Site icon দ্বিপ্রহর ডট কম

যশোর আইনজীবী সমিতির দুইটি ভবনেই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনে করোনা প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছেনা। দু’ভবনের প্রবেশ মুখের সামনে আজ পর্যন্ত কোনো হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। নেই কোনো হ্যান্ডস্যানিটাইজার।

আবার আইনজীবী থেকে শুরু করে শিক্ষানবিশ আইনজীবী, আইনজীবী সহকারীসহ মক্কেলরা মাস্ক বাদেই আনাগোনা করছেন সমিতির দু’ভবনেই। সে কারণে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

সম্প্রতি যশোরের দু’আইনজীবী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর বাইরেও অন্তত ১৫ জন রয়েছেন যারা করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এমতাবস্থায় আইনজীবীদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

গত বুধবার যশোরের আইনজীবী সমিতির এক ও দু’নম্বর ভবনে যেয়ে এই অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। চারতলাবিশিষ্ট এক নম্বর ভবনে রয়েছে ৮০টি কক্ষ। অডিটোরিয়াম, অফিস রুমসহ ছোট ছোট কক্ষে রয়েছে একাধিক আইনজীবীর চেম্বার। দু’নম্বর ভবনেও দেখা যায় একই পরিস্থিতি। অধিকাংশ রুমে মক্কেলসহ আইনজীবীদের গাদাগাদি বসে থাকতে দেখা যায়। সেখানে সামাজির দূরত্বের কোনো নিয়মই মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ মক্কেলের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

শরিফুল নামের এক মক্কেলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার বাড়ি মণিরামপুর উপজেলায়। তিনি জানান, আগে তিনি মাস্ক পড়েছিলেন। আইনজীবী সমিতির ভবনে এসে তা খুলে ব্যাগে রেখেছেন।

দ্বিতীয়তলায় ব্যক্তিগত চেম্বার রয়েছে সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুরের। তার রুমে অন্তত ১০ জন মক্কেলকে অবস্থান করতে দেখা যায় পরিদর্শনকালে। সাথে ছিলেন আরও তিনজন আইনজীবী ও দু’জন আইনজীবী সহকারী। সাধারণ আইনজীবীদের অভিযোগ দু’টি ভবনের বাথরুমগুলোও নিয়মিত পরিস্কার করা হয়না।

আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা যায়, যশোরে এখনো পর্যন্ত দু’জন আইনজীবী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা হলেন আবুল কায়েস ও এ কে এম হাসানুর রহমান আসাদ। তারা নিজ নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন আছেন। এর বাইরেও আরও ১০/১২ জন আইনজীবী রয়েছেন যারা করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। কেউ কেউ অসুস্থ্য শরীর নিয়ে সমিতির অফিসে আসছেন, আড্ডা দিচ্ছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আইনজীবী এ কে এম হাসানুর রহমান আসাদ বলেন, কয়েকদিন আগে তার জ্বর আসে। পরে তিনি সুস্থ্য হয়ে উঠেন। একই কথা জানান আইনজীবী আবুল কায়েসও। তারপরও তারা দু’জন একসাথে ২৮ জুন যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেয়ে করোনা পরীক্ষা করান। পহেলা জুন দু’জনের ফলাফল পজিটিভ আসে। বর্তমানে তারা ভালো আছেন বলে জানান।

আক্রান্ত আইনজীবীরা আরও জানান, সমিতির ভবনের প্রবেশদ্বারে বিধিনিষেধসহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা উচিত ছিল। যা হয়নি। এখনই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান তারা।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মাহাবুব আলম বাচ্চুর ছোট মেয়ে সুপ্রিয়া জানান, তার বাবা ১০ দিন ধরে অসুস্থ্য। করোনার বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাবার সেবা করতে যেয়ে নিজেও অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। বাবার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও সুপ্রিয়ার শ্বাসকষ্ট মোটেও কমছে না। তিনি তার পরিবারের জন্য দোয়া কামনা করেন।

যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল ইসলাম বলেন, এটা আমাদের ব্যর্থতা। প্রথম থেকেই বিষয়টি নিয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিৎ ছিল। সমিতির পক্ষ থেকে সে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অতি দ্রতই এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।

আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি খোন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুল বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যা দু:খজনক। এ বিষয়ে সাধারণ আইনজীবীদের অভিমত, ভার্চ্যুয়াল আদালত চলছে। ফলে আইনজীবী, শিক্ষানবিশ আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারীদের উপস্থিতি বেড়েছে। একইসাথে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মক্কেলদের আনাগোনা আগের থেকে অনেক গুণ বেড়েছে।

এর মাঝে আইনজীবীরাও আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে অসুস্থও রয়েছেন। সকলের মাঝেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় সমিতির দু’ভবনের প্রবেশ গেটে হাতধোয়ার ব্যবস্থা, হ্যান্ডস্যানিটাজার সরবরাহসহ প্রবেশকারীর তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে প্রবেশের ব্যবস্থা করা উচিৎ বলে তারা দাবি করেন। যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম ইদ্রিস আলী ও সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা চিন্তিত। অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Exit mobile version