বাংলাদেশ লেডিস সোসাইটি জাপানের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করেছে সংগঠনটি।
গত ২২ অক্টোবর রবিবার বিকালে সাইতামা প্রিফেকচারের মিসাতো শহরের তাকাসুচিকু বুনকা সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে এক আঢ়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে উপস্থিত দর্শকরা সংগঠনটিকে অভিনন্দন জানিয়ে তাদের বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বাংলাদেশ লেডিস সোসাইটি জাপান এর প্রতি তাদের আকুন্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে তাঁরা আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সকলের বক্তব্যের পর প্রজেক্টরের মাধ্যমে সংগঠনটির এ পর্যন্ত গৃহীত বিভিন্ন জনকল্যানমূলক কর্মকান্ডের একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রদর্শন করা হয়। তারা বাংলাদেশের দুস্থ নারীদের ব্যাটারিচালিত রিক্সা প্রদান, গৃহহীন নারীদের ঘর প্রদান সহ বিভিন্ন সহায়তামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশের তাঁতীদের বোনা শাড়ি জাপানের বাজারে তারা প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রবাসীরাও তাদের এই কর্মসূচীতে সহায়তা করে দেশীয় শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখছেন।
সংগঠনটির সভাপতি জেসমিন সুলতানা ঠাকুর তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে হেমন্তের বিকেলে উপস্থিত সকলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি সংগঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে বলেন, নারী সচেতনতা বৃদ্ধি ও নারীর ক্ষমতায়নে তারা কাজ করে চলেছেন। সোশ্যাল বিজনেসের মাধ্যমে তারা লব্ধ অর্থ বাংলাদেশের তাঁতীদের হাতে তুলে দিয়ে তাদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন । তাদের ভবিৎষত পরিকল্পনার মধ্যে দেশের মেধাবী ছাত্রীদের মধ্যে বৃত্তি প্রদান করাও রয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
জেসমিন সুলতানা আরও বলেন, সকল নারীদেরকে তাদের কাজে উৎসাহ প্রদান করুন। অন্ততঃ তাদের নিরুৎসাহিত করা থেকে বিরত থাকুন। পরিশেষে তিনি অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সহায়তা করায় বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধান অতিথি রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দীন আহমেদ মঞ্চে আসন গ্রহণ করার পর, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা তিনজন নারীকে সংগঠনটি সম্মাননা প্রদান করে। প্রথমে বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জাপানি জনমত টানতে ভূমিকা পালন করা অধ্যাপক নারা’র স্ত্রী নারা আকিকো’র হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। মিসেস আকিকো এ সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তাঁর বাংলাদেশে থাকার অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি বলেন বাংলাদেশের মানুষের আন্তরিকতা কখনো ভোলার নয়। তার ছেলে এক সময় বাংলাদেশী শিশুদের মত অনর্গল বাংলা বলতে পারতো। এখন সেই ছেলের বয়স ৫০ ছাড়িয়ে গেছে তবে দুর্ভাগ্যক্রমে সে বাংলা একদম ভুলে গেছে। আকিকো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার স্বামী বাংলাদেশের পক্ষ নেওয়ায় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে কালোতালিকাভুক্ত করেছিলো।
নারা আকিকোর হাতে সম্মাননা তুলে দেশ রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
সাহিত্য এবং নিবেদিত মা হিসেবে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয় রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী মিসেস শাহীনা আক্তারকে। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের নারীরা এখন অনেক এগিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো বলিষ্ঠ নারী নেতৃত্ব বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনেক দূর। শাহীনা আক্তারের হাতে সম্মাননা তুলে দেন সংগঠনের উপদেষ্টা মুনসী রোকেয়া সুলতানা।
নারী উদ্যোগতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্যে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয় সুপ্রভা ফ্যাশন হাউজের কর্নধার নদী সিনা’কে। তিনি তার বক্তব্যের শুরুতে কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি এ পর্যন্ত আসতে তার দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার কিছুটা স্মৃতিচারণ করেন। পাশাপাশি ২০১৭ সাল থেকেই সংগঠনের সভাপতি জেসমিন সুলতানার নানান সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। নদী সিনার হাতে সম্মাননা তুলে দেন সংগঠনের সভাপতি জেসমিন সুলতানা।
রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যের শুরুতে বিদ্রোহী কবি নজরুলের “নারী” কবিতাটি পাঠ করে বাংলাদেশের উন্নয়নে নারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন ২০২৬ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। ২০৪০ সাল উচ্চআয়ের দেশে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিলো মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে আবৃতি, গান ও নাচ পরিবেশন করা হয়।
সবশেষে ছিলো র্যাফেল ড্র। সেখানে অন্যান্য আকর্ষনীয় পুরস্কারগুলির মধ্যে প্রথম পুরস্কার ছিলো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সৌজন্যে নারিতা-ঢাকা-নারিতা’র একটি বিমান টিকেট। দ্বিতীয় পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হয় আইসোডো কসমেটিক | এছাড়া সর্বমোট ১০টি আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়া হয় | এরপর অতিথিদেরকে আপ্যায়নের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।সমাপনী বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক সুরাইয়া তাসনুভা
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়েছিলো।