1. mdabirhossain.6894@gmail.com : Abir Hossain : Abir Hossain
  2. info@diprohor.com : admin :
  3. bappi.kusht@gmail.com : Bappi Hossain : Bappi Hossain
  4. biplob.ice@gmail.com : Md Biplob Hossain : Md Biplob Hossain
  5. enamulkhanbd@yahoo.com : Enamul Khan : Enamul Khan
  6. mahedi988.bd@gmail.com : Mahedi Hasan : Mahedi Hasan
  7. mamunjp007@gmail.com : mamunjp007 :
  8. media.mrp24@gmail.com : এস এইচ এম মামুন : এস এইচ এম মামুন
  9. rakib.jnu.s6@gmail.com : Rakibul Islam : Rakibul Islam
  10. mdraselali95@gmail.com : Rasel Ali : Rasel Ali
  11. rockyrisul@gmail.com : Rocky Risul : Rocky Risul
  12. rouf4711@gmail.com : আব্দুর রউফ : আব্দুর রউফ
  13. sohan.acct@gmail.com : Sohanur Rahman : Sohanur Rahman
কুরআন স্পর্শ করতে ওযু লাগবে কি? | দ্বিপ্রহর ডট কম
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন

কুরআন স্পর্শ করতে ওযু লাগবে কি?

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম: শুক্রবার, ১৩ মার্চ, ২০২০
  • ৩১৫ বার পঠিত

উপরোল্লিখিত প্রশ্নটি যদি বাংলাদেশের সাধারণ কোন মানুষকে আপনি করেন, যার ইসলামের বুনিয়াদি বিষয় ছাড়া বিশেষ কোন জ্ঞান নেই, তিনিও হয়তো এ ক্ষেত্রে উত্তর দিবেন, অবশ্যই ! কোরআন স্পর্শ করতে অযু লাগবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, উম্মতের সাধারণ থেকে সাধারণ ব্যক্তিও যে বিধান সম্পর্কে জ্ঞাত, সেখানে ভিন্নমত পোষণ করে “কিছু মানুষ” দাবী করেছেন, কোরআন স্পর্শ করতে অযুর প্রয়োজন নেই। কেননা, তাদের তাহকিক অনুযায়ী এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোন দলিল পাওয়া যায় না এবং কোরআন স্পর্শের জন্য ওজুর বাধ্যবাধকতা মানুষকে কোরআন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
সঠিক মত
“কোরআন স্পর্শ করার জন্য অযু করা ওয়াজিব, বিনা অযুতে কোরআন স্পর্শ করা হারাম”– এটিই সহিহ মত। যা কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত এবং সাহাবা তাবেয়িন, পূর্ববর্তি এবং সমসাময়িক প্রায় শতকরা নিরানব্বই ভাগ আলেমদের মতামতের দ্বারা স্বীকৃত। নিচে আমরা এ বিষয়গুলো ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব ইন’শা’আল্লাহ।
নোটটিতে যা থাকছে
১) হাদিসে রাসুল থেকে দলিল
২) ফিকহী কিতাবসমূহের উদ্ধৃতি
৩) পূর্ববর্তি ও সমসাময়িক আলেমদের ফতোয়া
৪) কিছু আপত্তি ও তার জবাব
হাদিসের আলোকে –———————-
(১) عن عبد الله بن أبي بكر بن محمد بن عمرو بن حزم عن أبيه عن جده قال: كان في كتاب النبي لعمرو بن حزم : لا يمس القرآن إلا طاهر আব্দুল্লাহ বিন আবি বকর(রা) বলেন, আমর বিন হাযম (রা) এর কাছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাঠানো চিঠিতে এ কথা লিপিবদ্ধ ছিল, পবিত্র না হয়ে কেউ যেন কোরআন স্পর্শ না করে।

সূত্র-মুয়াত্তায়ে মালিক ১/৩৪৩, মুসান্নাফে আব্দির রাযযাক ১/৩৪১, মুসতাদরকে হাকিম ১/৩৯৭, সুনানে বাইহাকি ১/৮৭

ইয়েমানবাসির উদ্দেশে আমর বিন হাযম (রা) এর কাছে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ চিঠি পাঠান। চিঠিটিতে ইসলামী শরিয়তের বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক দিক নির্দেশনা দেয়া ছিল। মুহাদ্দিসিনে কেরাম তাঁদের গ্রন্থের বিভিন্ন অধ্যায়ে এর সংশ্লিষ্ট অংশটুকু বর্ণনা করেছেন। পুরো চিঠিটি সাহিহ ইবনে হিব্বানের ১৪ নং খণ্ডে উল্লেখিত হয়েছে।সাহাবায়ে কেরামের যুগে চিঠিটিকে রাসুলের সুন্নাতের এক মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হত। কোন বিষয়ে জানা না থাকলে তারা এ চিঠির শরানাপন্ন হতেন। কোন বিষয়ে তাদের মতের বিপরীত এ চিঠিতে কিছু পাওয়া গেলে, তারা তাদের পূর্বের মত থেকে ফিরে আসতেন। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইয়াকুব বিন সুফিয়ান (র) বলেন,لا أعلم في جميع الكتب المنقولة كتابا أصح من كتاب عمرو بن حزم فإن الصحابة والتابعين يرجعون إليه ويدعون رأيهم আমর বিন হাযম (রা) এর এ চিঠির চেয়ে বিশুদ্ধ কোন চিঠির কথা আমার জানা নেই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবা ও তাবেয়িগণ এ চিঠির শরনাপন্ন হতেন এবং এর বিপরীতে তাদের কোন মত থাকলে তা পরিহার করতেন। (আত-তালখিসুল হাবীর ২/৪১৮)
ইমাম আহমদ (র) বলেন – كتبه لا أشك أن رسول الله চিঠিটি যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখেছিলেন এ ব্যপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। (আত-তিবয়ান লিবনিল কায়্যিম ১/৪০৯) ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র) বলেন – وهو كتاب مشهور عند أهل العلم আহলে ইলমের নিকট এটি একটি প্রসিদ্ধ চিঠি (শরহুল উমদাহ ১/৩৪২) ইবনে আব্দিল বার(র) বলেন, وهو معروف عند أهل العلم معرفة يستغني بها عن الإسناد হাদিসটি উলামাদের নিকট এতটাই প্রসিদ্ধ যে এর কোন সূত্র বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই (আত-তামহিদ ১/৩৩৮) ইমাম হাকেম নিশাপুরি (র) বলেন – قد شهد عمر بن عبد العزيز ، والزهري لهذا الكتاب بالصحة উমর বিন আব্দুল আযিয ও ইমাম যুহরি (র) এ চিঠিটির যথার্থতার সাক্ষ্য দিয়েছেন। (আল মুসতাদরাক ১/৩৯৭, নাইলুল আওতার ১/২৫৯)
(২) عن عبد الله بن عمر رضي الله عنه قال : قال النبي صلي الله عليه وسلم لا يمس القرآن إلا طاهر আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পবিত্র ব্যক্তি ব্যতিত কেউ যেন কোরআন স্পর্শ না করে। সূত্র-সুনানে দারাকুতনি ১/১২১, আলমুজামুস সাগির লিত তাবরানী ১/২৭৬ হাদিসটি সম্পর্কে ইমামগণের মন্তব্য – ক) আবু বকর আল আসরাম (র) বলেন, واحتج أبو عبد الله يعني أحمد بحديث ابن عمر আবু আব্দিল্লাহ অর্থাৎ ইমাম আহমদ (র) ইবনে উমর (রা) এর এই হাদিস দিয়ে দলিল দিতেন। (আল-মুনতাকা ১/৯২) খ) হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (র) বলেন, وإسناده لا بأس به হাদিসটির সুত্রে কোন সমস্যা নেই (আত তালখিসুল হাবির ১/১৩১) গ) আল্লামা নূরুদ্দীন বিন আবু বকর হায়সামী (র)বলেনঃ رواه الطبراني في الكبير والصغير ورجاله موثقون ইমাম তাবারানী কাবীর ও সাগীর উভয় গ্রন্থে তা বর্ণনা করেছেন। আর এর সকল বর্ণনাকারী সিক্বা তথা গ্রহণযোগ্য। (মাযমাউজ যাওয়ায়েদ ১/২৭৬)
(৩) عن عبد الرحمن بن يزيد ، قال : كنا مع سلمان ، فخرج فقضى حاجته ، ثم جاء فقلت : يا أبا عبد الله ، لو توضأت لعلنا نسألك عن آيات ، قال : إني لست أمسه ، إنه لا يمسه إلا المطهرون ، فقرأ علينا ما شئنا আব্দুর রহমান বিন ইয়াযিদ বলেন, আমরা সালমান (রা)এর সাথে ছিলাম। (কিছুক্ষন পর) তিনি বের হয়ে ইস্তেঞ্জা করতে গেলেন। (ফিরে আসার পর) আমি তাকে বললাম, হে আবু আব্দিল্লাহ ! আপনি যদি একটু অযু করে আসতেন, আমরা কোরআনের একটি আয়াতের ব্যাপারে আপনাকে প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম। তিনি জবাব দিলেন – আমি তো এখন কোরআন স্পর্শ করছি না। পবিত্র না হয়ে কোরআন স্পর্শ করা যায় না। (কিন্তু, স্পর্শ না করে শুধু পড়তে তো কোন সমস্যা নেই)। এরপর আমরা যা শুনতে চেয়েছিলাম, তিনি তা আমাদের পড়ে শোনালেন। সূত্র-মুসতাদরকে হাকেম ২/ ৪৭৭, সুনানে দারাকুতনি ১/১২৪, মুসান্নেফে ইবনে আবি শাইবা ১/১২৬ হাদিসটি সম্পর্কে ইমামগণের মন্তব্য –ক) আবু আব্দিল্লাহ আল-হাকিম আন নাইসাবুরি (র) বলেন, هذا حديث صحيح على شرط الشيخين হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সাহিহ (মুসতাদরকে হাকেম ২/ ৪৭৭) খ) আল্লামা জামালুদ্দিন আয-যাইলায়ি (র) বলেন, وصحح الدَّارَقُطْنِيُّ ইমাম দারাকুতনি (র) হাদিসটিকে সাহিহ বলেছেন। (নাসবুর রায়াহ ১/১৯৯)
ফিকহী কিতাবসমূহের উদ্ধৃতি – ———————————-
ফিকহে হানাফী
১) لا يجوز للمحدث أداء الصلاة لفقد شرط جوازها، وهو الوضوء قال – صلى الله عليه وسلم – «لا صلاة إلا بوضوء» ، ولا مس المصحف من غير غلاف عندنا، নামায বৈধ হওয়ার মৌলিক শর্ত “ওযু” না থাকার কারনে ওযুবিহীন ব্যক্তির জন্য নামায আদায় বৈধ নয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ওযু ব্যতিত কোন নামায নেই। তেমনি ভাবে, আমাদের নিকট ওযুবিহীন ব্যক্তির জন্য গিলাফ ব্যতিত কোরআন স্পর্শ করাও জায়েয নেই। -বাদাইউস সানায়ি ১/৩৩ ২) وليس للحائض والجنب والنفساء قراءة القرآن وليس لهم مس المصحف إلا بغلافه ولا أخذ درهم فيه سورة من القرآن إلا بصرته وكذا المحدث لا يمس المصحف إلا بغلافه হায়েযা, জুনুবি ও নেফাসগ্রস্থ মহিলার জন্য কোরআন তিলাওয়াত করা নিষেধ। এবং তাদের জন্য গিলাফ ব্যতিত কোরআন ধরা বা এমন কোন দিরহাম স্পর্শ করাও বৈধ নয়, যেখানে কোরআনের কোন সুরাহ লিখা রয়েছে। হা, যদি সেই দিরহাম থলের ভেতর থাকে, তাহলে থলেসহ তা ধরা যেতে পারে। একই বিধান, ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যার ওযু নেই। তার জন্য গিলাফ ব্যতিত বিনা অযুতে কোরআন স্পর্শ করা জায়েজ নেই। -বিদায়াতুল মুবতাদি ১/৮ আরও দেখুনঃ আলবাহরুর রায়িক ১/২০১, মুলতাকাল আবহুর ১/৮১, শরহুন নুকায়া ১/৮৬
ফিকহে মালেকী
১) ما يمنعه الحدث الأصغر: مس المصحف، إن كتب بالعربية، ولو بعود ছোট নাপাকির কারনে যে সমস্ত কাজ করা নিষেধ – …কোরআন স্পর্শ করা। যদি তা আরবিতে লিখিত হয়। কাঠি বা অন্য কিছুর মাধ্যমেও তা স্পর্শ করা যাবে না। – ফিকহুল ইবাদাত আলাল মাযহাবিল মালিকি ১/৭৫ ২) قال ابن وهب: قال مالك: لا يحمل المصحف بعلاقته، ولا على وسادة، أحد إلا وهو طاهر ইবনে ওহাব বলেন, ইমাম মালিক (র) বলেছেন, পবিত্র ব্যক্তি ব্যতিত গিলাফ কিংবা বালিশের মাধ্যমেও কেউ যেন কোরআন স্পর্শ না করে। -আল-মুসহাফ লিআবি দাউদ ১/৪৪০ আরও দেখুনঃ আল-আওসাত লিইবনিল মুনযির ২/১০২, আল-মুহাল্লা লিবনিল হাযাম ১/৯৯, আল-ইস্তিযকার ১/১১
ফিকহে শাফেয়ী
১) يحرم على المحدث مس المصحف وحمله سواء حمله بعلاقته أو بغيرها ওযুবিহীন ব্যক্তির জন্য কোরআন স্পর্শ করা এবং সেটাকে বহন করা হারাম। চাই তা গিলাফ বা অন্য কিছুর সাহায্যেই হোক না কেন। -আত-তিবয়ান লিন নববি ১/১৯২ ২) ويحرم عليه مس المصحف لقوله تعالى:لا يمسه إلا المطهرون ولما روى حكيم بن حزام أن النبي صلى الله عليه وسلم قال:لا تمس القرآن إلا وأنت طاهر”ويحرم عليه حمله في كمه لأنه إذا حرم مسه فلأن يحرم حمله ওযুবিহীন ব্যক্তির জন্য কোরআন স্পর্শ করা হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করে না এবং আমর বিন হাযম(র) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পবিত্র না হয়ে কোরআন স্পর্শ করো না। ওযুবিহীন ব্যক্তির জন্য জামার হাতার সাহায্যেও তা বহন হারাম। কেননা তার জন্য যেমন কোরআন ছোঁয়া হারাম, বহন করাও হারাম। -আল-মুহাযযাব ফী ফিকহিল ইমাম আশ-শাফেয়ী ১/৫৪ আরও দেখুনঃ হুলয়াতুল উলামা লিশ-শাশি ১/২০১, যাদুল মুহতাজ ১/৩০, আল-গায়াতুল কুযওয়া ১/২১৮
ফিকহে হাম্বলী
১) مسألة: قال: ولا يمس المصحف إلا طاهر يعني طاهرا من الحدثين جميعا. روي هذا عن ابن عمر والحسن وعطاء وطاوس والشعبي والقاسم بن محمد وهو قول مالك والشافعي وأصحاب الرأي، ولا نعلم مخالفا لهم إلا داود মাসআলাঃ তিনি বলেন, পবিত্র ব্যক্তি ব্যতিত কেউ যেন কোরআন স্পর্শ না করে। পবিত্র ব্যক্তি অর্থ হল ছোট বড় উভয় ধরণের নাপাকি থেকে যিনি পবিত্র। ইবনে উমর(রা), হাসান(র), আতা(র), তাউস(র),শা’বি(র), কাসিম বিন মুহাম্মাদ(র) থেকে এমনই বর্ণিত রয়েছে। এটিই ইমাম মালিক, শাফেয়ী ও অন্যান্য ফুকাহাদের মত। ইমাম দাউদ(র) ব্যতিত অন্য কেউ এ মতের বিরোধিতা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। -আল-মুগনি ১/১০৮ ২) ويحرم على المحدث مس المصحف وفي حمله بعلاقته أو في غلافه وتصفحه بكمه أو عود ونحوه ওযুবিহীন ব্যক্তির জন্য কোরআন স্পর্শ করা হারাম। এমনকি গিলাফের ভেতর অথবা এ জাতীয় কিছুর সাহায্য নিয়েও ওযুবিহীন অবস্থায় কোরআন বহন করা যাবে না। কাঠি, জামার হাতা কিংবা অন্য কিছুর সাহায্যে পৃষ্ঠা উলটানোও বৈধ হবে না। -আল মুহাররার ১/১৬ আরও দেখুনঃ আল-মুগনি ১/১১০, শরহুয যারকাশি ১/২১১, শুরহুল উমদাহ ১/৩৮১, আল-ইনসাফ ১/২২২
পূর্ববর্তি ও সমসাময়িক আলেমদের ফতোয়া—————————————————
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (র) এর ফতোয়া – وسئل هل يجوز مس المصحف بغير وضوء أم لا ؟ فأجاب : مذهب الأئمة الأربعة أنه لا يمس المصحف إلا طاهر كما قال في الكتاب الذي كتبه رسول الله صلى الله عليه وسلم لعمرو بن حزم : أن لا يمس القرآن إلا طاهر . قال الإمام أحمد : لا شك أن النبي صلى الله عليه وسلم كتبه له وهو أيضا قول سلمان الفارسي وعبد الله بن عمر وغيرهما . ولا يعلم لهما من الصحابة مخالف
প্রশ্ন – মুসহাফ বিনা অযুতে স্পর্শ করা যাবে কি? জবাব – চার মাযহাবের ইমামদের মত হল, পবিত্র ব্যক্তিগণ ছাড়া আর কারো কোরআনে কারিম স্পর্শ করার অনুমতি নেই। যেমন আমর বিন হাযম (রা)কে পাঠানো চিঠিতে রাসুল (স) বলেছিলেন – পবিত্রতা অর্জন না করে কেউ যেন কোরআন স্পর্শ না করে। ইমাম আহমাদ (র) বলেছেন, চিঠিটি যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখেছেন এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই। সালমান ফারসি (রা), আব্দুল্লাহ বিন উমর(রা) ও অন্যান্য সাহাবাদেরও মত। এবং সাহাবাগনের মধ্যে থেকে তাদের মতের বিরোধিতা করেছেন, এরকম কারো কথাও জানা যায় না (মাজমুআতুল ফতোয়া, খণ্ড ২১/ পৃষ্ঠা ১৫২) অন্যত্র বলেন,وَأَمَّا مَسُّ الْمُصْحَفِ: فَالصَّحِيحُ أَنَّهُ يَجِبُ لَهُ الْوُضُوءُ كَقَوْلِ الْجُمْهُورِ কোরআনে কারিম স্পর্শ করার ব্যাপারে সহিহ রায় হল, অধিকাংশ আলেমদের মত অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে অযু করা ওয়াজিব। (মাজমুআতুল ফতোয়া, খণ্ড ২১/ পৃষ্ঠা ১৬৪)
শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায (র) এর ফতোয়া – لا يجوز للمسلم مس المصحف وهو على غير وضوء عند جمهور أهل العلم وهو الذي عليه الأئمة الأربعة رضي الله عنهم وهو الذي كان يفتي به أصحاب النبي عليه الصلاة والسلام ، قد ورد في ذلك حديث صحيح لا بأس به من حديث عمرو بن حزم رضي الله عنه : أن النبي صلى الله عليه وسلم كتب إلى أهل اليمن : (أن لا يمس القرآن إلا طاهر) وهو حديث جيد له طرق يشد بعضها بعضا ، وبذلك يعلم أنه لا يجوز مس المصحف للمسلم إلا على طهارة من الحدثين الأكبر والأصغر ،
অধিকাংশ উলামাদের মতানুসারে, বিনা অযুতে কোরআনে কারিম স্পর্শ করা জায়েয নয়। এটিই চার ইমামের (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) মত। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণও এই ফতোয়া দিয়েছেন। আমর বিন হাযম রাযিয়াল্লাহু আনুহ থেকে বর্ণিত সাহিহ হাদিসে এসেছে – রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামেনবাসির কাছে লিখেছিলেন – পবিত্রতা অর্জন না করে কেউ যেন কোরআন স্পর্শ না করে। এটি একটি নির্ভরযোগ্য হাদিস, যার একাধিক সূত্র, একটি অপরটিকে শক্তিশালী করেছে। এ হাদিস থেকে বোঝা যায় বড় ও ছোট নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জন না করে কোন মুসলিমের জন্য কোরআন স্পর্শ করা জায়েয নেই। সূত্র – http://www.binbaz.org.sa/mat/130

মুফতি তাকি উসমানী (হাফিযাহুল্লাহ) এর ফতোয়া – সুরা ওয়াকিয়ার ৭৯ নম্বর আয়াতের তাফসিরে তিনি বলেন,এখানে “অত্যন্ত পবিত্র” দ্বারা যদিও ফেরেশতাদের বোঝানো হয়েছে, কিন্তু এর মধ্যে ইঙ্গিত নিহিত রয়েছে যে, ঊর্ধ্বজগতে যেমন পবিত্র ফেরেশতাগণই একে স্পর্শ করে, তেমনি দুনিয়াতে একে কেবল তাদেরই স্পর্শ করা উচিৎ, যারা পাক-পবিত্র। বিভিন্ন হাদিসে কোরআনে কারিমকে বিনা অযুতে স্পর্শ করতে নিষেধ করা হয়েছে। (তাফসিরে তাওযিহুল কোরআন, খণ্ড ৩/ পৃষ্ঠা ৪৭৮)
শাইখ সালেহ আল উসাইমিনের (র) ফতোয়া – السؤال: ما رأي فضيلتكم في مدرس يدرِّس للتلاميذ القرآن الكريم، ولا يوجد ماء في المدرسة أو بالقرب منها والقرآن لا يمسه إلا المطهرون، فماذا يفعل؟الإجابة: إذا لم يكن في المدرسة ماء ولا بقربها فإنه ينبِّه على الطلبة ألا يأتوا إلا وهم متطهرون، وذلك لأن المصحف لا يمسه إلا طاهر، ففي حديث عمرو بن حزم الذي كتبه النبي صلى الله عليه وسلم له: “ألا يمس القرآن إلا طاهر”، فالطاهر هنا من ارتفع حدثه بدليل قوله تعالى في آية الوضوء والغسل والتيمم: {مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ} ففي قوله: {ليطهركم} دليلٌ على أن الإنسان قبل أن يتطهر لم تحصل له الطهارة وعلى هذا فلا يجوز لأحد أن يمس القرآن إلا وهو طاهر متوضئ، إلا أن بعض أهل العلم رخص للصغار أن يمسوا القرآن لحاجتهم لذلك وعدم إدراكهم للوضوء، ولكن الأولى أن يؤمر الطلاب بذلك أي بالوضوء حتى يمسوا المصحف وهم على طهارة
প্রশ্ন- জনৈক শিক্ষক ছাত্রদের কোরআনের দরস প্রদান করেন। (কোন কারনে) মাদ্রাসায় বা তার আশেপাশে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এখন তার জন্য কি করনীয়? কেননা পবিত্র না হয়ে তো কোরআন স্পর্শ করা যায় না। উত্তর- মাদ্রাসায় বা আশেপাশে যদি পানি পাওয়া না যায়, শিক্ষক তখন ছাত্রদের সতর্ক করবেন তারা যেন পবিত্র না হয়ে কোরআন বহন বা স্পর্শ না করে। কেননা আমর বিন হাযম (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লিখেছেন, “ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কোরআন স্পর্শ করবে না”।এখানে পবিত্রতা বলতে উদ্দেশ্য হচ্ছে নাপাকি থেকে অর্জিত পবিত্রতা। কেননা আল্লাহ তাআলা অযু গোসল ও তায়াম্মুমের আয়াতে উল্লেখ করেছেন, مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ আল্লাহ তোমাদের অসুবিধায় ফেলতে চান না, বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান। এখানে “তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান” দ্বারা এ কথা বোঝা যায়, পবিত্রতা অর্জন না করলে পবিত্র হওয়া যায় না। তাই, অযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন না করে কারো জন্য কোরআন স্পর্শ করা জায়েয হবে না। তবে, নাবালেগ বাচ্চাদের যেহেতু অনেক ক্ষেত্রে কোরআন স্পর্শ করা প্রয়োজন দেখা দেয়, আর তাছাড়া অযুর গুরুত্ব বোঝার মত বয়সও তাঁদের হয়নি, তাই কোন কোন আলেম তাদের জন্য বিনা অযুতে কোরআন স্পর্শ করার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু এক্ষেত্রেও উত্তম হল, তাদের অযুর আদেশ দেয়া, যাতে করে পবিত্র অবস্থাতেই তারা কোরআন স্পর্শ করতে পারে। (ফতোয়া আরকানুল ইসলাম,পৃষ্ঠা ২৪২)
কিছু আপত্তি ও তার জবাব——————————-
১ম আপত্তিঃ
কোরআনে কারিম স্পর্শ করতে ওযুর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে উল্লেখিত সব হাদিসেই কিছু যু’ফ (দুর্বলতা) রয়েছে। যার কারনে উক্ত আহাদিস আমলযোগ্য নয়।
জবাব- এটি একটি অজ্ঞতাপ্রসূত মত। প্রথমত এ বক্তব্যটিই সঠিক নয়। “পবিত্র না হয়ে কোরআন স্পর্শ করা যায় না” এ প্রসঙ্গে নির্ভরযোগ্য অনেক গুলো হাদিস রয়েছে। যার মধ্যে থেকে তিনটি হাদিস মুহাদ্দিসিনদের মতামত সহ ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।আর তাছাড়া সবগুলো হাদিসকে যদি যায়িফ মেনেও নেয়া হয়, তাহলেও উক্ত আহাদিসের উপর আমল করা ওয়াজিব। কেননা ১) কিছু যায়িফ হাদিস, একাধিক সূত্রে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা তার যু’ফ (ত্রুটি) দূর হয়ে যায়। ২) নির্ভরযোগ্য ও অধিকাংশ আলেমগণ যখন কোন একটি হাদিস যায়িফ জানার পরও তা গ্রহন করে নেন, উম্মতের জন্য সে যাইফ হাদিসের উপর আমল করা ওয়াজিব হয়ে যায়। হাফেয ইবনে হাজার আসকালানি (র) বলেন,لأن اتفاقهم على تلقي خبر غير ما في الصحيحين بالقبول ولو كان سنده ضعيفا يوجب العمل بمدلوله সাহিহাইন ছাড়া অন্য কোথাও উল্লেখিত কোন হাদিস গ্রহন করার ব্যাপারে যদি উলামাগন একমত হয়ে যান, তাহলে সে হাদিসটি যায়িফ হলেও তার উপর আমল করা ওয়াজিব। (আননুকাত লিইবনিল হাজার ১/৩৭২) এ কারনেই “কোরআন স্পর্শে অযুর আবশ্যকতা” সংক্রান্ত একটি হাদিস আলোচনা করতে গিয়ে নাসিরুদ্দিন আলবানি (র) বলেন, أن الحديث طرقه كلها لا تخلو من ضعف , ولكنه ضعف يسير إذ ليس فى شىء منها من اتهم بكذب , وإنما العلة الإرسال أو سوء الحفظ , ومن المقرر فى ” علم المصطلح ” أن الطرق يقوى بعضها بعضا إذا لم يكن فيها متهم كما قرره النووى فى تقريبه ثم السيوطى فى شرحه , وعليه فالنفس تطمئن لصحة هذا الحديث لا سيما وقد احتج به إمام السنة أحمد بن حنبل كما سبق হাদিসটির কোন সূত্রই দুর্বলতামুক্ত নয়। তবে যে দুর্বলতা রয়েছে তা খুবই সামান্য। কেননা সূত্রগুলোতে এমন কোন রাবি(বর্ণনাকারী) নেই যাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এখানে দুর্বলতার মুল কারন (বর্ণনাকারী থেকে) ইরসাল পাওয়া যাওয়া অথবা রাবির মেধাশক্তির দুর্বলতা । আর “ ইলমুল মুস্তালাহ” এর মধ্যে এটা স্বীকৃত যে, হাদিসের সূত্রসমুহের মধ্যে যদি এমন কোন রাবি না থাকেন, যাকে মিথ্যা বলার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রে হাদিসটির একাধিক সূত্র – একটি অপরটিকে শক্তিশালি করবে। ইমাম নববি (র) তার “তাকরিব” গ্রন্থে ও আল্লামা সুয়ুতি (র) তার শরাহতে এ মতই ব্যক্ত করেছেন। যার মাধ্যমে এ হাদিসের সিহহাত (নির্ভরযোগ্যতা) এর ব্যাপারে মনে আর কোন সন্দেহ থাকে না। তাছাড়া, পূর্বেই বলা হয়েছে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (র)ও এ হাদিসকে প্রমান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (ইরওয়াউল গা’লিল লিল আলবানি ১/১৬০) আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (র) বলেন,مذهب الأئمة الأربعة أنه لا يمس المصحف إلا طاهر كما قال في الكتاب الذي كتبه رسول الله صلى الله عليه وسلم لعمرو بن حزم : أن لا يمس القرآن إلا طاهر . قال الإمام أحمد : لا شك أن النبي صلى الله عليه وسلم كتبه له وهو أيضا قول سلمان الفارسي وعبد الله بن عمر وغيرهما . ولا يعلم لهما من الصحابة مخالف . চার মাযহাবের ইমামদের মত হল, পবিত্র ব্যক্তিগণ ছাড়া আর কারো কোরআনে কারিম স্পর্শ করার অনুমতি নেই। যেমন আমর বিন হাযম (রা)কে পাঠানো চিঠিতে রাসুল (স) বলেছিলেন – পবিত্রতা অর্জন না করে কেউ যেন কোরআন স্পর্শ না করে। ইমাম আহমদ (র) বলেন, চিঠিটি যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখেছেন এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই। সালমান ফারসি (রা), আব্দুল্লাহ বিন উমর(রা) ও অন্যান্য সাহাবাদেরও মত। এবং সাহাবাগনের মধ্যে থেকে তাদের মতের বিরোধিতা করেছেন, এরকম কারো কথাও জানা যায় না। (মাজমুআতুল ফতোয়া, ২১/১৫৬) অন্যত্র বলেন,وَأَمَّا مَسُّ الْمُصْحَفِ: فَالصَّحِيحُ أَنَّهُ يَجِبُ لَهُ الْوُضُوءُ كَقَوْلِ الْجُمْهُورِকোরআনে কারিম স্পর্শ করার ব্যাপারে সহিহ রায় হল, অধিকাংশ আলেমদের মত অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে অযু করা ওয়াজিব। (মাজমুআতুল ফতোয়া,২১/১৬৪) ———————তাই, কোরআন স্পর্শ করার জন্য অযুর বাধ্যবাধকতা সংশ্লিষ্ট সবগুলো হাদিসকে যদি যায়িফ মেনেও নেয়া হয়, হাদিসগুলোর একাধিক সুত্র থাকার কারনে এবং সাহাবা তাবেয়িন সহ প্রায় শতভাগ উলামাগন তা গ্রহন করে নেয়ার কারনে, উক্ত আহাদিসের উপর আমল করা ওয়াজিব।
২য় আপত্তিঃ
উপরোল্লিখিত হাদিস গুলোতে বলা হয়েছে لا يمس القرآن إلا طاهر পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ যেন কোরআন স্পর্শ না করে – এখানে পবিত্র ব্যক্তি দ্বারা মুমিন ব্যক্তি বোঝানো হয়েছে। কেননা সহিহ মুসলিমের এক হাদিসে আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন المؤمن لا ينجس মুমিন কখনও নাপাক হয় না। (অর্থাৎ মুমিন সবসময় পবিত্র)সুতরাং, পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কোরআন স্পর্শ করবে না – এর অর্থ হল মুমিন ছাড়া কেউ কোরআন স্পর্শ করবে না। কাফির, মুশরিক কোরআন স্পর্শ করতে পারবে না। মুমিন করতে পারবে, সর্বাবস্থায় পারবে, অযু থাকুক বা না থাকুক।
জবাব- প্রথম কথা হল, উপরোল্লিখিত হাদিস সমুহে পবিত্র ব্যক্তি দ্বারা যদি মুমিন ব্যক্তিই বোঝানো উদ্দেশ্য হত, তাহলে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সরাসরি “মুমিন ব্যক্তি” বললেই পারতেন। “পবিত্র ব্যক্তি” বলে “মুমিন ব্যক্তি” বোঝানোর কি দরকার? এভাবে বললেই হত “মুমিন ব্যক্তি ছাড়া কেউ যেন কোরআন স্পর্শ না করে।” দ্বিতীয়ত, সুরা মায়েদার ৬নং আয়াতে অযু গোসল ও তায়াম্মুমের বিধানাবলি বর্ণনা করার পর আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনمَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ “(এ সমস্ত বিধানের দ্বারা) তিনি তোমাদের অসুবিধায় ফেলতে চান না, বরং তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান।” লক্ষণীয় বিষয় হল, একজন মুমিন যদি সব সময় পবিত্রই থাকেন, নাপাক না হন, তাহলে আল্লাহ তাকে পবিত্র করতে কেন চাইলেন? পবিত্র তো তাকেই করা যায়, যিনি পূর্বে নাপাক ছিলেন। তাই নয় কি? বাকি থাকলো, সহিহ মুসলিমের সেই হাদিস যেখানে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিলেন, المؤمن لا ينجس মুমিন কখনও নাপাক হয় না। পুরো হাদিসটি হল – عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ لَقِيَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي طَرِيقٍ مِنْ طُرُقِ الْمَدِينَةِ، وَهُوَ جُنُبٌ فَانْسَلَّ فَذَهَبَ فَاغْتَسَلَ، فَتَفَقَّدَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا جَاءَهُ قَالَ: «أَيْنَ كُنْتَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ» قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، لَقِيتَنِي وَأَنَا جُنُبٌ فَكَرِهْتُ أَنْ أُجَالِسَكَ حَتَّى أَغْتَسِلَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سُبْحَانَ اللهِ إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَا يَنْجُسُ আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাঁর সাথে মদিনার কোন এক রাস্তাতে সাক্ষাত করলেন। আবূ হুরাইরা (রা) তখন নাপাক অবস্থায় ছিলেন। তাই তিনি চুপচাপ সরে গেলেন এবং গোসল করে আবার ফিরে আসলেন। এদিকে রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খোঁজ করছিলেন। তিনি ফেরত এলে রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এতক্ষণ কোথায় ছিলে? আবু হুরাইরা (রা) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যখন আমার সাথে সাক্ষাৎ করলেন, তখন আমি জুনুবি ছিলাম (এমন ব্যক্তিকে বলে যার উপর গোসল করা ওয়াজিব)। তাই গোসল না করে আপনার সাথে বসতে আমার খারাপ লাগছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন জবাব দিলেন, সুবহানাল্লাহ ! মুমিন ব্যাক্তি তো কখনও নাপাক হয় না। ঠাণ্ডা মাথায় এ হাদিসটি কেউ পড়লে, সহজেই বুঝতে পারবে, “ মুমিন ব্যাক্তি কখনও নাপাক হয় না ” – এ কথা বলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্ত্বাগত নাপাক না হওয়ার দিকে ইশারা করেছেন। অর্থাৎ একজন মুমিনের সত্ত্বাটাই অপবিত্র, যার ফলে তাঁর সাথে উঠাবসা, তাঁর স্পর্শ, তাঁর ঘাম, তাঁর ঝুটা ইত্যাদি সবই নাপাক, যেমন আবু হুরায়রা (রা) মনে করছিলেন, এমন কখনও হয় না। হা, সাময়িক ভাবে শরীর অপবিত্র হতেই পারে, অযু গোসল তায়াম্মুমের মাধ্যমে যে অপবিত্রতা দূর করে ফেলা যায়।
৩য় আপত্তিঃ অনেকে বলেন, হাদিসে তহির বা পবিত্র ব্যক্তি বলতে ঐ ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যিনি বড় নাপাকি থেকে পবিত্র। অর্থাৎ বড় নাপাকি থেকে পবিত্র থাকলে, জুনুবি (গোসল ফরয) না হলে, তাকে পবিত্র বলা হবে। তাই, সেই ক্ষেত্রে ওযু না থাকলেও কোরআন স্পর্শ করা যাবে।
জবাব- এটি একটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিমত। যার কোন দলিল নেই। আরবি “ত্বহির” শব্দের আভিধানিক অর্থ পবিত্র। কোরআন ও সুন্নাহর বিভিন্ন বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, এ শব্দ দ্বারা ঐ ব্যক্তি উদ্দেশ্য, যিনি বড় ও ছোট- উভয় নাপাকি থেকে পবিত্র। যার প্রমান- ক) আল্লাহ তাআলা সুরা মায়েদার যে আয়াতে ওযু গোসলের বিধান দিয়েছেন, সেখানে তিনি এ বিধান প্রদানের উদ্দেশ্যও ব্যক্ত করেছেন। আয়াতের শেষ অংশে আল্লাহ বলেন, مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ তিনি তোমাদেরকে কষ্টে ফেলতে চান না, বরং তিনি তোমাদের “তহির”(পবিত্র) বানাতে চান। এর দ্বারা বোঝা যায়, এই ওযু গোসল দ্বারা উদ্দেশ্য হল, পবিত্র হওয়া। যদি কেবল বড় নাপাকি থেকে পবিত্র থাকলেই কাউকে পবিত্র ধরা হত, ছোট নাপাকি থেকে (ওযুর মাধ্যমে) পবিত্র না হলেও তাকে অপবিত্র বলা না হত, তাহলে ওযুর বিধান আল্লাহ তাআলা কেন দিলেন? কোরাআনের এই বর্ণনাভঙ্গিই প্রমাণ করে, তহির বা পবিত্র বলতে ঐ ব্যক্তিকেই বোঝানো হয়েছে, যিনি বড় ও ছোট – উভয় নাপাকি থেকে পবিত্র। দ্বিতীয়ত, সহিহ মুসলিমের বিখ্যাত হাদিস, لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ পবিত্রতা ব্যতিত সালাতকে কবুল করা হয় না। যদি জুনুব বা বড় নাপাকি থেকে গোসলের দ্বারা পাক হলেই তাকে পবিত্র বা তাহির বলা যায়, তাহলে এই হাদিস অনুযায়ী তার ওযু ছাড়া নামায আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে। কেননা, হাদিসে নামায কবুলের জন্য তাহির হওয়াকে শর্ত করা হয়েছে। আর উপরোল্লিখিত আপত্তি অনুযায়ী, বড় নাপাকি থেকে পবিত্র হলেই সে তাহির। কিন্তু বিষয়টি আসলেই কি তাই? নাকি সব আলেমগণই বলবেন, আলোচ্য হাদিসে “পবিত্র হওয়া” বলতে ছোট ও বড়- উভয় নাপাকি থেকে পাক হতে বলা হয়েছে। তাহলে এবার বলুন, কোরআন স্পর্শের ব্যাপারে যে হাদিসে “পবিত্র না হয়ে কোরআন স্পর্শ করো না” বলা হয়েছে – সেখানে পবিত্র বলতে কেবল বড় নাপাকি থেকে পবিত্র হওয়া বোঝানো হয়েছে, এ অদ্ভুত দাবী কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? সর্বশেষ, হাদিসে পবিত্র বলতে মুলত কি বোঝানো হয়েছে, তা আমরা সাহাবিদের আমল দ্বারাই জেনে নিতে পারি। পূর্বেই এ সংক্রান্ত সাহাবিদের আমল নকল করা হয়েছে, পাঠকবৃন্দের সুবিধার্তে পুনরায় এখানে তুলে ধরা হল। عن عبد الرحمن بن يزيد ، قال : كنا مع سلمان ، فخرج فقضى حاجته ، ثم جاء فقلت : يا أبا عبد الله ، لو توضأت لعلنا نسألك عن آيات ، قال : إني لست أمسه ، إنه لا يمسه إلا المطهرون ، فقرأ علينا ما شئنا আব্দুর রহমান বিন ইয়াযিদ বলেন, আমরা সালমান (রা)এর সাথে ছিলাম। (কিছুক্ষন পর) তিনি বের হয়ে ইস্তেঞ্জা করতে গেলেন। (ফিরে আসার পর) আমি তাকে বললাম, হে আবু আব্দিল্লাহ ! আপনি যদি একটু অযু করে আসতেন, আমরা কোরআনের একটি আয়াতের ব্যাপারে আপনাকে প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম। তিনি জবাব দিলেন – আমি তো এখন কোরআন স্পর্শ করছি না। পবিত্র না হয়ে কোরআন স্পর্শ করা যায় না। (কিন্তু, স্পর্শ না করে শুধু পড়তে তো কোন সমস্যা নেই)। এরপর আমরা যা শুনতে চেয়েছিলাম, তিনি তা আমাদের পড়ে শোনালেন। সূত্র-মুসতাদরকে হাকেম ২/ ৪৭৭, সুনানে দারাকুতনি ১/১২৪, মুসান্নেফে ইবনে আবি শাইবা ১/১২৬
হাদিসটি সম্পর্কে ইমামগণের মন্তব্য –ক) আবু আব্দিল্লাহ আল-হাকিম আন নাইসাবুরি (র) বলেন, هذا حديث صحيح على شرط الشيخين হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সাহিহ (মুসতাদরকে হাকেম ২/ ৪৭৭) খ) আল্লামা জামালুদ্দিন আয-যাইলায়ি (র) বলেন, وصحح الدَّارَقُطْنِيُّ ইমাম দারাকুতনি (র) হাদিসটিকে সাহিহ বলেছেন। (নাসবুর রায়াহ ১/১৯৯)
-লিখেছেন মুফতি রিজওয়ানুল কবির সানিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত দ্বিপ্রহর ডট কম-২০১৭-২০২০
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazardiprohor11