জাপানে ৮ দিনব্যাপী প্রবাসী জাকির সালামের একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী হচ্ছে।
গত রবিবার বিকেলে টোকিওর শিবুইয়ার এক গ্যালারিতে ‘Future of Hope’ শীর্ষক এই একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী বেশ কজন জাপানী শিল্পরসিক ব্যাক্তিদের সাথে নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হয়।
শিল্পী জাকির সালামের আঁকা পনেরোটি শিল্পকর্ম এবং ফাইলে আশিটি ড্রইংয়ের বেশি চিত্রকর্ম রয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনীটি চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। (সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা)
ছবির বিষয় ভাবনা সম্পর্কে জাকির সালাম বলেন, চার পাপড়ির ক্লোভার ক্যানভাসে আশা জাগানীয়ার গল্প।
করনার মহামারীতে ভয়ঙ্কর ভন্ডামিতে মানব জাতিতে শ্রেষ্ঠত্বের চালাকিতে সব কিছু যখন স্থবির তখন আসার ভবিষৎ হিসাবে চার পাপড়ির ক্লোভার এর অন্তর্নিহিত কল্পনাকে আমি বেছে নেই। ভিন্ন ভিন্ন রঙের মানুষের বন্ধনেই ভবিষ্যতের আশা লুকায়িত আছে ।
‘ফিউচার অব হোপ আন্তর্জাতিক আর্ট ইভেন্ট আয়োজক হিসেবে ছিলেন, দূর্জয় বাংলাদেশ।‘
ছবির বিষয় ভাবনা কি, এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে জাকির সালাম বলেন, চার পাপড়ির ক্লোভার ক্যানভাসে আশা জাগানীয়ার গল্প।
করনার মহামারীতে ভয়ঙ্কর ভন্ডামিতে মানব জাতিতে শ্রেষ্ঠত্বের চালাকিতে সব কিছু যখন স্থবিরতখন আসার ভবিষৎ হিসাবে চার পাপড়ির ক্লোভার এর অন্তর্নিহিত কল্পনাকে আমি বেছে নেই। ভিন্ন ভিন্ন রঙের মানুষের বন্ধনেই ভবিষ্যতের আশা লুকাইতো আছে
এখন পৃথিবীতে শুধু মাত্র ট্রাম্প কার্ড আর diamond ♦️ কার্ড বাকি আছে। হার্ট আর ক্লোভারকার্ড হারিয়ে গেছে। আর আছে জোকার কার্ড!!
হার্ট আর ক্লোভার কে ফিরিয়ে আনা আশা জাগানিয়া শিল্পকর্ম আঁকার তীব্র বাসনা থেকে একশোর উপর ড্রয়িং ebong স্কেচ করে এই শিল্পকর্ম গুলো আঁকা শুরু করি, হাতের বন্ধনটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্ব পায়, মানব মানবীর স্পোরশো অনেক সম্যসার
সমাধান করতে পারে। প্রেমিক প্রেমিকার, পিতা-মাতা সন্তানের, সুস্থ অসুস্থ সকলের হাতের বন্ধন দৃশ্যত অদৃশ্যত।
এর জন্য আমাকে অনেক রকম ভাবে ড্রয়িং এবং স্কেচ করে কল্পনার সাথে বাস্তবের মেল্বন্ধন করতে হয়েছে।
শিল্পকর্মের উপকরণ গুলো বিষয়ে বস্তুর সাথে মিল রেখে নির্বাচন করেছি। জাপানীস স্বর্ণেরপাতা, রুপার পাতা, দস্তার পাতা, টিন পাতা, অ্যালুমিনিয়ামের পাতা, এমিরাল্ড পাথরের লাপিস লাজুলি পাথরের গুঁড়া, বিভিন্ন ধরণের পাথরের গুঁড়া, বিশেষ ভাবে তৈরী জেলাটিন আঠার সাথে মিশিয়ে কাগজ ক্যানভাস কাঠের প্যানেল এর উপর আঁকা হয়েছে।
মোটা দাগে আমার বক্তব্য হলো: মহামারীর মহাদুর্যোগে, যুগ যুগের ভয়ঙ্কর ভণ্ডামির, সময় অসময়ের সন্ধিক্ষণে, ক্ষনিকের প্রেরণা-প্রেয়সীর হাতে, সন্তানের অস্তিত্বে , পিতা-মাতার আবেগে, আপন পর সকলের ভরসার ভারহীন স্পর্শে – হাতে হাত, একই হাতে একতা, ভাবনার গহীনে, গহন অরণ্যে, অন্তরে অন্তরে আন্তরিকতার অন্তে, লাল সূর্য্যের গোলাকার সম্ভাষণই হলো আশা ,আমার বেঁচে থাকা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অধ্যাপক আকিরা ইয়ামামোতো জাপানের সাথে বাংলা ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ওকাকুরা তেনসিন এক ভূমিকার কথা চমৎকারভাবে বলেন। জাপানের কলাশিল্পে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি চির স্মরণীয়। বহির্বিশ্বে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তার কালজয়ী পুস্তক The Book Of Tea এর জন্যে।
প্রবাসী লেখক ও গবেষক প্রবীর বিকাশ সরকার বাংগালির সাথে জাপানের সম্পর্ক নিয়ে বক্তব্য রাখেন। ওকাকুরার আদর্শে বাংলার বিপ্লববাদকে যেমন ওকাকুরা প্রাণ দিয়েছিলেন তেমনি বাংলার চিত্রকলার নবজাগরণের নায়কদের চিন্তাভাবনাকেও তার ভাবধারা পরিপুষ্টি দান করেছিলো। ওকাকুরার উদ্যোগে জাপানের টাইকান প্রমুখ বিখ্যাত কয়েকজন শিল্পী এদেশে এসে চিত্রচর্চা শুরু করেন ; এইভাবে জাপানের শিল্পশৈলীর সাথে ভারতীয় বাঙালি শিল্পীর পরিচয় ঘটে।
প্রবাসীদের পক্ষ থেকে মোতালেব শাহ আইয়ুব কবিতা পড়েন, ঢাকা চারুকলার প্রাক্তন ছাত্র সলিমুল্লাহ কাজল রকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীর্ঘ কবিতা “দূই বিঘা জমি”আবৃতি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। ফটো জার্নালিস্ট খন্দকার আনিস, সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হক, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আইটি বিশেষজ্ঞ কৌশিক সেন চিত্রকর জাকির সালামকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান।
জাকির সালাম করোনাকালীন দূর্যোগে তার প্রদর্শনীতে উপস্থিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
করোনা ভাইরাসের সাথে আমাদের এখনও লড়াই চলছে।আমাদের সামনে এখন ‘নতুন স্বাভাবিকতায়’। জীবন থেমে থাকার নয়। ধ্বংসের পাহাড় ডিঙিয়ে মানুষ উঠে দাঁড়ায়, আমরাও দাঁড়াচ্ছি। কোলাহলের নগর আবার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। এ চলায় আমরা আরও সহমর্মী হব। জীবনের জয়গান গেয়ে সমাজ, সভ্যতাকে এগিয়ে নেব সেটাই হোক 𝔽𝕦𝕥𝕦𝕣𝕖 𝕠𝕗 ℍ𝕠𝕡𝕖.
জাকির সালাম বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং থেকে ২০০০ সালে স্নাতক ও ২০০২ সালে মাস্টার্স করেন। ২০০৯ সালে মনোবুকাশ মনোবসুস্কলারশিপ নিয়ে জাপানে আসেন এবং ২০১২ সালে
Tokyo University of Art থেকে Masters in oil printing, materials and technique এ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি জাপান প্রবাসী।
চারুকলার বি এফ এ, এম এফ এ দুটোতেই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে তুখোরছাত্র হিসেবে ২০০৫ সালে Prime Ministers Gold Medal Award ও Hon’s এ ভালো ফলাফলের জন্য Zainul Abedin memorial Award পান। দেশে ও প্রবাসে তার অসংখ্য এককও গ্রুপ প্রদর্শনী হয়েছে, প্রচুর ওয়ার্কশপের অভিজ্ঞতা তার জ্ঞান ভান্ডারে।
শিবুইয়া স্টেশন সংলগ্ন শিবুইয়া ২-১৯-১৫
ঠিকানার সদ্য নির্মিত মিয়ামাসু বিল্ডিং এর ৩০১-৩০২ নং কক্ষের বিশাল গ্যালারীটি।
লেখা: কাজী ইনসানুল হক