ব্যাপক প্রচার এবং নাটকীয়তার কারণে চলতি নারী বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে বেশ কয়েকটি দেশে দারুণ উৎসাহ তৈরি হয়েছে। টিভি দর্শকের সংখ্যা এবার নজিরবিহীন। বিশেষ করে ব্রাজিল, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনে রেকর্ড সংখ্যক দর্শক এবার নারী বিশ্বকাপ দেখছে।
তবে, এখনও পুরুষদের বিশ্বকাপের দর্শক অনেক বেশি। ফিফার দেওয়া হিসাবে, গত বছর বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ টিভিতে দেখেছে ১১২ কোটি মানুষ। সে তুলনায় ২০১৫ সালের নারী বিশ্বকাপের ফাইনালের দর্শক ছিল ছয় কোটির কিছু বেশি।
কিন্তু কিছু ব্যাপারে এবার নারীদের ফুটবল নজর কাড়ছে, প্রশংসা কুড়াচ্ছে।
গত বছর বিশ্বকাপে মাঠে গিয়ে যাদের ম্যাচ দেখতে হয়েছে, তাদের পকেট ভর্তি করে রুশ রুবল রাখতে হয়েছে।
ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়ার ফাইনাল ম্যাচে মাঠে সবচেয়ে ভালো জায়গার টিকেটের দাম ছিল ৬৬০,০০০ রুবল (১,০৪৪ মার্কিন ডলার)।
কিন্তু ফ্রান্সের লিঁওতে ৭ই জুলাই নারী বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকেটের দাম মাত্র ৯৫ ডলার, অর্থাৎ পুরুষদের ফাইনালের চেয়ে ১০ গুণ কম।
নারী বিশ্বকাপে দর্শকরা এবার ১০ ডলারেও টিকেট কিনে খেলা দেখেছেন।
ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড মার্তা এবারের নারী বিশ্বকাপে ১৯টি ম্যাচে ১৭টি গোল করেছেন। একটি বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে এত গোল এখন পর্যন্ত নারী বা পুরুষ কেউই কোনো বিশ্বকাপেই করেনি।
এখন পর্যন্ত নারীদের বিশ্বকাপে ম্যাচ প্রতি গড়ে ২.৬৯টি গোল হয়েছে। সেই তুলনায় পুরুষদের বিশ্বকাপে ম্যাচ প্রতি গোল হয়েছে ২.৬৪ টি।
শুধু বিশ্বকাপ নয়, নারীদের শীর্ষ লিগগুলোতেও পুরুষ লিগগুলোর চেয়ে বেশি গোল হচ্ছে। যেমন, ইংল্যান্ডে নারীদের সুপার লিগে প্রতি ম্যাচে গড়ে গোল হয়েছে ৩.০৫টি, যেখানে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ প্রতি গোলের সংখ্যা ছিল ২.৭৬।
এটা বলা ঠিক হবেনা যে নারীরা ফুটবলের মাঠে ফেরেশতার মতো আচরণ করেন। যেমন, গত রোববার ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচে টিভি রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্যামেরুনের মেয়েরা মাঠ থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
কিন্তু পুরুষদের চেয়ে বিধি মেনে চলার প্রবণতা নারী ফুটবলারদের অনেক বেশি।
২০১৫ সালের নারী বিশ্বকাপে মোট ১১৫ বার হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছিল। সেই তুলনায় রাশিয়ায় গত বছরের বিশ্বকাপে ২১৯ বার হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে।
জেনি ফ্রামটন, যিনি ৩০ বছর ধরে পুরুষ এবং নারীদের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন, মনে করেন পুরুষ ফুটবলে ”প্রতারণা”র ঘটনা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। তিনি বলছেন, “পয়সা এবং পুরুষ তারকাদের মধ্যে অহংবোধের কারণেই মূলত এটা বেশি দেখা যায়।”
তবে, ইংল্যান্ডের ফুটবল কর্তৃপক্ষ এখন বলছে নারীদের ফুটবলেও এখন হলুদ কার্ড দেখানোর সংখ্যা বাড়ছে।
২০১৬-১৭ সালে এই সংখ্যা যেখানে ছিল ম্যাচ প্রতি ১.৩, পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১.৫ এবং গত বছর প্রতি ম্যাচে গড়ে ১.৬টি হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে।
ফ্রামটন মনে করেন, নারীদের ফুটবল যত বেশি পেশাদারি হবে, জনপ্রিয় হবে, নিয়ম ভাঙ্গার প্রবণতাও তত বাড়বে।
পুরুষদের বিশ্বকাপের শিরোপা এখন পর্যন্ত দুটো মহাদেশের (ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকা) মাত্র ৮টি দেশের কাছে গেছে।
নারী বিশ্বকপের ইতিহাস বেশি দিনের নয়, কিন্তু এর মধ্যেই তিনটি মহাদেশের (উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া) চারটি দেশ (যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নরওয়ে, জাপান) এটি জিতেছে।
সম্ভাব্য বিজয়ীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে বিশ্ব জুড়ে নারী বিশ্বকাপ নিয়ে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।
১৯৯০ সালে ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব ২১ দলের সাবেক খেলোয়াড় জাস্টিন ফাশানু ছিলেন প্রথম ব্রিটিশ ফুটবলার যিনি নিজেকে সমকামী বলে জানান দিয়েছিলেন।
সাবেক জার্মান ফুটবলার টমাস হিটসপার্জার, যিনি ২০১৪ সালে অবসর নেন, বলেন, শীর্ষ লিগে নিজেকে সমকামী বলে পরিচয় দেওয়া এখন সহজ কাজ নয়। “এখনও অনেক দূর যেতে হবে।”
সেই তুলনায়, নারীদের লিগ অনেক বেশি উদার।
যুক্তরাষ্ট্রের তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী দলের ফরোয়ার্ড মেগান রাপিনো নিজেকে খোলাখুলি সমকামী বলে পরিচয় দেন। তার সঙ্গীর সাথে নগ্ন ছবি তুলে তা প্রকাশও করেছেন তিনি।