মারীয়ার বাবা এবং ইমরানের মা আসেন। কোথাও মাটিতে দু’জন বসে যে গল্প করেছেন তারা তা দেখে বোঝা যায়। দু’জনের পিছনেই কাপড়ে মাটি লেগে আছে। ভাজ করা পাঞ্জাবীও কুচকিয়ে আছে মারীয়ার বাবার। আনিকা তার দুলাভাইকে ডেকে বলে, – দুলাভাই, এই বয়সেও যে রোমান্টিকতা করতে পারেন তা পাঞ্জাবী দেখলেই বোঝা যায়। ইমরানের মাকে অনেকটা অপরাধীর মত মনে হলেও তাদের দেখে মারীয়ার মা মুখ কালো করেন। মার্টিন সবাইকে বসার ব্যবস্থা করে সে দূরে রাখা একটি চেয়ার টেনে এনে মারীয়ার মা আর আনিকার মাঝখানে বসে। ইমরানকে কৌশলে মারীয়ার পাশে বসার ব্যবস্থা করে দেয় সে।
বাবুর্চী লোকটি সবার সামনে প্লেট দিয়ে বড় একটা সিলভারের খালি বোল নিয়ে আসলেন। এনে টেবিলে রেখে বলেন, – প্লেটে হাত ধূইয়ে সেটার মধ্যে পানি ফেলতে। এরপর সবাই প্লেটে হাত ধুইয়ে প্লেটের পানি সেই বোলে ফেলে। এরপর সবার প্লেটে ভাত দিয়ে সামনে রাখা ভর্তার বাটি এগিয়ে দিলে সবাই যে যার মত নিয়ে খাবার খেতে শুরু করে।
খাবার শেষ হলে মারীয়ার বাবা এগিয়ে গিয়ে বিল পরিশোধ করেন। বিল দেয়া হলে ইমরান বাবুর্চীকে কিছু বকশিস দিয়ে বলে, – আসেন, আপনাকে নিয়ে একটা ছবি তুলি। পরে বলা যাবে হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বাবুর্চীর রান্না খেয়ে তার সাথে ছবিও তুলেছি।
বৃষ্টিবিলাসের সামনে সবাই দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। সামনেই মাঠের মাঝখানে বড় গাছের উপর একটা ছোট টোন ঘর। সেই ঘরে উঠার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে মার্টিন ছবি তোলে। সব শেষে হাটতে হাটতে তারা যায় স্যারের কবরের কাছে। গিয়ে কবরের সামনে দাঁড়িয়ে কবর জিয়ারত করে। পুরো কবর বাধাই করে কাঁচ দিয়ে প্রাচীরের মত করে রাখা হয়েছে, চাইলেই যেন যে কেউ কবরের কাছে যেতে না পারে।
সব শেষে গেইটের সামনে এক মহিলার মূর্তি রয়েছে। মাহিলার মূর্তির সাথে ছোট একটি ছেলে হাত ধরা অবস্থায়। মূর্তির সামনে এসে একে একে ছবি তোলতে থাকে। মারীয়া ইমরানকে অনুরোধ করে বলে, – ভাইয়া আমার একটি ছবি তুলে দেও। বলেই আবার বলে, – আসেন আমরা দু’জনে এক সাথে একটা ছবি তুলি।
মারীয়ার সাথে ছবি তোলার কথা শুনে ইমরান একবার ঘার ঘুরিয়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ আর কথাটি শুনছে কি না। না, কেউ তাদের কাছাকাছি নেই।
দেখার পর ভিতরে রোমাঞ্চের ঢেউ খেলিয়ে সে তার মোবাইল মার্টিনের হাতে দিয়ে বলে তাদের দুজনের একটি ছবি তুলে দিতে। মহিলার মূর্তির সামনে ইমরান দাঁড়ালে মারীয়া তার গাঁ ঘেষে দাঁড়ায়। ওরা যখন ছবি তুলছিল অন্যরা তখন সামনেই যে ঘরে স্যার এসে রাত্রি যাপন করতেন সেই ঘরের জানালা দিয়ে উকি দিয়ে ভিতরের অবস্থা দেখছিলেন। মার্টিন ওদের দু’জনের কিছু ক্লোজ ছবি তুলে দেয়।
এরপর মারীয়া তার মোবাইল এগিয়ে মার্টিনকে আবার অনুরোধ করে বলে, – তার মোবাইল দিয়েও তুলে দিতে। মারীয়া সারাদিন শেষে সব কিছু ভুলে গিয়ে ইমরানের সাথে ক্লোজ হবার চেষ্টা করে। ছবি তোলা হলে প্রশ্ন করে, ভাইয়া এটা কি শাওনের মূর্তি?তার আগে তোমার কাছে আমার অনুরোধ, হয় তুমি ডাকবে নয় আপনি করে। যে কোন একটি ডাকে অভ্যস্ত হতে চাই। এরপর মার্টিন মারীয়ার প্রশ্নের উত্তর দেয়, – চেহারা দেখে তো তাই মনে হয়। পুরো চেহারা না আসলেও মনে হয় এটি শাওনকেই বানাতে চেয়েছিলেন।
ইমরান মুখ না খুলে ঠোঁট বাঁকা করে হাসে। – স্যার আসলেও বেশ রোমান্টিক ছিলেন। তার লেখা পড়লেই তা মনে হয়। অল্প বয়সী ছেলে মেয়েদের উনি পাগল বানিয়ে রেখে গেছেন।
মারীয়া বলে, – স্যার নিজেইতো মেয়েদের প্রতি পাগল ছিলেন। না হলে কি ঘরে এত ভালো বউ বাদ দিয়ে মেয়ের বান্ধবীকে বিয়ে করেন?
ইমরান বলে, – মারীয়াকে একটা প্রশ্ন করতে চাই?
Ñ থাক। আমারও অনেক প্রশ্ন করার ছিল। সব বাদ দিলাম। আর কোন প্রশ্ন করাকরি চলবে না। আপনার ইচ্ছে ছিল আমাকে নিয়ে আপনার নুহাশ পল্লীতে একদিন বেড়ানোর, আমি আপনার সখ পূরণ করলাম। এরপরেও যদি কিছু বলার থাকে তা অন্য একদিন না হয় আমরা বলতে পারবো।
সবাই সামনে চলে আসেন। ভিতরে তাদের আর কিছু দেখার বাকী রইলো না। শেষবারের মত গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে পিছন দিকে ঘুরে পুরো এলাকা দেখে। দেখার পর গেইট দিয়ে বের হয়ে আসে বাইরে।
বাইরে এসে আবার সবাই সেখানে শেষবারের মত চা খেয়ে গাড়িতে উঠে বসে সবাই। তখন কিছুটা অন্ধকার ঘিরে ফেলছে পুরো এলাকা। মারীয়া ইমরানকে ডেকে নিয়ে গাড়ির একদম পিছনের ছিটে বসে তার মাকে সুবিধা মত মাটিনের পাশে বসার ব্যবস্থা করে দেয়। তার বাবাকে ভিতরে বসতে বললে ইমরানের মায়ের পাশে বসেন। আনিকা আর মারীয়ার ভাই বসলে নাহিয়ান সামনে ড্রাইভারের সাথে বসতে বলে মারীয়া। সবাই গড়িতে উঠে বসলে মারীয়াই ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে নির্দেশ দেয়।
গাড়ি চলতে থাকে ঢাকার উদ্দেশে।
——————— সমাপ্ত —————-