Site icon দ্বিপ্রহর ডট কম

নুহাশ পল্লীতে একদিন (পর্ব-১৫): পি. আর. প্ল্যাসিড

ইমরান সাথে সাথে ট্রাফিক পুলিশটির কাছে যায়। মোবাইল হাতে নিয়ে কাছে গিয়ে মোবাইলটি আবার মার্টিনকে দিতে যায়। এমন সময় সে কি ভেবে আবার বলে, তোমার মোবাইল দিয়ে ভিডিও কর। এখান থেকে দূরে চলে যাও। দূর থেকে জুম করে ছবি নিও। বলে ট্রাফিককে বলে, – ভাই, রাস্তার উপর আপনি খুব ব্যস্ত দেখছি। একটু কথা বলতে চাই। সুযোগ হবে?


ট্রাফিক পুলিশের লোকটি অবাক হয়ে ইমরানের দিকে তাকায়। তার তাকানোর মধ্যেই যেন প্রশ্ন চলে আসে, – কি বলবেন বলেন? কিন্তু মুখ দিয়ে প্রশ্ন আর করে না। ইমরান ঘুরে দেখে মার্টিন তার দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেছে কি না। মার্টিন তার কাজ যথাযত করতে শুরু করেছে দেখে প্রশ্ন করে, – আপনি অটো চালকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন দেখলাম, কিসের জন্য এই টাকা নিয়েছেন, বলবেন কি?


বিরক্ত ভাব প্রকাশ করে পাল্টা প্রশ্ন করেন, – আমি যে টাকা নিয়েছি কে বলেছে তোমাকে?


শুরুতেই আপনি ভুল করছেন। তুমি নয়, বলেন আপনি। সাধারণ পথচারীদের সবাইকে আপনারা যা ইচ্ছে তা ভাবতে পারেন না। আপনি করে বললে কি জাত যায়?
শুরু হয়ে যায় তর্ক, – তুমি কে? কি বলতে চাও?আমি শুধু জানতে চাই এই যে এখানে অটো আসলে আপনি সবার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন এর কারণ কি? কেন নিচ্ছেন এই টাকা?


-আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেই নি। যাও এখান থেকে, এখন ব্যস্ত আছি। দেখছো না রাস্তায় জানজট লেগে আছে, তার মধ্যে তুমি এসে ঝামেলা পাকাচ্ছ?

কেবল তো শুরু। আপনি আপনার গলা নামিয়ে কথা বলেন। না হলে মানুষজন জড়ো হয়ে যাবে। আশেপাশে লোক অপেক্ষায় আছে আপনি কি করেন তা দেখার জন্য।
ইমরানের কথা শুনে ট্রাফিক পুলিশ কিছুটা ঘাবরে যায়। ইমরানকে প্রশ্ন করেন, – কে আপনি? আপনার পরিচয় দিয়ে কথা বলতে হবে তো আগে?

মনে করেন আমি কেউ না। তবে আপনাকে ধরতে এসেছি। আপনি যে এখানে সব অটোর কাছ থেকে প্রতিবার দশটাকা করে চাঁদা নিচ্ছেন, না দিলে ইচ্ছে করে এখানে জ্যাম লাগিয়ে পথচারীদের ভোগাচ্ছেন আমি তা দেখার জন্য আর হাতে নাতে প্রমাণ নেবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। যা করার আমি করে নিয়েছি। এখন শুধু আপনাকে দিয়ে ক্ষমা চাওয়ানো বাকী আর যেন এমন কাজ না করেন কোন রাস্তায়।


লোকটি ইমরানের দিকে তাকিয়ে আশে পাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখে আসলে কে বা কারা ফলো করছে তাকে। ভীড়ের মধ্যে মনে হয় মার্টিনকে সে দেখতে পায়নি। ট্রাফিক পুলিশ রাস্তার ধারে এমন কাউকে না দেখে ইমরানকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরে যেতে বলেন সেখান থেকে। ইমরান বলল, – আপনার পকেটে দেখেন অবৈধভাবে কালেকশন করা টাকা আছে। সেগুলো বের করেন। একথা শোনার পর লোকটি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে হাতের লাঠি দিয়ে ইমরানকে আঘাত করতে উদ্বত হয়। পাশে দাঁড়ানো অন্য অটোতে বসা এক যাত্রী পিছন থেকে ট্রাফিক পুলিশের হাত ধরে বলে, – কি হইছে? লাঠি উচু করলেন কেন? এখানে জ্যাম লাগিয়ে পথচারীর সাথে তর্ক করছেন মিয়া আবার লাঠি উচু করেন মারতে? ক্ষমতা শুধু আপনাদেরই আছে, পাবলিকের নাই?


সাথে সাথে সেখানে আরো দুচারজন লোক তাদের মোবাইল বের করে ভিডিও করতে শুরু করে। ট্রাফিক পুলিশ এবার ইমরানদের রেখে যারা ভিডিও করছিল তাদের দিকে তেড়ে যায় ভিডিও বন্ধ করতে। একজনকে সে ধমক দিয়ে বন্ধ করতে বললে সে বলে, – মিয়া ভিডিও করি না, লাইভ চলছে। আপনার কাজ আপনি করেন। অলরেডী মানুষ দেখতে শুরু করছে। বলে সেও ভাব নিয়ে অনেকটা ট্রাফিক পুলিশকে ডেম কেয়ার ভাব দেখিয়ে লাইভ চালাতে থাকে।


ইমরানের এবার সাহস বেড়ে যায়। লোকটিকে দুর্বল করতে অনেকটা মিথ্যা বলে, – এখানে আমি দাঁড়িয়ে অনেক সময় ধরে দেখছি আপনি বিভিন্ন অটো চালকের কাছ থেকে কিভাবে যে টাকা নিয়ে পকেটে ভরছেন। সবার সামনে কিন্তু বের করাবো। এখনই লোকজন জড়ো হবার আগে টাকা বের করে দেখান এপর্যন্ত কত তুলেছেন। এরপর ক্ষমা চাইতে হবে। বলতে হবে আর কখনও রাস্তায় কোন গাড়ির চালকের কাছ থেকে এভাবে চাঁদা নিবেন না। মিয়া বাড়িতে বৌ ছেলে মেয়ে আছে তো মনে হয়, তাদের হারাম পয়সায় বড় করেন। না হলে দেখবেন ঐশির মত ওরাই আপনার গলা কাটবে। বলার পর লোকটি ইমরান আর যে লোক পিছন থেকে লাঠি ধরে মারতে বাধা দিয়েছে তাকে ডেকে দূরে নিয়ে হাত জোড় করে বলেন, – ভাই আর যাই করেন এসব ভিডিও ফেইসবুকে দিয়েন না। এতে চাকরীর কোন ক্ষতি না হলেও আমার ছেলে মেয়েরা দেখে আমাকে খারাপ বলবে।

ছেলে মেয়ে খারাপ বলবে এই ভয় থাকলে এসব করেন কেন? প্রতিজ্ঞা করেন আর কোন দিন করবেন না। দশদিন চোরের একদিন হাউদ জানেন না?

ঠিক আছে ভাই আমি কথা দিলাম আর কোনদিন করবো না। বলে আর দূরে তাকিয়ে দেখে অন্য কোন পুলিশ সদস্য সেখানে দেখা যায় কিনা। তাদেরও ইনফরমার থাকে, কাউকে তখন সেখানে দেখা যাচ্ছিল না। থাকলে হয়তো তাদের সহযোগিতায় উল্টো কিছু ঘটানোর চেষ্টা করতো। ইমরানের সাথে সেই লোকটি এক হয়ে বলে আপনার পকেটে যে টাকা আছে, নিজের রোজগারের ছাড়া সব বের করে এখনই সামনে স্টেশনে ভিক্ষুক আছে ওদের দিয়ে আসেন।


ওদের সাথে মোবাইলে ভিডিও ধারনকারী সবাই এসে ভীড় করে। কেউ কেউ তখনই ফেইসবুকে আপলোড দিতে প্রস্তুত হয়। মার্টিন তার মোবাইল ধরে রেখেই প্রশ্ন করে, – আপনার নাম কি? থাকেন কোথায়? দেশের বাড়ি কই? প্রশ্ন একটার পর একটা করে আর ভিডিও ধারন করে।


জিজ্ঞেস করে, – দিনে এখানে আপনার প্রতিদিন কতটাকা রোজগার হয়?
সেই উত্তর না দিয়ে বলে, – এই টাকা আমি একা নেই না। বসেরাও নেয়।

আরে কতটাকা উঠে সেটা বলেন আগে।

দৈনিক পাঁচ ছয় হাজার টাকা উঠে।

ঐ মিয়া, সরকার আপনাদের বেতন সহ এত সুযোগ সুবিধা বাড়িয়েছে তারপরও কেন এসব করতে হয়। দেশটাকে তো চুষে খাচ্ছেন। এসব যে করছেন এতে দেশের কি হবে ভাবছেন কখনও? এসব ছাড়েন, ছেড়ে ভালো হয়ে যান। দরকার হয় এই পোশাক ছেড়ে রাস্তায় চা বিক্রি করেন তাতেও মাসে হাজার পঞ্চাশ টাকা থাকবে। খুব ভাল করে সংসার চলে যাবে ঢাকা শহরে। যান, এই এলাকায় যেন দ্বিতীয় আর কোন দিন না দেখি অটোর কাছ থেকে চাঁদা তুলতে। বসেরা বললে বলবেন স্তানীয়রা ক্ষেপেছে। এ নিয়ে যেন আর বাড়াবাড়ি না করে। বলে দিয়েন ভাল হইতে পয়সা লাগে না। বিকাল থেকে পুরো রাস্তা পরিষ্কার দেখতে চাই। রাস্তায় শৃংখলা বজায় রাখার জন্যই আপনাকে এখানে রাখা হয়েছে। রাস্তার কাজ ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে থানায় বলবেন এখানে আপনাকে না দিতে।


লোকটি অনেকসময় চুপ থেকে পকেটে হাত দেয়। তখন আশেপাশের কিছু লোক তাদের ঘিরে দাঁড়ায়। ট্রাফিক পুলিশটি তার প্যান্টের ডান পকেট থেকে অনেকগুলো দশটাকা বিশটাকার নোট হাতের মুঠোয় বের করে। টাকা গুলো দেখে ইমরান বলে এখন তো সবাইকে টাকা ফেরত দিতে পারবেন না, যান স্টেশনে গিয়ে সামনে যে কয়জন ভিক্ষুক পাবেন ওদের দিয়ে ফিরে আসেন। এসময় আমরা এখানে রাস্তায় অটোদের ম্যানেজ করছি। বলে ট্রাফিক পুলিশকে ছেড়ে দেয়।


ওদের থেকে দূরে যাবার পর ইমরান সেই লোকটির সাথে হাত মিলিয়ে একে অপরের সাথে পরিচিত হয়ে নিজেদের মোবাইল নাম্বার আদান প্রদান করতে থাকে। মার্টিন সামনে এসে ইমরানকে মোবাইল দেখিয়ে বলে পুরোটাই ভিডিও করেছি, পরে বাসে বসে দেখাবো। বলে মোবাইল তার পকেটে ভরে রাখে।
(চলবে) —–

Exit mobile version