প্রচন্ড তাপ যেমন আগুন, কেমিক্যালস, ইলেকট্রিসিটি বা রেডিয়েশনের ফলে শরীর পুড়ে যাওয়া কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে , যেমন-
১. পোড়ার ধরণ (কতখানি পুড়েছে)
২. পোড়ার কারণ ( কেমিক্যাল, ইলেকট্রিসিটি, আগুন)
৩. রোগীর বয়স (যুবক বা বৃদ্ধ)
৪. পোড়ার স্থান বা জায়গা (শরীরের কোন জায়গা পুড়েছে)
৫. পোড়ার গভীরতা (কতখানি গভীর)
শ্রেণি বিভাগ-
১. উপরের অংশ পোড়া (১ম ডিগ্রী বার্ণ): সুপারফিসিয়াল বার্ণ
সুপারফিসিয়াল বার্ণ হলো চামড়ার উপরের অংশ পোড়া। এই পোড়ায় চামড়া লাল হয়ে যায় এবং খুব যন্ত্রণা করে। যেমন- ফোটানো পানির গরম বাষ্প বা গরম আয়রণ গায়ে লেগে এ ধরণের বার্ণ হতে পারে।
২. আংশিক পোড়া (২য় ডিগ্রী বার্ণ): পার্সিয়াল বার্ণ
পার্সিয়াল বার্ণ এ চামড়ার এপিডার্মিস এবং ডার্মিস লেয়ারের ক্ষতি হয়। এতে চামড়া সম্পূর্ণ পুড়ে যায় তবে মাংশ পর্যন্ত পৌঁছায় না।
৩. পুরোপুরি পোড়া ( ৩য় ডিগ্রী বার্র্ণ): ফুল থিকনেস বার্ণ
ফুল থিকনেস বার্ণ এ সমস্ত চামড়া সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাথে নিচের ট্যিসুরও ভয়ঙ্কর ক্ষতি করে। মাংশ, হাড় ইত্যাদি সবকিছুই পুড়ে যাওয়া এই প্রকারের মধ্যে পড়ে। আক্রান্ত স্থান কালো রঙ ধারণ করে এবং গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে।
প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা-
১. কমপক্ষে ২০ মিনিট ধরে পানি ঢালতে হবে
২. নন-স্টিক ড্রেসিং দিয়ে ঢেকে দিতে হবে
৩. শক থাকলে তার চিকিৎসা করতে হবে
কখনো করবেন না-
১. লোশন বা তৈলাক্ত জিনিস লাগানো
২. ফোসকা ফুটো করা
৩. সরাসরি বরফ লাগানো
৪. পোড়ার সাথে পুরো গেঁথে আছে এমন কাপড় আলাদা করা
৫. পোড়া স্থান পানি ঢেলে ছাড়া অন্যভাবে পরিষ্কার করা
রাসায়নকি পদার্থে পুড়ে যাওয়া (Chemical Burn)
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্যে ব্যবহৃত দ্রব্য যেমন ব্লিচ, ড্রেইন ক্লিনার্স, টয়লেট ক্লিনার্স বোল ক্লিনার্স, পেইন্ট স্ট্রিপার্স এবং ক্ষেত বা বাগানের পোকা দমনের জন্য ব্যাবহৃত বিভিন্ন রকমের কেমিক্যাল কোন কারণে শরীরে লেগে গেলে শরীরের টিস্যু ধ্বংস হয়। এ ধরণের দ্রব্য খেয়ে ফেললে বা পান করলে মৃত্যুও হতে পারে।
প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা-
১. বিষাক্ত পদার্থ যতক্ষণ শরীরে লেগে থাকে ততক্ষণ চামড়া অনবরত পুড়তে থাকে। সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব পানি ঢেলে শরীর থেকে কেমিক্যাল দূর করতে হবে এবং হাসপাতালে পাঠানোর ব্যাবস্থা করতে হবে।
২. ক্ষতস্থানে প্রচুর পানি ঢালতে হবে। পানি দিয়ে ধুয়ে বিষাক্ত পদার্থ তুলে ফেলতে হবে।
৩. পোড়া পোশাক খুব দ্রুত এবং সাবধানে খুলে ফেলতে হবে যেন ঘষা না লাগে।
৪. কেমিক্যালের কারণে চোখ পুড়লে কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধরে আক্রান্ত চোখে পানি দিতে হবে।
বৈদ্যুতিক পোড়া (Electric Burn)
১. এটা অনেক মারাত্নক হয়ে থাকে। ইলেকট্রিক বার্ণ নির্ভর করে এর ধরণ অর্থাৎ ভোল্টেজ এবং সময়ের উপর অর্থ্যাৎ কতক্ষণ ধরে ঘটনাটা ঘটছে।
২. এটা প্রায়ই গভীর হয়ে থাকে এবং শরীরের ভেতর ও বাহির উভয় দিকই আক্রান্ত করে থাকে
৩. শরীরের টিস্যুগুলো মারাত্নক ড্যামেজ হয়ে যায়
লক্ষণ ও উপসর্গ –
১. অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে
২. অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে
৩. চামড়া পুড়ে যায়
৪. শ্বাসের সমস্যা হয়
৫. পাল্স দুর্বল, অনিয়মিত এবং অনুপস্থিত থাকতে পারে
সতর্কতা-
১. ব্যাবস্থা গ্রহণের পুর্বে বিদ্যুৎ বন্ধ আছে কি না লক্ষ্য করতে হবে
২. নিশ্চিত হবার পূর্বে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে
প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা-
১. ক্ষতস্থানে পানি ঢালতে হবে।
২. হাত-পা সহ সারা শরীর ম্যসেজ করতে হবে
৩. অবস্থা খারাপ মনে হলে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে হবে।
(যুক্তিযুক্তের লিখিত এবং অন্বেষা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘হঠাৎ অসুস্থতায় জরুরি চিকিৎসা’ গ্রন্থ থেকে সঙ্কলিত)