আজ ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৪ তম জন্মদিন। জাতির পিতার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াতেই ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতার মতো গ্রামের সবুজ শ্যামল ছায়াশীতল পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন তিনি। আত্মীয় স্বজন ও নিকটজনদের কাছে পরিচিত হাসু নামে। শৈশব কৈশোর কেটেছে বাইগার নদীর ঢেউ আর পাখির কলকাকলিতে, মেঠো পথের আকাঁ-বাঁকা সৌন্দর্যে। দাদা-দাদি, মা আর আত্মীয় স্বজন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে যখন জাতির পিতাসহ পরিবারের বাকী সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তখন তিনি ও ছোটবোন শেখ রেহানা জার্মানি থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। পিতার মৃত্যুর পর শুরু নতুন সংগ্রাম।চেনা মুখ চেনা দেশ পাল্টে যায়, চেনা জীবন হয়ে উঠে বেদনার, দেশে ফিরতে বাধা, শুরু হয় অনিশ্চয়তার জীবন। ঠাঁই হয় ভারতে, ছোট বোন যান লন্ডনে। লন্ডনে তারা পিতার মৃত্যুর বিচারের দাবী তুলেন কিন্তু দেশে আসতে পারেন নি। দেশে আসতে বাধা দেয়া হয়, তবে তাঁর স্বদেশ ফেরা ঠেকানো সম্ভব হয়নি। ছয় বছর নির্বাসিত জীবন শেষ হয় ১৯৮১ সালে। ১৯৮১ সালের ১৪-১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি বলেছিলেন, “আমি ক্ষমতার জন্য রাজনীতিতে আসিনি, বাংলার মানুষের পাশে থেকে মু্ক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি এসেছি।” সমালোচকদের জবাবে বলেছিলেন, “রাজনীতি আমার রক্তে মেশানো।” দেশে ফেরার পরে থেকেই নিরলসভাবে দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করে যাচ্ছেন। গৃহবন্দী করা হয়, জেলে পাঠানো হয় অনৈতিকভাবে, কিন্তু কোন ঘাত প্রতিঘাত তাঁকে দমাতে পারেনি। ১৯ বার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়, বাংলার মানুষের ভালবাসায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। আঘাত আসলেও তিনি কখন মাথা নত করেননি। দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে দলকে সরকারে আনেন তিনি। দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করেন।
কিন্তু ষড়যন্ত্র কখনই পিছু ছাড়েনি, এতে অবশ্য তিনি কখনই বিচলিত নন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হারানো হলে দলের নেতাকর্মীদের উপর জোট সরকারের অত্যাচার নিযার্তন শুরু হয়। ২০০৪ সালের গ্রেনেড মেরে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। সে হামলায় দলের নেতাকর্মীদের মানববর্ম শেখ হাসিনাকে প্রাণে বাঁচালেও আওয়ামী লীগ মহিলা সম্পাদক আইভী রহমানসহ ২৪ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। দমে যাননি শেখ হাসিনা। বরাবরের মতোই শোককে শক্তিতে পরিণত করে জনগণের কল্যাণে নিজেকে রেখেছে অটল। নিজ মুখেই শেখ হাসিনা বলেছেন: “আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। বাবার মতো দেশের কল্যাণে আমিও রক্ত দিতে প্রস্তুত।”
জাতির পিতার মতোই জনগণই তাঁর ভালবাসা, শেষ ঠিকানা।
ধর্মীয় উগ্রতা, মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বিরামহীনভাবে লড়ে যাচ্ছেন তিনি।
আঞ্চলিক শান্তি ও ঐক্য বৃদ্ধিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি। ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমার বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করেছেন। সম্প্রীতির সঙ্গেই ভারতের সাথে সীমান্ত জটিলতা সমাধানসহ ৬৮ বছরের ছিটমহল সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানও করেছেন শেখ হাসিান। বিশ্বের অনেক দেশে এখনও সীমান্ত সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে এ জটিলতার সুরাহা করেছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়। আজ ছিটমহলবাসী স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে, তাদের উন্নয়নে সকল ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
আধুনিকতার ছোঁয়া বাংলাদেশ পেয়েছে তাঁরই নেতৃত্বে। আজকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ আর স্বপ্ন নয় বাস্তবতা, ঘরে বসে পৃথিবীর সব খবর পাচ্ছে এদেশের মানুষ, প্রয়োজনীয় কাজও সারছে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। এই নতুন তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনা।
তিনি তাঁর এক গ্রন্থে লিখেছেন,“যতোক্ষণ জীবন আছে, ততোক্ষণ চেষ্টা করে যাবো বাংলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে, তাতে যতো বাধাই আসুক না কেন।” মানুষকে নিঃস্বার্থ ভালবেসে তাদের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা, তাই তিনি উন্নয়নের কবি, গণতন্ত্রের নিরন্তর সারথী।
গণমানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন শেখ হাসিনা। সেজন্যই তিনি জননেত্রী, জনগণমননন্দিত নেত্রী, আমাদের আস্থার ঠিকানা, উন্নয়নের বাতিঘর। মানুষ বিশ্বাস করে শেখ হাসিনা যতোদিন বেঁচে থাকবেন দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাবেন। তিনি দেশের নেতৃত্বে থাকলে দেশ উন্নত সমৃদ্ধ হতে বেশী সময় হয়তো লাগবে না। আমরা তারঁ দীর্ঘায়ু কামনা করি। প্রাণপ্রিয় নেত্রীর জন্মদিনে জানাই অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।