এস এম এস পেয়ে ইমরান খুশী হয়। ডাব খেয়ে ডাব ওয়ালাকে প্রশ্ন করে, আপনি এখনে যে প্রতিদিন ডাব বিক্রি করেন এতে তো পথচারীদের হাটা চলা করতে কষ্ট হয়। কেউ কিছু বলে না আপনাকে কখনও। ভাই করবেন কি? মানুষের ক্ষতি হয় ঠিক আছে, তার চেয়ে যে এখানকার নেতা-পাতি নেতাগো আয় হয় বেশী, বলার সাহস হয় কার বলার?
এখানে এই জায়গার জন্য প্রতিদিন কত দিতে হয় আপনাদের?
দুইশ টাকা।
প্রতিদিনই কি বসেন এখানে?
না বসলে কই বসবো আর? তাছাড়া আয় রোজগার না করলে চলবো কি করে? সংসার ছেলে মেয়ে আছে যে।
গলির মাথা থেকে তাকিয়ে উত্তর দিকে যতটা চোখ যায় রাস্তার একদিকে তিন চাকার অটো রিক্সা অন্যদিকে মাছ আর কাঁচা সবজির বাজার। পশ্চিম পাশে সরকারী কলেজ। কলেজের নাম করণ করা হয়েছে সরকার প্রধানকে খুশী করতে তার মায়ের নাম অনুসারে।
কলেজ বিল্ডিংয়ের দিকে তাকিয়ে ইমরান বলে, – সবকিছুতে তেলবাজেরা যে ভাবে তেল দেওয়া শুরু করেছে কবে যেন দেশটার নামই বদলে রাখে। মানুষ যতই করছে সরকার প্রধানও যে কেন এসব বোঝার চেষ্টা করছে না। দলের লোক গুলোই যে সরকারের ক্ষতি করছে এবং তার পরিবারের নাম ডুবাচ্ছে এই বোধ না হলে এমন এক সময় আসবে যখন ইলেও আর নে পথ পাবে না পবর্তনের।
ইমরান হাটতে শুরু করে বলে, – এক কাজ করা যায়, এখানে শেষ মাথা পর্যন্ত কত গুলো অটো থেমে আছে আমরা গুনতে পারি। বলে আবার পিছনদিকে ঘুরে গলির মাথায় যায় ইমরান। এবার ইমরানের পাগলমীতে তার বন্ধু বেশ মজা পায়। মজা পেয়ে বলে, – দোস্ত, তুমি আসলে কি করতে চাও।
এর উপর ফেইসবুকে লিখবো। একসময় ফেইসবুকে আমার যারা ফ্রেন্ড আছে তারা লাইক শেয়ার দিবে। দেখবে এসব সমাজ সচেতন মূলক লেখা গুলো ভাইরাল হবে। তখন কেউ না কেউ আমার সাথে সহমত পোষণ করবে। তাদের নিয়ে এই এলাকা প্রথমে ফেরিওয়ালা মুক্ত করবো। তারপর এয়ারপোর্ট থেকে আসতে রাস্তার ফুটপাত গুলোকে চলাচলে উপযোগী করতে মেয়রের কাছে আবেদন জানাবো।
ইমরানের বন্ধু তার কথা শুনে হাসবে না কিছু বলবে ভাবে। এমন সময় ফোন আসে তার মিরাজ আংকেলের। ফোন ধরে বলে, – হ্যালো আংকেল। বলে পরের কথা আর বলে না।
মিরাজ প্রশ্ন করলেন, – তুমি নাকী এদিকে এসেছ। মারীয়া তোমাকে বাসার ঠিকানা পাঠিয়েছে। চলে আস। কতদূর আছ?
আংকেল, ঠিকানা দেখে মনে হল এই কাছেই আপনার বাসা। আসছি এখনই।
আসো। আমরা অপেক্ষা করছি। সাথে কি কেউ আছে? না একা?
হাজী ক্যাম্প থেকে উত্তর দিকে যেতে আসকানের রাস্তা পুরোই অটো রিক্সা আর সবজি ওয়ালাদের দখলে দেখে ইমরান ক্ষেপে বলে এসব ফেরিওয়ালা ঢাকা শহরের ফুটপাথ সব দখল করে ধুমছে ব্যবসা করছে। এদের একটা ব্যবস্থা তার নিতে হবে। ওরা মনে করে রাস্তায় ওদের ছাড়া অন্য আর কোন যান চলতে পারবে না।
একটু সামনে যেতেই দেখে এক লোক বড় মোটা লাঠি দিয়ে অটো গুলোর পিছন দিকে বডিতে ঠাস ঠাস করে বাড়ি দিচ্ছে আর খারাপ গালি দিয়ে ওদের এক লাইনে আসতে বলছে। ইমরান সামনে এক চায়ের দোকানে গিয়ে মোবাইলে পাঠানো ঠিকানা দেখিয়ে জানতে চায়, – আচ্ছা ভাই আমি একটা ঠিকানা খুঁজছি। দেখেনতো কোন দিকে হতে পারে এই ঠিকানাটা?
চায়ের দোকানে সামনের দিকে কাঠের লম্বা এক বেঞ্চে তিনজন লোক বসে চা খাচ্ছিল। তাদের মধ্যে একজনের এক হাতে সিগারেট। সে সিগারেট মুখে দুই ঠোঁটে গুজে তাকে ঠিকানা দেখানোর ইশারা করেন। ইমরান তার মোবাইলে একটু লাইট বাড়িয়ে লোকটির সামনে তার মোবাইল ধরে।
সিগারেটে বড় এক টান দিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে ধূয়া পিছন দিকে ছেড়ে মোবাইল হাতে নিয়ে এমন ভাব করে, দেখে মনে হবে এলাকার সব ঠিকানা তার মূখস্থ। কিছুক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে ধূয়া ছাড়তে ছাড়তে মুখ বাঁকা করে মোবাইল ফিরিয়ে দিয়ে বলে, – আপনি সামনে গিয়ে দোকান গুলোকে জিজ্ঞেস করেন। দোকান গুলোর কাছাকাছিই হবে। একটা বড় দালানকে লক্ষ্য করে বলেন, আমার মনে হয় ঐ দালানটা হবে।
একজন পাশ থেকে প্রশ্ন করেন, – কার বাসায় যাবেন?
ইমরান উত্তর দেয়, – মিরাজ সাবের বাসা।
জমজম টাওয়ারে তার ব্যবসা আছে?
জি, ঠিক ধরেছেন।
আমার পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন। কো থেকে আসছেন?
ইমরান আর কোথেকে আসছে তার উত্তর দেয় না। নিজের মত ওখান থেকে হেটে দুই কদম সামনে আসতেই মিরাজকে নিয়ে ওনারা আলোচনা করতে শুরু করেন। প্রতিদিন সকালে আমাদের সাথে মাঠে যে ব্যায়াম করেন ঐ লোকের কথা বলছে। কিছুদিন মনে হয় বিদেশে ছিলেন। লোক খুব ভাল। প্রতিদিন নামাজ কালাম পড়েন। এক ছেলে এক মেয়ে আছে তার। মেয়ে বিয়ের বয়স হয়েছে।
ইমরান এটুকু পথ না পেরোতে যেটুকু আলাপ শুনতে পায় সেটুকুতে বুঝতে পারে তার মিরাজ আংকেল যে এলাকায় বেশ পরিচিত। নিঃসন্দেহে সামাজিক কর্মকান্ড করেন, না হলে লোক গুলো তাকে চিনতো না। একটু দূরে যেতেই সেখানে বসে থাকাদের একজন ইমরানকে ডেকে বলেন, সামনে গেলে বামদিকে দেখবেন বড় একটা গেইট। ওই গেটে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দিবে। ভিতরে কয়েকটা বিল্ডিং আছে। শেষ বিল্ডিংয়ে উনি থাকেন। আপনি যান গেইটে দাঁড়োয়ান আছে। গেলেই বলে দিবে আপনাকে।
হাটতে হাটতে ইমরান সেই বড় গেইটের দিকে এগিয়ে যায়। রাস্তায় সারাক্ষণ অটোর শব্দ। থেকে থেকে রাস্তার মাঝখানে যাত্রী তোলা বা নামানোয় সাময়িক রাস্তায় জ্যাম লাগে। খুব বেশী হলে পাঁচ মিনিটের পথ। গেইটের সামনে যেতে দেখে গেইটের এক পাট খুলে দাঁড়োয়ান বাইরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হয় কোন গাড়ি কেবল বেরিয়ে গেছে, না হয় বাইরে থেকে গাড়ি ভিতরে ঢুকবে। কিন্তু সামনে বা ভিতরে কোন গাড়ি না দেখে ইমরান সরাসরি ভিতরে ঢুকে দাঁড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করে, – এখানে মিরাজ মিয়া থাকেন কোন বিল্ডিংয়ে?
দাঁড়োয়োন উল্টো প্রশ্ন করে, – কোথেকে এসেছেন? বলে কাছে একটা ছোট টোন ঘরে গিয়ে বড় লম্বা এক খাতা খুলে প্রশ্ন করে, – আপনারা আসার আগে কি ফোন করে কথা বলেছেন?
ইমরান কোন কথা বলে না। লোকটি খাতা খুলে সেটার সাথে অপরিষ্কার মোটা সূতা দিয়ে বাধা একটা বল পয়েন্ট পেন এগিয়ে দিয়ে খাতায় তাদের নাম লিখতে বলে পাশে রাখা সাদা ইন্টারকম সেট হাতে নিয়ে কল করে। কল করে বলছে, আপনাদের দু’জন গেষ্ট এসেছে। উপরে পাঠিয়ে দিব নাকী?
ইমরান খাতার পাতায় লেখা অন্যদের নাম লেখার নীচে তার নাম লিখে কার সাথে দেখা করবে তার নাম, কোথেকে এসেছে, সেই ঠিকানা, প্রবেশের সময় এবং তার মোবাইল ফোন নম্বর লিখে সামনে এসে দাঁড়ালে লোকটি তার ফোন সেট পাশে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রেখে নোট খাবাটি টেবিলের একদিকে সরিয়ে রেখে ইমরানকে বলেন, – সামনে গিয়ে দেখেন দুইটা বিল্ডিং পর তৃতীয় বিল্ডিংএর সামনে একটা টেবিল রাখা আছে। ঐ বিল্ডিংয়ের তিন তলায় উঠে হাতের বাম দিকের দরজাই আপনার মিরাজ সাহেবের বাসা। তিন তলায় উঠে দরকার হলে ওনার মোবাইলে ফোন দিবেন উনি বের হয়ে নিয়ে যাবেন।
ইমরান তার বন্ধুকে নিয়ে সামনের দিকে হাটতে থাকে।
(চলবে) —–