আশির আহমেদ: ২০১১ সালে জাপানের উত্তরাঞ্চলে ৎসুনামি আর ভূমিকম্পের পর আলাদা এই মন্ত্রণালয়টি তৈরি হয়। ওনাদের কাজ হলো তোহকু অঞ্চলকে পুনর্গঠন করা। মাত্র ছয় মাসের মাথায় তোহকুর অবকাঠামো পরিকাঠামো চেহারা সুরত রিসেট করে দিলেন। বিদ্যুৎ আসলো, পানি আসলো, ঝকঝকে রাস্তা ঘাট হলো।
পুনর্গঠন মানে শুধু অবকাঠামো রিসেট করা নয়। মানসিক অবস্থা ও রিসেট করতে হবে। এটা কিভাবে করবে? বুদ্ধি চাই, গবেষণা চাই। মানুষের মন কখন ভালো হয়, কখন খারাপ হয়, খারাপ অবস্থা থেকে কিভাবে ভালো অবস্থায় নেয়া যায়- বিশাল বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষকদের ডাক পড়লো। ২০১১ থেকে ২০১৬ – এই পাঁচ বছরে অনেকটা উন্নতি হয়েছে। মানসিক ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিয়ে জীবন যাপন শুরু করেছে। মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসা শুরু করেছে। মন্ত্রণালয়টির প্রতি মানুষের কৃতজ্ঞতার শেষ নাই।
২০১৭ সালের ২৫শে এপ্রিলের কথা। তখন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন জনাব ইমামুরা নামক একজন মন্ত্রী। উনি এক সেমিনারে তোহকু পুনর্গঠনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, পুনর্গঠনে কত টাকা খরচ হলো এসব হিসাব কিতাব দিলেন। ২৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন। এই টাকার অংক বলতে গিয়ে মুখ থেকে ফস করে একটা অসমীচীন বাক্য বের হয়ে গেল।
“ভূমিকম্প/ৎসুনামি তোহকু তে হওয়াতে ভালো হয়েছে, এটা যদি টোকিও তে হতো- ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও বাড়তো, পুনর্গঠনে আরো টাকা খরচ হতো।”
উনি যা বোঝাতে চেয়েছিলেন, তা হয়তো ব্যাখ্যা দিতে পারতেন।
“তোহকু তে হওয়াতে ভালো হয়েছে” – এই বাক্যটির ব্যাখ্যা দিলেন গবেষক এবং সাংবাদিকরা।
পুনর্গঠন বলতে উনি শুধু অর্থনৈতিক দিকটাই মগজে ঢুকিয়েছেন। মানুষের মানসিক ক্ষতিটা ওনার মগজে ঢুকেনি। এমন শিক্ষায় শিক্ষিত মগজ এই মন্ত্রণালয় এর যোগ্য নয়।
ব্যাস।
কয়েক মিনিটের মধ্যে সারা দেশে ক্ষোভের ঝড় উঠলো। প্রধানমন্ত্রী আবে এক ডিনার পার্টিতে ছিলেন। ওনার কানে যাওয়া মাত্রই – উনি ব্যাপারটির গভীরতা আঁচ করলেন। এই মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন উনিই। সুতরাং এই বক্তব্যের দায় ভার ওনাকেই নিতে হবে। জনগণের নির্দেশক আঙ্গুল (তর্জনি) খানা ওনার দিকে আসবে।
সাংবাদিক গন ডিনার পার্টিতেই ওনার মন্তব্য চাইলেন।
“I, as the prime minister, bear the responsibility for appointing him. I apologize to the people for this result from the bottom of my heart,”
“ওনাকে মন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার দায়ভার প্রধানমন্ত্রীর। তার মানে আমার। আমি আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইছি।” আর ডিনার পার্টি থেকে বের হয়েই মন্ত্রী কে লাল কার্ড দেখালেন।
রাত পোহাতেই গরম খবর। মন্ত্রীর পদত্যাগ।
এখান থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে:
(১) মন্ত্রীর মগজ শুধু অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়েই ব্যস্ত ছিল। মানসিক পুনর্গঠনটি হয়তো প্রায়োরিটি কম ছিল। মগজে যা গাঁথা থাকে, মুখ ফসকে তাই বেরিয়ে পড়ে। সুতরাং দুধে চণা পড়ার মত মস্তিষ্কের একটা সেল ও যদি এরকম চিন্তা ভাবনা করে থাকে- এই মন্ত্রণালয় তাঁর জন্য নয়।
(২) দায় শুধু যে বলেছে তাঁর নয়, যে তাকে দায়িত্ব দিয়েছে তাঁর ও।
(৩) সিদ্ধান্ত নিতে হয় দ্রুত। জনগণ ফোঁসফোঁস করার আগেই।