ইমরান পিকনিক থেকে আসার পর মারীয়াদের সাথে বেশ কিছুদিন আর যোগাযোগ করেনি। একদিন তার মাকে কৌশলে রাজী করে মারীয়াদের বাসায় নিয়ে গেল। মারীয়া সেদিন বাসায় ছিল না। সারাদিন মারীয়ার জন্য অপেক্ষা করার পরও সে বাসায় ফিরছিল না। মারীয়ার দেরী দেখে ইমরান জানতে চাইলে তার মা জানালেন, কোন এক বান্ধবীর বাসায় যাবার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়েছে। তাদের বাসায় যাবার পর যখন শুনেছে মারীয়ার ফিরতে দেরী হতে পারে তখন মন ভখারাপ করে ইমরান। সন্ধ্যার পর কয়েকবার ফোন করেছে সে মারীয়াকে। মারীয়া তার ফোনের কোন রেসপন্স করেনি।
মারীয়ার মা কিছু না বললেও মারীয়ার বাবা ইমরান আর তার মাকে অনুরোধ করেন আজ রাত থেকে যেতে। মেয়ে তার বান্ধবীদের সাথে বেরিয়েছে ফিরতে দেরী হবে বলে গেছে সুতরাং কিছু তো বলা যাচ্ছে না। এমন তো সে সাধারণত কোনদিন করে না।
অনেক সময় পর মারীয়া তার মাকে ফোন করে বলে, সে রওনা দিচ্ছে। ফিরতে আরো ঘন্টা খানেক দেরী হতে পারে। এই ম্যাছেজ ইমরানকে বললে সে বলে ঠিক আছে আন্টি আমরা না হয় আজ চলে যাই। ভেবেছিলাম আমরা সবাই মিলে একদিন নুহাশ পল্লীতে যাবো। সেখানে সাড়াদিন কাটাবো। সে বিষয়েই আলাপ করতে চেয়েছিলাম মারীয়ার সাথে। মারীয়া নেই, ওর মতামত তো নেওয়া দরকার। ওর যদি কোন প্রোগ্রাম থাকে সেদিন তাহলে তো যেতে পারবে না। তাই ওকে বলে ওর সময় এবং সিডিউল জেনে জানাবেন।
বিদায় নেবার আগে শেষ বারের মত মারীয়ার মা তাদের জন্য চা তৈরী করে সামনে পরিবেশন করছিলেন। এমন সময় কি মনে করে ইমরান মারীয়ার রুমে গিয়ে তার বই খাতা নেড়ে দেখে। টেবিলে চা দিলেও ইমরান মারীয়ার ঘর থেকে বের না হওয়ায় মারীয়ার মা এগিয়ে গিয়ে দেখার চেষ্টা করেন ইমরান কি করছে মারীয়ার ঘরে একা।
বেশী দূর না এগিয়ে ইমরানকে ডাকেন চা খেতে। এমন সময় বইয়ের মাঝখানে দেখে ইমরানের ছবি। ছবি দেখার পর অবাক হয়ে ছবিটি দেখে, তার আন্টিকে বলে, – আন্টি আমি চা খাবো না। এখন চায়ের রুচী নেই, তাছাড়া পেট ভরা।মারীয়া ফোন করেছিল। ওর আসতে আর একঘন্টা সময় লাগতে পারে বলল। আমি তোমাদের কথা বলেছি। তোমরা আগে ফোন করে জানিয়ে আসলে তো এমনটা হতো না। মারীয়া শুনে বেশ আফসোস করছে।
এক ঘন্টাইতো, বেশী সময় না। আমরা না হয় এটুকু সময় অপেক্ষা করি। আসুক, মা দেখা করে যেতে পারবে। বলার পর তার আন্টি বের হয়ে চলে যান। সাড়াদিন প্রায় ইমরানের মায়ের সাথে অনেক কথা বলেছেন মারীয়ার মা। অথচ একবারও তার মেয়ে প্রসঙ্গে কোন কথাই বলেন নি। এবার চা খেতে বসে তারা মারীয়া আর ইমরানের বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেন। ওদের বিষয় বলতে ওরা যে যোগাযোগ করছে নিয়মিত সেটাই বলা। বিয়ে প্রসঙ্গে কোন কথাই বলেন নি কেউ।
মারীয়ার বই থেকে ইমরান তার ছবি বের করে দেখে আর ভাবে, কোথেকে নিতে পারে তার এই ছবি। ছবিটি তার একই ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী শারমিনের সাথে বসে তোলা। সেটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দুজনে বেশ অন্তরঙ্গ অবস্থায় কথা বলার মূহুর্তে কেউ গোপনে তুলতে পারে। ফেইসবুকে এমন কোন ছবি সে পোস্ট দেয় নি। বিষয়টি নিয়ে ইমরান বেশ চিন্তায় পড়ে।
তখনই ভাবে, নিশ্চয় মারীয়ার পরিচিত কেউ তাদের সাথে একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। হয়তো ইমরানকেও সে চিনে। মাঝে মধ্যে তাকে খেয়াল করে নিশ্চয়। ওদের কেউ হয়তো দেখে দূর থেকে ছবিটি তুলতে পারে। আজকাল সবার হাতেই স্মার্ট ফোন রয়েছে। এই স্মার্ট ফোনে চাইলেই যে কোন সময় যে কারো ছবি যে কোন মূহুর্তে তুলে সাথে সাথে ফেইসবুক কিংবা অন্য কোন এ্যাপস এর মাধ্যমে কারো কাছে পাঠাতে পারে।
ছবিটি দেখে তার ভিতর কিছুটা অস্থিরতা জাগে। মারীয়া যদি এ নিয়ে কোন প্রশ্ন করে তাহলে কি উত্তর দিবে, কেনই বা সে এই ছবি সংগ্রহ করেছে এমন প্রশ্ন করে নিজে নিজেকে। এরপর উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করে, যা সে মারীয়াকে দিবে। মারীয়া সেই উত্তর শুনে শান্ত হবে কি না বুঝতে পারে না। ভেবেছিল তার বই খাতার ভিতর থেকে অন্য কোন ছবি পাবে। এমন তো হতে পারতো কোন অপরিচিত আগুন্তকের সাথে মারীয়ার ছবি সে লুকিয়ে রেখেছে। যা নিয়ে সে মারীয়াকে প্রশ্ন করবে কিন্তু বিষয়টি হয়ে গেল উল্টো। তাই মন খারাপ করে টেবিল থেকে উঠে কিছু সময় জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থেকে বেরিয়ে যায়।
ছবিটি যেখানে পেয়েছে সেখানে রেখেই উঠে টেবিলে যায় সবার সাথে চা খেতে। চুপ করে বসে থাকলে মারীয়ার মা জিজ্ঞেস করেন, তাকে চা দিবে কিনা?
মাথা নেড়ে সায় দিয়ে তার মায়ের দিকে তাকায়। ইমরানের চোখে যেন অজানা প্রশ্ন খেলা করছে। তার মা বললেন, – মারীয়া মনে হয় চলে আসবে। দেখা করেই যাই, কি বলিস?
আমি কি বলবো, তোমার ইচ্ছে। বলেই মারীয়ার মাকে বলেন, – আন্টি আমি কিন্তু মাকে বলে রাজী করিয়ে রেখেছি। আগামী শুক্রবারের পরের শুক্রবার চলেন আমরা সবাই যাই নুহাশ পল্লী ঘুরে আসি।
আমরা তো যাবার জন্য প্রস্তুতই। দেখ তোমার আংকেলের সাথে আলোচনা করে। একটা বড় হায়েজ গাড়ি নিয়ে গেলে সবাই মিলে যেতে পারবো।
মারীয়াকে আপনি বলে রাজী করবেন।
ও তো সেদিন বললই।
হায়েজ গাড়িতে দশজন যাওয়া যাবে। আপনারা পাঁচ জন আমরা দুইজন হল সাতজন। মার্টিনকে যদি সাথে নেই তাহলে আটজন। ড্রাইভার। বাকী থাকে আরেকজন। মামীকে বলে নিয়ে যেতে পারেন।
তোমার মামী তো গ্রামে থাকে। আসতে চাইবে কি না? বলছ যেহেতু, বলে দেখতে পারি।
এখনওতো দুই সপ্তাহ সময় আছে। আগে থেকে বলে রাখলে আগের দিন চলে আসবে। সকালে সবাই গিয়ে সেখানে সাড়াদিন থেকে বিকেলে ফিরে আসতে পারি।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া কি করবে?
ভিতরেই খাবার ব্যবস্থা আছে। আমি সব খোঁজ নিয়েছি। আর গেইটে প্রতিজনের সম্ভবত দুইশ টাকার টিকিট করতে হয়। বাচ্চাদের ফ্রি। আমরা আধা বেলা ঘুরে পুরো নুহাশ পল্লী দেখে শেষ করতে পারবো। তবে গাড়ি নিয়েই যাবো যেহেতু, আস্তে ধীরে বেড়িয়ে সেখানে ছবি তুলে সন্ধ্যায় রওনা দিলেও আটটার আগেই বাসায় ফিরে আসতে পারবো।
গেইটে কলিং বেলের শব্দ। মারীয়ার মা বললেন, – মারীয়া এসেছে সম্ভবত। অন্য ঘরে নাহিয়ান আর তার ছোট ভাই বসে সম্ভবত গেম খেলছিল মোবাইলে বা আই প্যাডে। ওদের উদ্দেশ্য করে ডেকে বললেন, – এই দেখতো দিদি এসেছে মনে হয়। গেইট খুলে দে।
বাইরে থেকে লকার ধরে মোচরাতে থাকলে মারীয়ার মা চেচিয়ে বলেন, – এই, রাখো না, খুলছে তো। বলেই আবার বললেন, – এই তোরা দুইজনে কি করছিস? তাড়াতাড়ি গেইট খুলে দে।
ইচ্ছে করলে উনি নিজেই খুলে দিতে পারতেন। কিন্তু তা না করে নাহিয়ানদের ডেকে খুলে দিতে বললে ইমরান তার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবে, – মেয়ে আসছে, কোথায় দৌঁড়ে গিয়ে গেইট খুলে দিবেন, তা না করে বসে ছোটদের অর্ডার দিচ্ছেন। ভাবতে ভাবতে নাহিয়ান উঠে এসে গেইট খুলে দেয়। মারীয়া ভিতরে এসে বসার ঘরে তাদের দেখে থমকে দাঁড়ায়। সামনেও আসে না পিছনেও যায় না। মারীয়ার মা মারীয়াকে বলে, – তোর আন্টিকে সালাম কর। এমন করে হা করে হাবার মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
মারীয়া কপালের কাছে হাত নিয়ে বলে, – স্লামালাইকুম আন্টি। কখন এসেছেন? অনেকদিন পর আসলেন আমাদের বাসায়। ভালো আছেন আপনি?
ইমরান মারীয়াকে এক নিঃশ্বাসে কথা বলতে দেখে ভাবে, সে একবারও তার দিকে তাকিয়ে দেখলো না। ভেবে মনে মনে কষ্ট পেতে থাকে।
(চলবে)……….