Site icon দ্বিপ্রহর ডট কম

হঠাৎ অসুস্থতায় জরুরি চিকিৎসাঃ তিন – সর্প দংশন

সাপে কামড়ালে জরুরী ভিত্তিতে করণীয় ও জ্ঞাতব্য-

১. অভয় দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির ভীতি দূর করতে হবে।

২. সাপ যাতে পর পর অনেককে কামড়াতে না পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৩. ভাল করে ক্ষতস্থান সাবান ও পানি দিয়ে ধুতে হবে।

৪. কোন ভাঙ্গা দাঁত বা অন্য কোন অংশ ভিতরে আছে কি না পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

৫. নিরাপদ দূরত্বে থেকে যদি সম্ভব হয়, তবে পরবর্তীতে বর্ণনা করা যায় এমনভাবে সাপকে পর্যবেক্ষণ করা। কারণ, সব সাপ বিষাক্ত হয় না। সাপের বর্ণনা শুনে সেটা বিষাক্ত সাপ কি না তা সনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে।

৬. ক্ষতস্থানের আশেপাশে রিং থাকলে তা খুলে ফেলা। এটি কোন সংস্কারের জন্য নয়, কারণ পরে ক্ষতস্থান ফুলে গিয়ে রক্ত চলাচলে অসুবিধা হতে পারে এবং খুলতে জটিলতা হতে পারে সেটা ভেবেই খুলে রাখা। 

৭. মাঝেমাঝে ক্ষতস্থানের অনুভুতি পরীক্ষা করা এবং রক্ত চলাচলের অসুবিধার জন্যে তাগা, ডোরা বা বাঁধনের বাইরের অংশে বর্ণের কোন পরিবর্তণ হচ্ছে কি না তা লক্ষ্য রাখা।

৮. ক্ষতস্থানের নড়াচড়া সীমিত রাখতে স্পিলিন্ট বেঁধে রাখা। কোন শক্ত কাঠের টুকরা বা বাঁশের চটাকে ক্ষতস্থানের সাথে কাপড় বা রশি দিয়ে হালকাভাবে বেঁধে স্পিলিন্ট হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৯. ক্ষতস্থানের উপরের দিকে হালকা টাইট করে তাগা বা ডোরা (টরনিকুয়েট) বেঁধে রাখা এবং ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পরপর তা ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের জন্যে খুলে দেওয়া, যাতে রক্ত চলাচল বন্দ হয়ে শরীর পচে না যায় সেটা রোধ করা।

১০. ক্ষতস্থান হৃতপিন্ডের লেভেল থেকে নিচের দিকে রাখা।

সাপে কামড়ালে যে বিষয়গুলির ব্যাপারে সাবধান থাকা জরুরীঃ

১. কখনোই ক্ষতস্থান কাটবে না বা শুষবে না, এতে ইনফেকসন হতে পারে।

২. কখনোই ক্ষতস্থানে বরফ লাগাবে না, এতে ফ্রস্ট বাইট হতে পারে।

৩. কখনোই ক্ষতস্থানে ইলেক্ট্রিক সক দেবে না, এতে কোন লাভ নাই।

৪. কখনোই ক্ষতস্থান টাইট করে তাগা (টরনিকুয়েট) বাঁধবে না।

বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ ক্ষতস্থানের উপরের দিকে যে তাগা বা ডোরা (টরনিকুয়েট) বাঁধা হয় তা হালকা টাইট করে বাঁধতে হবে, খুব টাইট করে বাঁধা যাবে না। খুব টাইট করে বাঁধলে রক্ত চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে শরীর পচে যেতে পারে। মাত্র কয়েক মিনিট রক্ত চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকলেই শরীরের ঐ অংশ পচে যেতে পারে। এতে শরীরের ঐ অংশ কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না। শক্ত করে বেঁধে রাখলে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন হওয়ায় রোগী ব্যথা সহ্য করতে না পেরে খুবই চিৎকার করতে থাকে, অনেকের মনে হতে পারে এটি বিষের জ্বালায়। কিন্তু বিষয়টি মোটেও তা নয়। নির্বিষ সাপে কামড়ানোর পরেও এই বাঁধনের ক্রুটির কারণে অনেক রোগীর অঙ্গহানী হয়ে যায় বা সেপটিসেমিয়া ডেভলপ করে মৃত্যু বরণ করে। এ ধরণের মৃত্যুর কারণ মানুষের অজ্ঞতা, সাপ নয়।  ডোরা (টরনিকুয়েট) বাঁধা অবস্থায় ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পরপর তা ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের জন্যে খুলে দেওয়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে যতোটুকু বিষ ক্ষতস্থান থেকে শরীরের অন্যান্য যায়গায় প্রবাহিত হয়, তাকে নিস্ক্রিয় করার ক্ষমতা শরীরের আছে।

সাপের ফুসফুস খুব দূর্বল বলে তারা তরল জাতীয় কোনকিছু টেনে ভিতরে নিতে পারে না। তরল কোনকিছুকে টেনে ভিতরে নিতে হলে বাইরের বায়ুমন্ডলের চাপের তুলনায় ভিতরের বায়ুচাপ কম থাকতে হয়। বায়ুচাপের এই পার্থক্য তৈরী করে ফুসফুস। সাপের ফুসফুস এতোটাই দূর্বল যে, সে এই পার্থক্য তৈরী করতে পারে না। এজন্য সাপের পক্ষে বিষ টেনে নেওয়া অসম্ভব। মনষা পূজার জন্য সাপের উদ্দেশ্যে যে দুধ-কলা রাখা হয়, সে দুধ টেনে ভিতরে নেবার ক্ষমতাও সাপের নেই। ঐ দুধ বা কলা সাপে খায় না, খায় মানুষ।

ওঝা বা গুণীনরা মন্ত্র পড়ে ঝাড়ফুক করে বিষ নামাতে পারে না। সেটি সম্ভব নয়। শতকরা নম্বই ভাগেরও বেশী সাপ বিষধর নয়। ফলে যেগুলি গুণীনেরা বিষ নামিয়ে ভাল করে সেগুলি আসলে নির্বীষ সাপের দংশন। সিনেমাতে দেখা যায় বীন বাজিয়ে সাপ হাজির করে সাপকে দিয়ে বিষ টেনে বের করার দৃশ্য। এটি বাস্তবে হওয়া সম্ভব নয়। বেহুলা-লক্ষীন্দর মাইথোলজির উপরে ভিত্তি করে ওগুলো তৈরি।

কোনকিছু মনে রাখা বা স্মরণে রাখার বিষয়টি ব্রেনের গ্রে মেটার নামক একটা পদার্থ আছে তার উপরে নির্ভর করে। সাপের গ্রে মেটার খুব কম এজন্য সাপের স্মরণ-শক্তি খুব একটা প্রখর নয়। ফলে অনেক যায়গায় প্রচলিত আছে, কোন সাপকে আংশিক আঘাৎ করলে ঐ সাপটি আঘাৎ দাতাকে অনুস্মরণ করে এবং বাগে পেলে কামড়ে দেয়; ধারণাটি সঠিক নয়। এভাবে সাপ এবং সাপের দংশন বিষয়ক যতো সংস্কারমূলক গল্প আছে তার কোনটিই সত্যি বলে আমার জানা নেই। সাপ খুব দ্রুত সবকিছু ভুলে যায়।  

(যুক্তিযুক্তের লিখিত এবং অন্বেষা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘হঠাৎ অসুস্থতায় জরুরি চিকিৎসা’ গ্রন্থ থেকে সঙ্কলিত)   

Exit mobile version