মারীয়া টেবিলে এসে খেতে বসলে তার মা পাশের চেয়ারে বসে নাহিয়ানকে ডাকেন। নাহিয়ানকে ডাকলে তার ছোট ভাই অন্য ঘর থেকে উঠে এসে সে তার মায়ের গায়ের সাথে ঘেষে প্রশ্ন করে, – মা আমি কি দিয়ে খাবো?যা তো নাহিয়ানকে ডেকে তুলে নিয়ে আয়।
মারীয়ার ছোট ভাই তার নাহিয়ান ভাইয়ের রুমে গিয়ে নাহিয়ানকে ডেকে তুলে রেখে আসে। এসে আবার তার মায়ের কাছে এসে ঘেষতে থাকলে বলেন, – যা হাত মুখ ধুয়ে আয়। মুখ না ধুইয়ে খেতে আসলি কেন। যা আগে দাঁত ব্রাশ করে আয়। এবারও সে লক্ষ্মী ছেলের মত কোন প্রতিবাদ বা অনিচ্ছা প্রকাশ না করে চলে যায় ওয়াশ রুমে। কিছু সময় পর বেরিয়ে এসে তার মারীয়া আপুর পাশে বসে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, – মা আমি ডিম পোজ খাব।
টেবিলের উপর দুই লিটারের বড় পানির বতুল ভরা পানি। একটা সিলভারের গ্লাসে পানি ঢেলে সামনে এগিয়ে দিয়ে বলেন, – এই নে, পানি খা আগে। আমি ডিম পোজ করে নিয়ে আসি। চা খাবি না?
না।
মারীয়ার মা উঠে রান্না ঘরে গেলে তার বাবা আবার নাহিয়ানকে ডেকে বলেন, – কই তুই, উঠছস? আয় দেহি শুনি আজকে তোর কি কাজ?
নাহিয়ান এর মধ্যে উঠে বিঠানা থেকে নীচে পা নামিয়ে বসে চোখ কচলাচ্ছিল। তার বাবার ডাকে উঠে এসে বলে, – কি হয়েছে বলো?
কোথাও যাবি আজকে?
না, কই যাবো?
পারলে দুপুরে দোকানে আছিস।
কেন, কোন কাজ আছে?
আসতে বললাম, আসিছ।
কোথাও যেতে ভাল লাগে না। তুমি বল আগে শুনি যদি মনে হয় যাওয়া দরকার তাহলে যাবো।
রান্না ঘর থেকে দুই ভাইয়ের জন্য ডিম পোজ করে নিয়ে এসে তার মা মারীয়াকে প্রশ্ন করেন, – কে ফোন করেছিল?
মারীয়া কোন উত্তর না করে মুখে রুটি আর ভাজি দিয়ে চিবোতে থাকে। মারীয়ার বাবা নাহিয়ানের সাথে কোন কথা না বারিয়ে তার মাকে বলেন, – এগুলারে এত আদর যতœ করে খাইয়ে বড় করছো কি কারণে? বড় হয়ে তো দেখছি একটাও মানুষ হবে না।
মারীয়া মুখের খাবার গিলে নিয়ে তার বাবার কথা ধরে বলে, – বাবা, তুমি না একটু বদলানোর চেষ্টা করো তো। আমরা তো তোমারই সন্তান, নাকী? সব সময় আমাদের পিছে এভাবে লেগে থাকলে আমাদের মন তো খারাপ হয়। বাসায় এমন করলে বাইরে ক্লাশে গিয়েও মনে শান্তি পাই না। তুমি না একদম দাদুর মত হয়েছ। তোমার অন্য আর কোন ভাই তো তোমার মত হয় নি। তুমি কেন এত কেট কেট করো সব কিছুতে বলো তো?
মিরাজ মারীয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মা বললেন, – ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে। ওদের মত করে এখন করতে দেও দোষ কি এতে। ওরা নিজেরাই একসময় ভালো মন্দ বুঝতে পারবে। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আরে যার হয় না নয়তে, তার হবে না নব্বইতে।
নাহিয়ান নাস্তা খেতে শুরু করে। তার ছোট ভাই দুই হাতে চায়ের কাপ নিয়ে ফু দিয়ে চা খয়। তার মা বলেন, – ইমরানকে দেখেছ না? ওর বাবা নেই কাছে। মা ওকে কত স্বাধীনতা দিয়েছে। সারাদিন ইমরানকে দেখারও সময় হয় না তার মায়ের। নিজেই তার ভাল মন্দ বুঝে চলছে।
ইমরানের মত ওদের হতে বহু সময় লাগবে। তাও হবে কিনা সন্দেহ।
আবারো মারীয়া তার বাবার কথা ধরে বলে, – বাবা তুমি ইমরান ভাইয়ের এত ভাল কি দেখেছ শুনি?
নাস্তা করে মারীয়া উঠে তার রুমে যেতে থাকলে তার মা আবার ডাকে। মারীয়া বলে, – ইমরান ভাই কল করেছিল। তাকে কল ব্যাক করতে হবে। কেন কি হয়েছে কিছু বলবে?
তোর বাবা কি যেন বলতে চাইছে। শোন।
মারীয়া ঘুরে আবার চেয়ারে বসে বলে, – বলো কি বলবে না। এত খেটখেট করলে মন মেজাজ ভাল থাকে না। তখন ভালো কথাও শুনতে ইচ্ছে করে না। চুপ করে থেকে আবার বলে মারীয়া, – বলো কি বলবে শুনি।
মারীয়ার বাবা চুপ করে থেকে বলেন, – তুই পরিবারের বড় সন্তান। তুইও যদি এমন করে কথা বলিস তাহলে আমাদের তো কষ্ট হয়।
বাবা, তুমি আজকালকার ছেলে মেয়েদের মন বোঝার চেষ্টা কর না কেন? তুমি বিদেশ থেকে কি শিখা আইছো? বিদেশে থেকে এত টাকা নিয়ে এসে তো বুদ্ধির কারণে সব নষ্ট করছো। এখন কিছু যদি শিখা আইসা থাকো সে শিক্ষা ছেলে মেয়েদের উপর কাজে লাগাও। এটা অন্তত ভালো কাজে লাগবে।
শোন।
বলো।
তোর ইমরান ভাই কি যোগাযোগ করে?
একটু আগেই ফোন করেছিল। এর মধ্যে করেনি। কেন কোন কিছু বলবে নাকী?
আসলে, ইমরানের বাবা মার সাথে আমরা কথা দিয়েছিলাম ইমরান বড় হলে তাকে দিয়ে তোকে বিয়ে করাবো। কিন্তু এখন তোদের যেই যুগ পড়েছে আমাদের ইচ্ছাতে তো আর সব কিছু করা ঠিক না। বলছিলাম কি, তোর অন্য কাউকে পছন্দ হলে আমাকে বা তোর মাকে বলতে পারিস। তোর ইমরান ভাইকেও যদি তোর ভালো লাগে তাহলে আমরা সেভাবেই কথা বলতে পারি। তোর তো বয়স হয়েছে। বিয়ে তো হতেই হবে কারো না কারো সাথে। তাই বলছি।
মারিয়া উঠে দাঁড়ায়। তার হাতে মোবাইল। নিজের রুমের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে, – এসব কথা শুনতে আমার ভালো লাগে না বাবা। আমি এখন বিয়ে করতে রাজী না। সে কোন রাজ পুত্র হলেও আমি রাজী হবো না। তোমরা এখন এসব চিন্তা আমাকে নিয়ে না করলেই হয়।
বলছিলাম কি, মেয়েদের এই বয়সে বিয়ে না দিলে পরে আর ছেলেরা বিয়ে করতে চায় না। মেয়েদের শেষে বিয়ে হতে সমস্যা হয়।
মারীয়া বলে, – বাবা, আমার বিয়ের বিষয়টা আমাকে ভাবতে দেও। আর যেন এ নিয়ে আমাকে কিছু বলা না হয়। বলে সে রাগ দেখিয়ে তার রুমে চলে যায়। গিয়ে তার রুমের দরজা বেশ শব্দ করে লাগিয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আবার সেই একই ভাবে সবুজ প্রান্তরের দিকে তাকিয়ে ফোন করে ইমরানকে। কয়েকবার রিং হলেও ইমরান ধরেনি। অভিমান করার মত ভাব করে সে তার বিছানায় গিয়ে শুয়ে আবার মোবাইলের স্ক্রিনে ইমরানের নাম্বার দেখে। চোখের পলক না পড়তেই ফোন বেজে উঠে ইমরানের। ইমরানের ফোন দেখে তাড়াতাড়ি করে ফোন ধরে বলে, – খুব মজা করছো মনে হচ্ছে।
মজা করতে এসেছি যেহেতু মজা তো করবোই। তা ঘরে বসে তুমি কি করছো?
নাস্তা করলাম। এখন বিছানায় শুয়ে ভাবছি গান শুনবো। তুমি গান শুনতে পছন্দ করো না।
গান শুনি তবে মাঝে মধ্যে। এমন না যে গান না শুনলে ঘুম হয় না, তা কিন্তু না।
আমি একসময় গান শিখতাম। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর এসব আর বাবা করতে দেয় না।
বাহ, তাহলে তো শুনতে হবে একদিন। কিন্তু বন্ধ করলে কেন?
আরে আশে পাশের বাসায় মানুষ গুলো বেশী ধার্মিক। ওরা গান চর্চা করতে শুরু করলেই বাবাকে ডেকে নিয়ে গানের চর্চা বন্ধ করতে বলেন। এক বাড়িতে থাকতে গেলে আশে পাশের মানুষদের কথাও চিন্তা করে চলতে হয়। বাবা রাগ করে বললেন আর গান শিখতে হবে না। যা শিখেছি তাতেই যথেষ্ট। এরপর কথা ঘুরিয়ে জানতে চায়, কখন ফিরবে?
ফিরতে কয়টা বাজে বলতে পারি না। আমার উপরেও যেহেতু কিছু কাজের দায়িত্ব রয়েছে তাই সব কিছু শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। তবে রাত হবে শিউর। কেন?
না বলতে চাইছিলাম ফেরার সময় এদিকে নেমে বাসায় এলে শুনতাম তোমরা পিকনিকে কেমন আনন্দ করেছো।
ইমরান বলে, এই মারীয়া, সবাই ডাকছে। এখন রাখি। পারলে রাতে বাসায় গিয়ে ফোন দিবো। তার আগে সম্ভব হলে কল করবো, রাখি। বলেই ইমরান ফোন রাখে। মারিয়া ফোন তার বুকের মাঝখানে রেখে উপর দিকে তাকিয়ে গুনগুন করে গান করে আর ইমরানের কথা ভাবে।
(চলবে)……