Site icon দ্বিপ্রহর ডট কম

নুহাশ পল্লীতে একদিন (পর্ব-১৬): পি. আর. প্ল্যাসিড

একটু পর ট্রাফিক পুলিশের লোকটিকে ফিরে আসতে দেখা যায়। তার সাথে আরো প্রায় তিন চারজন পুলিশ। একজন মনে হয় তাদের অফিসার। হাতে তার ওয়াকি টকি। ওয়াকি টকিতে কথা বলছে আর রেল ক্রসিং পার হচ্ছে। ইমরান ওদের দেখে সচেতন হয়। বুঝতে পারে এখানে একটা ঝামেলা হতে পারে। তার সাথে আরো দুচারজন লোক তখনও ছিল। তাদের আলোচনা শুনছিল দাঁড়িয়ে। আজকাল ঢাকা শহরে পুলিশের বিরুদ্ধে পথচারী প্রতিবাদ করলে সবাই এক হয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। এটাও পুলিশের বিরুদ্ধে পথচারীদের সচেতনতার লক্ষণ।


সবাই পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বুক উচু করে আসতে দেখে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে, এবার লোকটি ফাইজলামী করলে সবার সামনে ক্ষমা চাওয়াতে হবে। এরপর কানে ধরে উঠবস করাবো। সবাই এক থাকবেন।


পুলিশের লোক গুলো কাছে এসে থেমে যায়। সরাসরি আর ইমরানদের কাছে আসে না। রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল পরিবেশ দেখে নেয়। এরপর ওদের বস সামনে এসে ওয়াকি টকি হাতে নিয়ে ওন রেখেই প্রশ্ন করেন, – কি? এখানে না কী কি ঝামেলা করছেন আপনারা?


একজন বলল, – এই সবাই ভিডিও করতে শুরু করেন।


পুলিশ অফিসার প্রশ্ন করেন, – ভিডিও করতে হবে কেন? আপনারা তো দেশে নিজেদের হর্তাকর্তা মনে করেন। সাধারণ মানুষদের সাথে যা ইচ্ছে তাই ব্যবহার করেন। এবার মানুষ দেখবে আপনারা কেমন আচরণ করেন, এই জন্য ভিডিও করা দরকার।

কি হয়েছে কি, আমাকে বলবেন তো?

আপনি নিশ্চয় জেনেই আসছেন। না জেনে থাকলে যার কথায় এসেছেন তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন আগে। সে কি বলে তা শোনার পর এখানে আমাদের জিজ্ঞেস করেন। সত্য মিথ্যা পরে হবে।


অফিসারটি ক্ষমতার প্রয়োগ করতে আবারো বলেন, – আমি জানতে চাইছি আমাকে বলেন। আমাকে আবার আগে অন্যদের জিজ্ঞেস করতে বলছেন কেন?

আমরা তো মনে করি এখানে আমাদের কোন কিছুই হয়নি।

কিছু হয় নি, না? পুলিশের সাথে মাস্তানী করতে চান? হাত পা ভেঙ্গে পথে ফেলে রাখবো।
একথা যদি বলতে পারে, অমনি সেখানকার কিছু লোক ধরধর বলে চেচিয়ে উঠে। আর তখন একজন পুলিশ সেখানে কয়েকজনের উপর লাঠি চার্জ করা শুরু করে। সাথে সাথে সেখানে রাস্তা সব ফাঁকা হয়ে যায়। দশ বারজনের এক গ্রুপ পুলিশের হাতে লাঠি খাচ্ছে দেখে আশে পাশে দাঁড়িয়ে যারা দেখছিল তাদের অনেকে দৌড়ে এসে পুলিশের লাঠি পেটায় বাধা দেয়। মূহুর্তের মধ্যে কূরুক্ষেত্র বেধে গেলে আরো এক প্লাটুন পুলিশ এসে সবাইকে বিচ্ছিন্ন করে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনে। সবাই তখন চলে গেলেও ইমরান আর সেই সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসা লোকটি তখনও সেকানে দাঁড়িয়ে থাকে। পরে পুলিশ তাদের গাড়িতে উঠতে বললে তারা গাড়িতে উঠতে অস্বীকার করে। শুরু হয় তর্ক। একপর্যায় মার্টিন তার ভিডিও ফেইসবুকে আপলোড দেবার পর সামনে এগিয়ে এসে বলে, – দেখেন আমার কাছে সব কিছু ভিডিও করা আছে। আপনারা চানতো কোর্টে নিয়ে যান। আমরা সেখানে সব স্বাক্ষী প্রমাণ দেবো।


সাথের লোকটি তার বাবার পরিচয় দিয়ে বলে, – আমি ফোন দিচ্ছি আপনারা থাকেন। বাবা আসলে পর আপনারা আমাদের যা করার তাই করতে পারেন। বলেই ফোন দেয় তার বাবার নাম্বারে। ঘটনা ঘুলে বললে অপর প্রান্ত থেকে তার ফোনটা সেখানে উপস্থিত পুলিশ অফিসারকে ধরিয়ে দিতে বললে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে, নেন ফোনে কথা বলেন আগে।
পুলিশের অফিসার সেই ফোন আর ধরেন না। উল্টো বলেন, – অন্যায় করে কেউ পার পাবে না। আপনার বাবা যেই হোক। পুলিশের সাথে আপনারা করবেন মাস্তানী আর পুলিশ প্রশাসন সেটা চুপ করে বসে দেখবে? সেটা আপনার বাবারা আবার হুমকী ধামকী দিয়ে অন্যায়কারীদের ছাড়িয়ে নিবে সেই আমল এখন আর নেই। আগে যা করার অনেক করেছেন। বলে বলেন, – চলেন আপনারা দুইজন, গাড়িতে উঠেন। আর কে আছে আপনাদের সাথে? সেখানে যারা দাঁড়ানো সবাই এক সাথে বলে, আমাদেরও নিয়ে যেতে হবে। না হলে কাউকে নিতে পারবেন না।


এরমধ্যে কেউ একজন দূর থেকে ঠিল ছুড়ে মারলে তাদের ঠিক সামনে এসে ঠিল পড়ে। দূরে থাকা পুলিশদের কয়েকজন দেখে যেদিক থেকে ঠিল ছোড়া হয়েছে সেদিকে দৌড়ে ছুটে যায়। কিছুদূর গিয়ে সামনে যাকে পাচ্ছে তাদের লাঠি পেটা করতে শুরু করে। কিছুক্ষনের মধ্য সেখানে একটা সাদা প্রাইভেট গাড়ি চলে আসে। রাস্তা তখন ফাঁকা। গাড়ি থেকে একজন বয়স্ক লোককে নামতে দেখে পুলিশ অফিসার সাথে সাথে সেল্যুট দিয়ে আরো কাছে এগিয়ে যান। – স্যার আপনি জানেন না ওরা পুলিশের উপর হামলা করেছে। আমরা ওদের সামলাতে লাঠি চার্জ করেছি। না করলে বিষয়টি আয়ত্বে আনতে পারতাম না। বলে নিজেদের দোষ চাপা দিতে বলে, – স্যার আপনি এখানে কষ্ট করে আবার আসলেন আমাকে ফোন করে বললেই বিষয়টি দেখতাম।

ইমরানের সাথের লোকটি কোন কথাই বলে নি সেখানে আর। চুপ করে দেখছিল দৃশ্যটি। পুলিশ অফিসারের কথা শোনার পর লোকটি ইমরানদের সামনে এসে জানতে চায় আসলে কি ঘটেছে সেখানে।


আগে পরের কোন ঘটনাই ইমরান আর মার্টিন ছাড়া কেউ জানে না, তাই ইমরান শুরু থেকে ব্যাখ্যা করলে সাথের ছেলেটি এবার মুখ খোলে। বলে, – আমি যখন দেখলাম অন্যায়ভাবে তাকে মারতে উদ্যত হয়েছে তখন আমি পিছন থেকে ওর লাঠি ধরেছি। এতক্ষণ কোন সমস্যা হয়নি। আমরা ট্রাফিক পুলিশকে প্রথম বললাম বুঝিয়ে। সে আমাদের সব কথা শোনার পর আর কখনও রাস্তায় কারো কাছ থেকে অন্যায় ভাবে চাাঁদা তুলবে না বলে প্রতিজ্ঞা করলেও কেন আবার এই টিম সাথে নিয়ে এসে ঝামেলা করল?
ট্রাফিক পুলিশ তো সকাল থেকে তোলা চাঁদার টাকা ভিক্ষুকদের দিতে গিয়েছিল।
লোকটি এবার প্রথম যার সাথে ঝামেলা হয়েছে তাকে ডেকে সবার সামনে জিজ্ঞেস করেন, – ওরা যা বলছে আমি জানি মিথ্যা বলেনি। তুমি এই যে তোমার ক্ষমতা দেখাতে এখানে যে পরিবেশ তৈরী করেছ আমি কি এখন এর এ্যকশন নেবো নাকী ক্ষমা চাইবে পাবলিকের কাছে?


পুলিশ অফিসারটি ওকে ধরে বলে, – যাও, ওদের কাছে ক্ষমা চাও। বললে পর ট্রাফিক পুলিশ এগিয়ে এসে সামনে যে কয়জন দাঁড়ানো ছিল তাদের দিকে দুহাত জোড় করে বলে, – আমি ক্ষমা চাই, এমন কাজ আর করবো না।


পাশ থেকে একজন বলেন, – এভাবে না। দুই কান ধরে বলতে হবে। আর খেয়াল যেন থাকে এই এলাকায় বিশেষ করে হাজি ক্যাম্পের সামনে থেকে রেল ক্রসিং পর্যন্ত কোনভাবে যেন এখন থেকে আর কোনদিন জ্যাম না লাগে। ট্রেন যখন যায় তখন ভিন্ন কথা। মানুষ সেটা দেখে বুঝবে। ট্রাফিকের সৃষ্টি করা কোন জানজট যেন আর না হয়। কাজের বকশিস লাগে আমরা এলাকার ছেলেরা মিলে বাসা থেকে টাকা চেয়ে এনে দেবো। এখানে মেয়েরা ঠিক ভাবে চলাফেরা করতে পারে না। সেদিকে যেন খেয়াল থাকে। বলার পর ইমরান সবার সাথে হাত মিলিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে সবাইকে সেখান থেকে চলে যেতে বলে। রাস্তায় ততক্ষণে গাড়ি ঘোড়া স্বাভাবিক চলাফেরার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কোন অটো বা গাড়ি আর এসে থেমে থাকে না।


লোকটিও আর সবার সামনে তার পরিচয় উন্মোচন করে না। পুলিশ অফিসার বুঝতে পেরে ইমরানের সাথে ছেলেটিকে সম্মান করে একটা অটোতে তুলে দিয়ে ইমরানকে ডেকে বলে, – আপনারা আগে পরিচয় দিলে তো এত কিছু হয় না। যা হোক এবার যা হবার হয়ে গেছে। আর এমন আমাদের হবে না। আইসেন এখানে, আসলে যে কোন সময় আমাকে পাবেন। বলে দু’জন হাত মিলিয়ে দু’দিকে বিদায় হয়।
(চলবে) —–

Exit mobile version