হয়। কাল ক্ষেপন না করে, ইমরান ডাক দেয় মারীয়ার বাবাকে। কয়েক বছর আগে কয়েক ঘন্টা দেখা লোকটির নাম ভুলে গেলেও চেহারা তার বেশ মনে রয়েছে। তাই পাশ কাটিয়ে যাবার সময় দেখে চেচিয়ে ডাকে, – এই যে ভাই, এই ভাই।


এই ভীড়ের মধ্যে কে কাকে ডাকে কেউ বুঝে উঠতে পারে না। তাই যে যার মত গতিতে ছন্দপতন না ঘটিয়ে সামনের দিকে পথ চলে। ইমরান দৌঁড়ে যায় মারীয়ার বাবার দিকে। গিয়ে তার হাত ধরে দুই পাটির লালচে কিছু দাঁত বের করে হেসে বলে, – ভাই কেমন আছেন? অনেকদিন পর দেখা হল। তা এখানে কেন? কোথায় যাচ্ছেন নাকী?


ইমরান জানে মারীয়ার বাবা দেশের বাইরে থাকেন। দেশে একবার ছুটিতে আসার সময় ইমরানদের জন্য কিছু জিনিষ এনেছিলেন বিদেশ থেকে। জিনিষ আনার জন্যই যাওয়া হয়েছিল তাদের বাসায়। ইমরানের বাবা এবং মিরাজ তারা দু’জন কাছাকাছি শহরে ছিলেন। মিরাজ ছুটিতে দেশে আসার সময় ইমরানদের জন্য পাঠানো জিনিষ আনতে গিয়েই পরিচয় হয়েছিল। অল্প সময়ের পরিচয়ে এতটা মনে রাখার কথাও না। কিন্তু ইমরান মনে রেখেছে। তার মেয়ে মারীয়ার কথাও মনে ছিল না। তাকে দেখে চট করে মনে চলে আসে মারীয়া নামটি। কি অদ্ভুদ স্মরণশক্তি।


মারীয়ার বাবা হাত ছাড়িয়ে বললেন, – তুমি আমাকে ভাই ডাকছো আমি বুঝবো কি করে? তোমার বাবা আমাকে ভাই ডাকে, তুমিও। তা কি করে হয়? তাছাড়া এই লোকের ভীড়ে, গাড়ি ঘোড়ার শব্দে কান কি আর ঠিক থাকে? একটু থেমে আবার বললেন, – আমি তো তোমার আংকেল হই। আর আমার নাম হচ্ছে মিরাজ। মিরাজ আংকেল বলে ডাকলেই আমি বুঝবো। তা, তুমি এদিকে যাও কই? আমি এয়ারপোর্ট এসেছিলাম আমার বাবা দেশে এসেছিল। আজই চলে গেল। বাবাকে বিদায় দিয়ে এখন বাসায় ফিরছি। তা আপনি?
হাত ইমরানের কাধে রেখে বললেন, – আমার বাসা তো এই কাছেই। হাজি ক্যাম্পের সামনে। আমার ব্যবসাও কাছেই। উত্তরা জমজম টাওয়ারে দোকান দিয়েছি। সময় থাকলে চলো দোকান দেখে যেয়ো।


ইমরান চুপ করে ভাবে, তার সাথে এখন যাবে নাকী কোন কাজের অযুহাত দেখিয়ে বলে বিদায় নিবে। ফুটওভারে বেশী সময় দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ নেই। একটু সময় দাঁড়ালে হয় ভীড় লেগে যায় নয় তো একজনের গায়ের সাথে আরেক জনের ধাক্কা লাগে। মিরাজ ইমরানকে ধরে কিছুটা টেনে একদিকে সাইড করে বলেন, – তোমার বাবা দেশে এসে আবার চলে গেল, আমার সাথে যোগাযোগ করলো না, কি ব্যাপার? বাবার কাছে মনে হয় আপনার সাথে যোগাযোগ করার কোন নাম্বার নেই। থাকলে অবশ্যই যোগাযোগ করতো। আপনাদের কথা বাবা মার সাথে আলোচনা করেছে কয়েকবার। কিছু লোক যেন গায়ে পরে কাছে এসে ধাক্কা দিয়ে সামনে হেটে যায়। ওদের দিকে তাকিয়ে ইমরান বিরক্ত হবার ভাব প্রকাশ করে বলে, – আপনি যে দেশে আছেন সেকথা তো আমি জানতাম না, বাবার মুখেই শুনেছি আপনি দেশে চলে এসেছেন। আন্টি কেমন আছেন? আপনার মেয়ে মারীয়া?মারীয়ার কথা তোমার মনে আছে? সেই কবে ছোট দেখেছ, এখনতো ও অনেক বড় হয়েছে। ও এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তা তুমি কি করছ? আমিও আংকেল একটা প্রাইভেট ইউনিভারসিটিতে পড়ছি। এখানে দাঁড়িয়ে তো কথা বলা যাবে না। হয় চলো আমার সাথে জমজম টাওয়ারে যাই ওখানে গিয়ে কথা বলি, না হয় একদিন সময় করে বাসায় আসো। বলেই পকেট থেকে তার দোকানের একটা কার্ড বের করে সামনে বারিয়ে দিয়ে বলে, – এই নেও রাখ এটা আমার দোকানের কার্ড, এটাতে আমার মোবাইল নাম্বার লেখা আছে। বাসায় আসলে তোমার আন্টি আর মারীয়া খুব খুশী হবে।


আন্টি আর মারীয়ার খুশী হবার কথায় ইমরানও বেশ খুশী হয়। তারপরেও ভয়ে ভয়ে জানতে চায়, – আংকেল আপনাদের বাসা যেন কোন দিকে বলেছেন? আরে ঐতো দেখা যায়।


ফুট ওভারের ব্রজিরে উপর থেকে সামান্য পুব দিকে ঘুরে দূরে তাকিয়ে হাত উচু করে দেখালেন মিরাজ। সামনে অনেক দালানকোঠা। কাছেই খালি জায়গা। তার আগে বিমানবন্দর রেল স্টেশন। স্টেশনের সামনে অনেক গুলো লাল, নীল, সাদা বিভিন্ন ডিজাইনের ব্যক্তিগত গাড়ি থেমে আছে। মাঝখানে ফেরিওয়ালাদের রাজত্ব। চোখ ঘুরালে পাশে রেল লাইন দেখা যায়। রেলের উপর দিয়ে টুপি পড়া কিছু লোক দলবদ্ধ হয়ে হেটে যাচ্ছে। ইমরান সঠিক আন্দাজ করতে না পেরে বলে, – ঠিক আছে আংকেল আমি একদিন আসবো আপনাদের বাসায়, আন্টিকে বলবেন।


মিরাজের ব্যস্ততা যেন বেড়ে যায়। অস্থিরতা প্রকাশ পায় তার নিঃশ্বাসে। এদিক ওদিক তাকিয়ে বললেন, – তোমার মাকে একদিন নিয়ে এসো আর আসার আগে ফোন করে আসলে ভাল হয়। বলেই মিরাজ কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে তরতর করে সেখান থেকে সরে যান। সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে নামতে ইমরানের দিকে একবার তাকালেন মিরাজ। ইমরানও সাইড হয়ে দাঁড়িয়ে তার সিঁড়ি ভেঙ্গে নীচে নামা দেখে।

চলবে…….

Exit mobile version