Site icon দ্বিপ্রহর ডট কম

নুহাশ পল্লীতে একদিন (পর্ব-১০) : পি. আর. প্ল্যাসিড

মারীয়া গেইট খুলে বোকার মত করে দাঁড়িয়েই আছে। ভিতরে যে তাকে যেতে বলবে সেই বুদ্ধিও যেন হারিয়ে ফেলে সে। ইমরান ভাইয়ের কথা সে তার বাবা মার কাছে শুনে মনে মনে যেমন কল্পনা করেছিল তেমনটা হয়তো মিলেনি। যে কারণে তার তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় কিছুটা অবাক হবার মত ছবি ভেসে উঠে। ভিতরে যেতে না বলাতে ইমরানই বলে, – কি মারীয়া, ভুত দেখার মত দেখছ মনে হচ্ছে? ভিতরে যেতে বলবে না?
ভিতর থেকে মারীয়ার বাবা ডাকেন, – আরে আসো, আসো। তোমার জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি। এত দেরী করলে কেন? ঠিকানা চিনতে কষ্ট হয়েছে নাকী?না আংকেল। মাঝ পথে এসে এদিক সেদিক দেখলাম।
মারীয়া ইমরানের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দেয়। ইমরানের ভিতরে হাসির রোল পড়ে। বাসায় মেহমান যে কয়জন ছিলেন, তারা সকলেই তখন বিদায় নিচ্ছিল। মারীয়ার বয়সের এক মহিলা সামনে এসে বলছে, – ও, আপনিই সেই ইমরান?
মহিলার এমন করে কথাটি বলতে শুনে তার মাথায় লাগে। কি কারণে বলল সে যে, ও আপনি সেই ইমরান? তার মানে খোঁজার চেষ্টা করে। বলেই ভিতরের ঘরে চলে যায়। ইমরান সেখানে থাকা সবাইকে চিনে না। না চিনলেও তার আংকেলকে জিজ্ঞেস করে, -আংকেল, আন্টি কই?
মারীয়া তাদের ভিতরে ঢুকিয়ে নিজেও ভিতরের ঘরে চলে যায়। ভিতরে ঢুকেই ইমরান পুরো ঘর অল্প সময়ের মধ্যে ভালো করে দেখে নেয়। বসার ঘর থেকেই দেখা যায়। দুই বেড, সাথে বাথরুম এটাস। একটা বসার ঘর আর সাথে বারান্দা আছে। কিচেনটা যে খুব বড় তা মনে হয় না। কিচেনের ভিতর কয়েকজনের নড়াচড়ায় তা বোঝা যায়।
মেহমানদের যাবার প্রস্তুতি নেওয়া শেষ। এখন গেইট দিয়ে বের হবার অপেক্ষা মাত্র। সবাই মেহমানদের বিদায় জানানোর জন্য সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। মারীয়ার চোখে মুখে কোন আনন্দের ছাপ নেই। সৌজন্যতার খাতিরে বিদায় জানাতে হবে তাই সামনে আসা। সাথে তার সেই মহিলা। ইমরান খেয়াল করে, মহিলা মারীয়ার হয়ে কথা বলছে। মেহমানদের মধ্যে সব মিলিয়ে অনেকটা যেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মারীয়াকে তাদের পছন্দ হয়েছে কি হয়নি সেটা বলার চেষ্টা চলছে অভিনয়ের মত করে। তাদের মধ্যে বয়ষ্ক লোকটি যে পাত্রের মামা হন সেটি কথা শুনে বোঝা গেল। পাত্র উপস্থিত নেই। পাত্রের মা সহ আরো কয়েকজন কম বয়সের ছেলে মেয়ে। অনেকটা মারীয়াদের সমসাময়িক হবে। ওদের কেউ পাত্রের ছোট বোন কেউ বন্ধু।
ইমরান সাহস করে প্রশ্ন করে, পাত্রকে দেখছি না যে? পাত্র আসেন নি?
পাত্রর মা উত্তর দেন, – ছেলে থাকে বিদেশে। ওখানে পড়ালেখা করছে। আসবে আগামী মাসে। এসে বিয়ে করে বৌকে সাথে নিয়ে যাবে। ছেলে আমার খুব ভাল। বিদেশে থাকলেও খারাপ কোন ধরনের অভ্যেস নেই ওর মধ্যে।
ইমরানের কথা বলতে দেখে মিরাজ মেহমানদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, – আমার বন্ধুর ছেলে, নাম ইমরান। অনেকদিন পর এসেছে। আমি আর ওর বাবা এক সাথে বিদেশে ছিলাম।
তখন ইমরান তার বন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দেয়, – আমার বন্ধু, নাম মার্টিন। আমরা এক সাথে পড়ি।
মার্টিন নাম শুনে সবার দৃষ্টি মার্টিনের দিকে চলে আসে। একজন ওদের মধ্যে কোন কিছু না বোঝার আগেই বলে, – আমার সাথে একজন খৃষ্টান ছেলে পড়ে। খুব ভালো সে। আমাদের সবার মধ্য মনি। ওর নাম খৃষ্টফার।
হঠাৎ যেন সবার মুখে কেমন রূপ বদলে যাবার মত প্রসঙ্গ চলে আসে। মার্টিন নাম বলার সাথে সাথে সেখানে ধর্মীয় বিষয় চলে আসলে ইমরান বলে, – এখানে খৃষ্টান ধর্মের কি হলো আবার। বন্ধু মানেই বন্ধু। বন্ধুত্বের চেয়ে বড় কি ধর্ম নাকী?
ইমরানের কথায় মেয়েটির মুখ চুপসে যায়। পরিবেশ হল্কা করতে ইমরান আবার রসিকতা করে বলে, – সরি, বেশী কষ্ট দিয়ে ফেললাম মনে হয়। কিছু মনে করবেন না। আমাদের মধ্যে অনেক দিনের বন্ধুত্ব হলেও কখনও কেউ কারো ধর্ম নিয়ে ভাবী না।
মারীয়া মনে হয় সেখানে আর অপেক্ষা করতে চাইছিল না। সবার উদ্দেশ্যে বলে, – আবার আসবেন আপনারা। বলে ভিতরের ঘরে চলে যায়। মারীয়া গেলেও তার সাথে মহিলাটি যায় না। বিদায় দেওয়া পর্যন্ত সেই কথা বলছিল। গেইট দিয়ে বের হতে হতে যে সেই খৃষ্টান বন্ধুর প্রসঙ্গ টেনে এনেছে সে বলল, – খৃস্টানরা খুব ভাল হয়। উদারও হয় খুব। বলতে বলতে সিঁড়ির গোড়া পর্যন্ত যায়।
সিঁিড় পর্যন্ত মারীয়ার মা আর সেই মহিলাটি গেলে পর ইমরান তার আংকেলকে বলে, – আমরা আপনার দোকানে গিয়েছিলাম। না পেয়ে বাসায় চলে এসেছি।

আসছ বেশ ভালই করেছ। তোমার মা কেমন আছে? মাকে নিয়ে আসলে ভালো হতো।
মারীয়া বসার ঘরে এসে টেবিলের উপর রাখা মগ থেকে একটি কাঁচের গ্লাসে পানি ঢেলে ডগডগ করে খায়। খেয়ে বলে, – দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এত কথা বলে, মাথা ধরে গেছে। বলেই তার বাবাকে মারীয়া বলে, – আমাকে বিয়ে দেবার জন্য তুমি এত অস্থির কেন? আমি কি বুড়ি হয়ে গেছি যে এখনই বিয়ে দিতে হবে?
ইমরান আর মার্টিন তাকায় মারীয়ার দিকে। মারীয়া কথা বলছে তার মধ্যে কোন জড়তা নেই। ইমরান প্রশ্ন করে, – আমার কথা তোমার মনে আছে?

মনে না থাকার কি আছে? সেই যে বাবা বাইরে থাকতে এসেছিলেন এরপর তো আর কোনদিন আসলেন না।

তাও তোমার বাবার সাথে সেদিন হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়াতে আজকে আসা হল। দেখা না হলে তো আর যোগাযোগই হত না।

আমি দেশে আসার পর এত বেশী ব্যস্ত হয়ে গেছি যে কারো সাথেই যোগাযোগ করে উঠতে পারি নাই। মারীয়ার বাবা অপরাধীর মত করে বলেন।
এর মধ্যে মারীয়ার মা আর সেই মহিলা ভিতরে তাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। মারীয়া সাথের মহিলাকে ডেকে বলছে, – মামীর কথা শুনে মনে হচ্ছিল পারলে যেন আজই ওদের সাথে আমাকে দিয়ে দেয়।
মারীয়ার মুখে মামী ডাক শুনে ইমরান বুঝতে পারে মহিলা যে তার মামী হন। বয়স মারীয়া থেকে খুব বেশী পার্থক্য হবে না। কিন্তু শরীরের মধ্যে মহিলা মহিলা ভাব ফুটে উঠেছে। শরীরের মধ্যে মহিলাদের মত ভাঁজ দেখে ইমরান মহিলা মনে করছিল। এবার সাহস করে ইমরান বলে, মামীর নাম কি?

আনিকা।
পড়নে তার লাল সালোয়ার কামিজ। বুকের উড়নাও লাল। উড়না টেনে মাথায় দিয়ে ঘুমটা টানার মত পেচিয়ে বারবার বুকের উপর দিকের অংশ টেনে ঠিক করছিল। কথা শুনে মনে হল, কথা বলে বেশী কিন্তু মন পরিষ্কার। ইমরান সেখানে তার আংকেলের সামনে কথা বললেও ভিতরে কিছুটা সংকোচ বোধ করে। কিন্তু তার আংকেল বিদেশ ফেরত বলে তেমন কিছু মনে করেন না। পারলে তখনই আনিকার সাথে রসিকতায় মেতে উঠে। কিন্তু মারীয়ার মন বোঝার চেষ্টা করতে কারো কথায় বেশী মাতেন না।
ইমরান আনিকার নাম শুনে আরো একবার তাকিয়ে দেখে তাকে ভালো করে।
(চলবে) ———-

Exit mobile version