বেশ কিছুদিন ইমরান মারীয়াদের সাথে কোন যোগাযোগ করে নি। হঠাৎ একদিন সকালে ফোন করে মারীয়ার মোবাইলে। সেদিন ছিল শুক্রবার। মারীয়ার ছুটি। একটু বেলা করেই উঠবে মনে করে ঘুমুচ্ছিল সে। রাত জেগে সে ইউটিউবে ভারতীয় হিন্দি সিনেমা দেখেছে ভোর বেলা ঘুমুতে যায় বিছানায়।
অন্যদের মত মারীয়া ফেইসবুক চালালেও অনিয়মিত। কেউ তার সাথে চ্যাট করে না। সেও চ্যাটিং করে সময় নষ্ট করার পক্ষপাতী না। তার কথা কেউ তার সাথে কোন বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সরাসরি মোবাইলে ফোন দিয়ে কথা বললেই সে কথা বলবে। লিখে চ্যাটিং করার ধৈর্য্য তার নেই। চ্যাটিং করার সময়টা সে ইউটিউবে ছায়াছবি বা বিদেশি কোন বিষয়ের উপর ডকুমেন্টারী দেখে কাটালে অনেক কিছু শেখা যায়।
ইমরান একবার শুধু জানতে চেয়েছিল মারীয়ার ফেইসবুক আইডি আছে কি না। মারীয়া মিথ্যা বলে নি। বলেছিল, – থাকা না থাকা এক কথা। কেউ কোন ম্যাছেজ দিলেও তার উত্তর দেওয়া হয় না কখনও। তবে অনেকের স্ট্যাটাস তার ভাল লাগে বিধায় দেখে। দেখে কোন লাইক বা কমেন্টও করে না সে। বলে ইমরানকে বলেছিল কোন দরকার হলে মোবাইলেই ফোন কল করতে। এজন্য তাকে আর কখনও ফেইসবুকে খোঁজেনি। ফোনও করা হয় নি।
সকালে ফোন বাজতে দেখে মারীয়া লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠে ফোন রিসিভ করে। ফোন রিসিভ করলেও এরই মধ্যে ইমরান রিং করা বন্ধ করে দেয়। মারীয়া ফোন কানের কাছে নিয়ে হ্যাঁলো হ্যাঁলো করতে থাকলেও অপর প্রান্ত থেকে ইমরান কোন উত্তর না দেয়ায় সে ফোন সেট সামনে এনে দেখে লাইন কেটে দিয়েছে। মারীয়া একটু বিরক্ত হয়ে বালিশের নীচে মোবাইল ফোন রেখে শুয়ে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে।
দশ পনর মিনিট পর ইমরান আবার ফোন করে। তখন মারীয়া পুরো ঘুমে। ফোন বাজার শব্দ তার ঘুম ভাঙ্গাতে পারেনি। বেশ কিছু সময় রিং করিয়ে ইমরান ফোন কেটে দেয়। প্রায় এক ঘন্টা পর মারীয়ার মা তার ঘরে এসে টেবিলের উপর কিছু রাখলে শব্দ হয়। সেই শব্দে মারীয়ার ঘুম ভাঙ্গে। তাকিয়ে দেখে তার মা কি করছে। মারীয়ার মা ডেকে বলেন, – ঐ উঠ। টেবিলে নাস্তা দিয়েছি। চল তোকে নিয়ে মার্কেটিংয়ে যাবো ভাবছি।
– আমি যাবো না। তুমি নাহিয়ানকে নিয়ে যাও।
– উঠ। নাস্তা করে নে আগে। তোর বাবা তোর জন্য একটা ড্রেস কেনার টাকা দিয়েছে। বলল, তাদের ওখানে নাকী ভারতীয় একটা নতুন ডিজাইনের ড্রেস এসেছে। তোর বাবার নাকী খুব পছন্দ হয়েছে। তাই টাকা দিল তোর জন্য ড্রেস কিনতে।
মারীয়া শরীর শটান করে দুই হাত উপরে তুলে এরপর ডান দিকে আর বাম দিকে ছড়িয়ে বিছানায় রেখে পা টানটান লম্বা করে মায়ের দিকে তাকায়। মারীয়ার মা মেয়ের দিকে খেয়াল করে। তার শরীর আজকাল দ্রুত বাড়ছে। দেখে বলেন, – এই উঠ। রাত জেগে সিনেমা দেখস এতে তোর স্বাস্থ্য খারাপ হবে চিন্তা করস না। একরাত না ঘুমালে চোখের কোনে কালো দাঁগ পরে। আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখ কেমন হয়েছে তোর চোখ। মনে হয় কাজল দিয়েছস। বলে মারীয়ার ঘর থেকে বের হয়ে বসার ঘরে যেখানে ডাইনিং টেবিল পাতা রয়েছে সেখানে গিয়ে চায়ের একটা কাপ উল্টো করে রেখে ফ্লাস্ক থেকে চা ঢেলে রাখেন।
চায়ের কাপ থেকে গরম ভাপ উড়ছে। এবার নাহিয়ানকে ডাকেন। – নাহিয়ান, ঐ নাহিয়ান। সারা রাত চুরি করে শেষ রাতে ঘুমায় আর সকালে ডাকলে উঠে না। ঐ উঠ। না উঠলে বিছানায় পানি ঢেলে দেবো। এমন সময় মারীয়ার বাবা বাইরে থেকে আসেন। হাতে তার বাজারের ব্যাগ। দরজা খোলাই ছিল। দরজা খুলে ভিতরে এসে প্রশ্ন করেন, – নাহিয়ান এখনও উঠে নি?
– নাহিয়ানের কথা বলছ, তোমার মেয়েওতো এখনো উঠেনি।
– এত বেলা পর্যন্ত ওরা যদি ঘুমায়, ভবিষ্যতে করবেটা কি? বড় হয়েছে এখনও যদি নিজের বিষয় নিজেরা চিন্তা না করে তাহলে ভবিষ্যতে কি করবে? বলেই ডাকেন, – নাহিয়ান, কিরে উঠস না কেন? এই বয়সে এত বেলা পর্যন্ত ঘুমালে কি করবি। তোদের দিয়ে কোন কাজ হবে বলে তো মনে হয় না।
মারীয়া বিছানা ছেড়ে উঠে একবার ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে আবার ভিতরে তার রুমে গিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে। ওয়াশ রুমে ঢুকেই বালতিতে পানি ছাড়ে। পানি পড়ার শব্দে ভিতরের আর কিছু বোঝা যায় না। কল ছাড়া অবস্থায় সে সকালের কাজ ছেড়ে পানি ঢালে। এরপর দাঁত ব্রাশ করতে শুরু করে। ব্রাশ করার সময়েই সে একবার দরজা খুঁলে বাইরে উঁকি দিয়ে কিছু বলতে চায়। তার বাবা সামনে থাকায় আবার ভিতরে গিয়ে বেসিনে মুখ কুলি করে।
মারীয়া বাইরে বেরিয়ে আসলে তার বাবা বলেন, – তোমার মার সাথে মার্কেটে গিয়ে ঘুরে আস। তোমার মাকে বলেছি নতুন ড্রেস কিনে দিতে।
মারীয়া কোন উত্তর করে না। তার চোখে তখনও ঘুম ঘুম ভাব। মাথায় কোন কিছুই কাজ করে না। ফেইস টাওয়াল নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে টেবিলের সাথে ঘেষিয়ে রাখা একটা চেয়ার টেনে বসে তার মাকে চা দিতে বলে মারীয়া। তার মা চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে রুটির প্লেট মারীয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন, – ডিম পোজ করে দেবো নাকী ভাজি দিয়ে খাবি।
কি দিয়ে খাবে তার উত্তর করার আগেই সে উঠে যায় তার রুমে। মোবাইল বাজছিল। কেউ রিং হবার শব্দ না পেলেও সে ঠিকই টের পেয়ে ফোন রিসিভ করতে গিয়ে দেখে এবারও তার ইমরান ভাই ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করে জানালার কাছে গিয়ে কথা বলে। দূরে খালি মাঠের মত সবুজে ভরা জায়গার দিকে চোখ রেখে বলে, কি ভাইয়া, তুমি সেই সকালে ফোন করে ঘুম ভাঙ্গালে, আমি মোবাইলে হ্যাঁলো হ্যাঁলো করছিলাম তুমি কোন কথা না বলে ফোন রেখে দিলে কেন?
মারীয়ার মুখে তুমি সম্ভোধন ইমরানের কানে লাগলেও সে মনে মনে খুশীই হয়। বলে, – আমরা আজকে ডিপার্টমেন্ট থেকে পিকনিকে যাচ্ছি। ভেবেছিলাম তোমাকে নিয়ে যাবো। কিন্তু হঠাৎ আমাদের পিকনিক স্পট চেঞ্জ করাতে তোমাকে আর বলিনি। তাছাড়া আজকে গেলেও তোমাকে আলাদা সময় দিতে পারবো না মনে করে আর বলা হয় নি। তবে পিকনিকে যাচ্ছি সেটা বলার জন্যই ফোন করা। তোমাকে আজ সারাদিন মিস করবো।
– হইছে, বুঝছি ভিতুর ডিম। বললেই না যেতে চাবো তাই, তুমি যে বলেছিলে নুহাশ পল্লীতে যাবে?
– আজ যাচ্ছি না। আমি ভেবেছি তোমাকে ছাড়া আমি নুহাশ পল্লীতে যাবো না। তোমাকে নিয়ে যেতে না পারলে আমি কখনও যাবো না।
মারীয়া হাসে। হাসির শব্দ ইমরান শুনতে পায়। মারীয়া প্রশ্ন করে, – এখন কোথায়?
– টঙ্গী ছেড়ে যাচ্ছি।
মারীয়ার মা ডাকেন, – কিরে মারীয়া, আগে নাস্তা করে নে। চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। কে ফোন করেছে? খেয়ে কথা বললেই হয়। এত কি জরুরী?
মারীয়া বলে এই শোন, মা নাস্তা করতে ডাকছে। পরে কথা বলি। ইমরান ফোন কেটে তার কাজে ব্যস্ত হয়। ঢাকা শহরের জানজট অনেকটা পেরিয়ে ফাঁকা রাস্তায় তাদের বাস দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করে। ভিতরে উচ্চ ভলিয়্যুমে হিন্দি গান চলছে। তারা কয়েকজন মিলে সবার মাঝে সকালের নাস্তা বিতরণ করতে শুরু করে।
(চলবে)