Site icon দ্বিপ্রহর ডট কম

নুহাশ পল্লীতে একদিন (পর্ব-১১): পি. আর. প্ল্যাসিড

মারীয়ার মা পরিচয় করিয়ে দেন, আমার ছোট ভাইয়ের ওয়াইফ। বলে শেষ করার আগেই আনিকা রসিকতা করে, – সেই সকাল থেকে আপনার কথাই শুনছিলাম। দেখার সুযোগ হল অবশেষে।


দু’দিন আগে ঢাকা শহরে এক মহিলা নেতৃীকে তার বিভিন্ন অপকর্মের কারণে গ্রেফতার করে ব্যাব পুলিশ। বাংলাদেশের সকল মিডিয়াতে সেই নেত্রীর গ্রেফতার সংবাদই প্রচার হচ্ছে বারবার। নাম পাপিয়া। ইমরান রসিকতা করে আনিকাকে বলে, – আপনার নাম আনিকা আর আমি শুনছিলাম পাপীয়া।


আনিকা রসিকতা করে বলে, – কেন পাপীয়া মনে হল? আপনি তার খরিদ ছিলেন কি না? আমার তো মনে হয় পাপীয়ার খদির ছিলেন। বলে হাসে আনিকা।


ইমরান লজ্জা পায়। লজ্জা পেলেও প্রকাশ করে না। কথায় বোঝা যায় কতযে শেয়ানা সে। মিরাজ মারীয়ার মাকে বললেন, – ইমরান আসছে ওকে খাবার দেও। ইমরানের সামনেই মিরাজ বলতে শুরু করলেন, – মেয়ে যেহেতু আছে আর বিয়ের বয়স হয়েছে, দেখতে আসবেই। আসলেই কি আর বিয়ে হয়ে যাবে নাকী। আসতে চাইলে আমরা তো আর না করতে পারি না কাউকে।তুমি না করতে পার না। আমার তো এসব বারতি ঝামেলা দেখে খারাপ লাগে। এখন কি আর সেই আগের দিন আছে নাকী যে, মেয়ে দেখতে আসলে তার পায়ের পাতা দেখাতে হবে? পায়ে পানি ঢেলে সামনে দিয়ে হেটে যেতে হবে? আমি বুঝেছি, আমার খরচ দিতে কি তোমার খুব কষ্ট হয়? পড়তেছি পড়াশোনা শেষ করতে দেও আগে। আমার বিয়ে করার ইচ্ছে হলে আমি নিজেই বলবো। আচ্ছা ইমরান ভাই, আপনিই কন তো দেখি, এমন কি বয়স হয়ছে আমার, যে তারা আমাকে বিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে গেছে?


মারীয়ার কথা শুনে তার বাবা আহল্লাদী হাসি হেসে বলেন, – এই তোমার মাকে নিয়ে আসলে না? তোমার মা ভালো আছে?

মার খবর তো নেন না? মা কিন্তু সবসময় আপনার কথা বলেন। কিন্তু কেন যোগাযোগ করেনি তা বলতে পারবো না।

আমি দেশে এসে অনেক ঝামেলায় পরেছিলাম। যেখানে যার সাথে যে ব্যবসাই করতে শুরু করেছি সেখানেই ধরা খেয়েছি। না জেনে না শুনে মানুষকে সহজে বিশ্বাস করলে যা হয়।

আপনি দেশে তো সব মানুষকে বিদেশীদের মত অনেস্ট মনে করে তাদের সাথে কাজ করতে শুরু করেছেন। আসলে দেশের মানুষকে আজকাল বিশ্বাস করা কঠিন আংকেল।

ভাগ্য ভলো এই একটা দোকান তোমার আন্টি বায়না করে ধরে রেখেছিল। এটা না হলে তো দেশে না খেয়ে মরতে হত আমাদের।

থাক এসব কথা এখন, ওকে বলে লাভ নেই। ইমরানের বাবা আসলে আমি কিছু কথা বলতাম। মারীয়ার মা সরল গতিতে বলেন কথা গুলো।
সবার মধ্যে ইমরান যেন তাদের ঝগড়া মিটাতে এসেছে এখানে। এতটাই স্বাভাবিক ভাবে তারা কথা বলতে শুরু করেছে যেন ইমরান তাদের অনেকদিনের ঘনিষ্ঠ। ইমরানের ভিতর যে জড়তা ছিল তাদের কথা শুনে এরই মধ্যে সেটা দূর হয়ে যায়। আনিকা মার্টিনের পাশে চেয়ার টেনে বসে। ইমরান প্রশ্ন করে, – ছেলে পক্ষ যে দেখে গেল, ছেলে কোন দেশে আছে?

চায়না।

আরে চায়না থাকে, বলে বিদেশ। চায়না কোন বিদেশ হল নাকী? ভারত আর চায়না একই। কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা হলে বুঝতাম যে না বিদেশ। শুনতেও বিদেশ বিদেশ মনে হয়। চায়না, একটা দেশ হয়েছে কোন? চায়না মানেই সব নকলের কারখানা।
ইমমরান হাসে। ইমরানের হাসি উপেক্ষা করে মারীয়া বলে, – ঐ দেশের মানুষ গুলাও মনে হয় নকল। ঐ দেশে পড়ালেখা করে বাঙ্গালী আর কতটা পিউর হবে? দেখা যাবে ওদের ভালবাসাও নকল হয়ে গেছে। বিয়ে আর খাটি হয় কি করে?


মারীয়ার কথা শুনে মনে হয় পাত্রপক্ষ তার পছন্দ হয়নি। যে কারণে ওদের সম্পর্কে পজেটিভ কোন কথা বলে না সে। মিরাজ আনিকার রসিকতায় ঘি ঢালার মত করে কিছু কথা বলতে গিয়ে প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে ইমরানকে বলেন, – এই তোমাকে সেদিন বলছিলাম এই এলাকার অনিয়মের কথা। আজকে দেখতে পাচ্ছ তো, পাপীয়ার মত এত দাপটের মহিলাও এখন র‌্যাবের হাতে বন্দী। অন্যায় করলে কারো রক্ষা নেই। প্রধানমন্ত্রী একটা কথা বলেছেন, অন্যায় যে করবে তার শাস্তি তিনি দিবেন। সে যেই দলেরই হোক। এইযে উনি শুরু করেছেন, মানুষ যাই বলুক এপর্যন্ত অন্য কোন দল কি এমন সাহস দেখাতে পেরেছে?


মিরাজ থেমে বলেন, বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন, দেশ ভাগ হবার সময় ওরা দেশের সব মূল্যবান সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে। তার ভাগ্যে আছে যত চোরের ক্ষণি। এমন কথা কয়জন বলতে পারে? তার মেয়ে হয়ে দলকে দুর্ণিতীমুক্ত করতে চেষ্টা করেছেন। বাকীটা তোমরা সহযোগিতা না করলে উনি একা কি করবেন, শুনি?


আনিকা হেসে বলে, – দুলাভাই ঘরেও রাজনীতি শুরু করেছেন দেখছি। মারীয়াকে দেখতে এসেছে, কোথায় মারীয়াকে ডেকে কথা বলবেন, তা না করে শুরু করেছেন রাজনীতির কথা। দূর দূলাভাই। আপনি আসলেই একজন বেরসিক মানুষ।


কথা বলার সময় আনিকা মার্টিনের গায়ে হাত দিয়ে বলে, – ভাই, আপনি বলেন তো শুনি। বলেই আবার মারীয়াকে বলে, – এই তুমি বসো না কেন? বসো।


মারীয়ার মা রান্না ঘরে গিয়ে হাঁড়ি গুডুর গাডুর শব্ধ করে ইমরানদের জন্য খাবার রেডী করেন। ইমরান তার আন্টিকে বলে, – আন্টি আজকে কি রান্না করেছেন? আপনি তো শুনেছি রান্না করতে বেশ নাকী ওস্তাদ। মা কিন্তু বলেছে, সেই কবে এসেছিল আমাকে নিয়ে। পরে সম্ভবক বাবার সাথে একবার আপনাদের বাসায় বেড়িয়েছে সেই কথা এখনও বলে মা।


মারীয়া বলে, – ছেলের বাবা নাকী পুলিশে চাকরী করে। পুলিশে চাকরী করে ছেলে কে দেশের বাইরে পড়ায় এত খরচ দেয় কোথেকে? খোঁজ নিয়ে দেখেন হারাম ইনকাম আছে বেটার। ওরা যেনো আর না আসে বিয়ের কথা বলতে।


ইমরানের মনে সাহস হয় মারীয়ার সাথে কথা বলার। সেখানে বসেই বলছিল, কোন ইউনিভার্সিটিতে পড় যেন তুমি?

বনানীর একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে।

আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে আগামী মাসে আমরা নুহাশ পল্লীতে পিকনিক করতে যাচ্ছি। যাবে নাকী আমাদের সাথে? গেলে যেতে পারো, অনেক আনন্দ হবে। ইমরান সরাসরি প্রস্তাব দিয়ে বসে মারীয়াকে। মারীয়া ইমরানের চোখের দিকে তাকায়। কি মনে করে মারীয়াকে তার সাথে পিকনিকে যাবার প্রস্তাব করেছে কোন হিসাব মিলাতে পারে না। এই অল্প সময়ের কথায় সে এমন প্রস্তাব দিতে পারলো দেখে বলে, – আমার অনেক দিনের সখ নুহাশ পল্লীতে যাবার। শুনেছি অনেক সুন্দর করেছে। বান্ধবীদের সাথে একবার যাবার জন্য ঠিক করেছিলাম। পরে যাওয়া হয়নি।


আনিকা বলল, – আমি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের খুব ভক্ত। তার প্রায় সব লেখাই আমি পড়েছি। খুব ভালো লাগে। কিন্তু শেষ বয়সে এসে যা করেছে তার পর আর তার কোন বই পড়িনি।


মারীয়া বলল, – আমি তার কয়েকটা বই পড়েছি। পড়তে ভালই লেগেছে কিন্তু বইতে তেমন কিছু পাই নাই।

সব কিছুর পরেও উনি আমাদের দেশের পাঠকদের পশ্চিম বাংলার লেখকদের থেকে ফিরিয়েছেন। উনি লেখালেখি করে যা করে গেছেন অন্য কেউ এমনটা করেছেন বলে শুনিনি। হুমায়ূন আহমেদ একজন লেখকই নন শুধু, উনি মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান করেছেন। তার মধ্যে আলাদা একধরনের মানবিকতা কাজ করেছে। যদিও তার জীবনের শেষ সময় শাওন এসেছিল যা তার ভক্ত কূলকে খুব বড় আঘাত দিয়েছে তারপরেও নুহাশ পল্লীর মত প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য এত সুন্দর একটি জায়গা তিনি তৈরী করে রেখে গেছেন এটাকে তুমি ছোট করে দেখতে পার না।


মারীয়ার মা টেবিলে খাবার দিতে শুরু করেন। তা দেখে আনিকাও রান্না ঘরে যায় মারীয়ার মাকে খাবার পরিবেশনে সহযোগিতা করতে।
(চলবে) —–

Exit mobile version