ইমরানের পুরো মাথায় এখন কেবল এয়ারপোর্ট এালাকা। ঘুমাতে গিয়েও যেন সে আন্তার্জাতিক বিমান বন্দরের প্রবেশ মুখ সুন্দর ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার বিষয়। এখানটা পরিষ্কার করার মাধ্যমে বিদেশীদের কাছে নিজের দেশের ইমেজ সুন্দর করা। কিন্তু কিভাবে শুরু করবে তা স্থির করতে পারে না।
মিরাজ আংকেলকে বলে তারপর এলাকার কমিশনার বা মেয়রের সাথে কথা বলবে কি না ভাবে। সাথে তার মিরাজ আংকেলকে রাখলে কথা বলতে সুবিধা হতে পারে। না হলে তাকে কেউ গুরুত্ব নাও দিতে পারে।
দেশে ভালো কিছু চিন্তা করা লোকদের রাজনীতিবীদরা আজকাল পাগল বলে উড়িয়ে দেয়। তারা বোঝে কেবল টাকার খেলা। যেখানে কাড়িকাড়ি টাকা আছে সেখানে তাদের অংশগ্রহণ বেশী এবং দ্রুত। যেখানে মানবসেবা বা দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন জড়িত সেখানে তারা গড়িমসি করে অংশ গ্রহণে। এসব ভেবে ইমরান থেমে যায়। সে ভাবে, এ বয়সে ঢাকা উত্তরের মেয়রের সাথে এ নিয়ে কোন কথা বলা তার পক্ষে সম্ভব হলেও তার কথা কতটা গুরুত্ব দিবেন সেটাই ভাববার বিষয়।
একদিন তার এক বন্ধুকে নিয়ে উত্তরা দিয়া বাড়ি ঘুরতে যায়। দিয়া বাড়ি ঘুরে, ফিরে আসার সময় জমজম টাওয়ারে যায় মিরাজ আংকেলের সাথে দেখা করার কথা ভেবে। যাবার আগে তার বন্ধুকে বলেনি সেখানে যে তার পরিচিত কেউ আছে। জমজম টাওয়ারের বিভিন্ন তলায় এদিক সেদিক ঘুরে দেখে নিজেই দোকান খুঁজে বের করে ইমরান।
দোকানের সামনে গিয়ে ইমরান দেখে ভিতরে তার মিরাজ আংকেলকে দেখা যায় কি না। কিছু সময় তাকিয়ে থাকার পর দেখা না পেয়ে, দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবে, তার মোবাইল ফোনে কল দিবে কি না। নাকী কোন কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করবে মিরাজ আংকেল কোথায়?
দোকানের ভিতর দিকে তাকিয়ে ভালো ভাবে খেয়াল করে দেখে তার আংকেলের আসলে মূল ব্যবসা কিসের? দোকানের ভিতরটা দেখার পর বুঝতে পারে বিদেশী বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রেতা তার আংকেল। দেখার পর প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে। মানিব্যাগ হাতিয়ে তার মিরাজ আংকেলের দোকানের সেই কার্ড বের করে একজন কর্মচারীর কাছে এগিয়ে যায় কার্ডটি দেখাতে। কার্ড দেখিয়ে জানতে চায়, মিরাজ কি দোকানের আশেপাশে আছেন নাকী বাইরে কোথাও আছেন?
দোকানে তখন কয়েকজন মহিলা কাস্টমার বাচ্চাদের সামগ্রী দেখছিল। সুন্দরী কাস্টমার দোকানে ঢুকলে দোকানের সকল কর্মচারী এক হয়ে ব্যস্ততা দেখায় কাজে। যেন তাদের পণ্য দিয়ে খুশী করতে না পারলে মহাভারত অসুদ্ধ হয়ে যাবে। ইমরান যে কর্মচারীর দিকে এগিয়ে গিয়ে দোকানের কার্ডটি দেখাচ্ছিল সে কোন ভাবে দেখে কার্ডটি ফিরিয়ে দিয়ে বলল, – না ভাই জানি না। অন্যদিকে দেখেন। বলেই মেয়ে কাস্টমারদের জিজ্ঞেস করল, – আপা কি লাগবো আসেন এদিকে। অনেকদিন পর আসলেন মনে হয়। কেমন আছেন?
আদৌ ওরা এর আগে এই দোকানে কখনও এসেছে কি না জানা নেই। খুশী করতে বলে ফেলল, অনেকদিন পর আসার কথা। এটি তাদের কৌশল মাত্র। ওদের মধ্যে একটি মেয়ে ঠিকই ওর দিকে এসে এমন করে কথা বলতে শুরু করে যেন তারা পূর্ব পরিচিত। লোকটি মনে করেছে অন্য কোন দোকানের খোঁজ করছে হয়তো তাই সেদিকে মনযোগ না দিয়ে মেয়েটিকে বলছে, – আপা আপনি গতমাসে এসেছিলেন মনে হয় আপনার ইয়েকে নিয়ে।
মেয়েটি ছেলেটির এমন কথায় সায় দিয়ে বলে, – হুম, আপনার এখান থেকে আমাদের ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সবসময় কিনি।আজকে কি নিবেন বলেন দেখি দিতে পারি কি না? তা কি খাবেন, ঠান্ডা না গরম?
খাওয়ার পর তো আবার না কিনলে মাইন্ড করবেন।
না না না. ছিঃ ছিঃ কি যে বলেন, খাওয়ার সাথে কেনা বেচার কি সম্পর্ক? আপনারা হলেন আমাদের ব্যবসার লক্ষ্মী। খাওয়াতে পারলে ভাল। আমাদের কাছ থেকে আপনাকে কিনতেই হবে এমন তো কথা না। আর যদি পছন্দ হয় নিবেন নাই বা কেন?
ইমরান এবার দোকান থেকে বাইরে গিয়ে ফোন দেয় তার মিরাজ আংকেলের নাম্বারে। বেশ কিছু সময় রিং হয়। ফোন আর কেউ রিসিভ করে না। ইমরান ফোন কেটে দিয়ে আবার রিং করায়। এবার খেয়াল করে দোকানের ক্যাশে বসা এক লোক ফোন রিসিভ করছে। তখন ইমরান এগিয়ে গিয়ে বলে, – আমি রিং করছি। আংকেল কোথায়?
লোকটি ফোন কানের কাছ থেকে নামিয়ে ড্রয়ারে ভরে ইমরানের দিকে তাকায়। কিছু সময় তাকিয়ে দেখার পর বলে, – আংকেল? উনি বাসায় আছেন। আজ দুপুরে বাসায় যাবার সময় ফোন ভুলে রেখে গেছেন। কোথেকে এসেছেন?
ফার্মগেইট থেকে।
ফার্মগেইট থেকে? আমাকে বলতে পারেন জরুরী কোন দরকার থাকলে।
না, তেমন কোন দরকার না। এদিকে এসেছিলাম ঘুরতে। ভাবলাম দেখা করে যাই, তাই।
বাসা চিনেন না? বাসা চিনলে বাসায় যেতে পারেন।
আসতে কি দেরী হবে?
লোকটি দোকানের ভিতর কাস্টমারদের দিকে তাকিয়ে কর্মচারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, – কিরে? উনাদের চা পানি কিছু খাওয়াছ না, কি ব্যাপার? তোরা কি মেহমানদারী করা ভুলে গেছস নাকী? বলে আবার ইমরানের দিকে তাকান। – আজ মনে হয় বসের আসতে দেরী হবে। ঘরে মেহমান আসার কথা। বলে গেছেন আসতে সন্ধ্যা হবে। নাও আসতে পারেন।
মেহমান আসার কথা শোনার পর ইমরান কোন কথা না বলে সেখান থেকে একটু দূরে গিয়ে তার সাথের বন্ধুটিকে বলে, এই দোকানের মালিক যে তার বাবার সাথে বিদেশ ছিলেন। অনেকদিন পর কিছুদিন আগে হঠাৎ যে তাদের দেখা হয়েছে সে কথাও বলে। আগে তাদের বাসা ছিল বনশ্রীতে। এখন নিজেই বাড়ি কিনেছেন হাজী ক্যাম্পের সামনে। বলে তার হাত ধরে টেনে অন্য দিকে নিয়ে যায়।
ইমরানের মনে ভিন্ন চিন্তার জন্ম হয়। মিরাজ আংকেলের বাসায় মেহমান আসবে বলাতে ভাবে, মারীয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। তার মানে বিয়ের বয়স হয়েছে। তাকে তো আবার বিয়ের জন্য দেখতে আসেনি? হঠাৎ করেই তার মনে কামড় দেয়। বিদ্যুৎ চমকানোর মত করে ভিতরে মোচড় দেয়।
ইমরান যে নুহাশ পল্লীতে তাদের ডিপার্টমেন্টের পিকনিকে মারীয়াদের নিয়ে যাবার কথা ভাবছিল সেই পরিকল্পনাটা কি তাহলে নষ্ট হয়ে যাবে? ভাবতে ভাবতে জমজম টাওয়ারের উপর থেকে নীচে নেমে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে পায়চারী করে। গেইটে দাঁড়িয়ে রাস্তার অপর প্রান্তের বাস চলাচল দেখে। ভাবে বাসে করে এয়ারপোর্টের সামনে গিয়ে আজ সে তার বন্ধুকে নিয়ে ফুটওভারের উপর থেকে সেদিনের মত বিষয়গুলো দেখবে আর সার্ভে করবে।
ভাবনার পর সময় বেশী নষ্ট না করে ইমরান তার বন্ধুকে নিয়ে জমজম টাওয়ার থেকে বেরিয়ে আসে।
(চলবে…..)