নাহিয়ান গেইট লাগিয়ে আবার তার ঘরে চলে যায়। তার তাড়া দেখে মনে হচ্ছিল গেইম অর্ধেক রেখে এসেছিল, হয়তো মজার মূহুর্ত পর্যন্ত এসে থামিয়ে রেখেছে। আবার গিয়ে তাকে শুরু করতে হবে। কেউ তার দিকে নজর দেয়নি। মারিয়া সালাম দিলে তার বাবা বললেন, – ঘরে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে আসো। তোমার আন্টি এতদিন পর আসছে দেখ রাতে আবার খাইয়ে দিতে পার কি না।আন্টি আজকে থেকে যাবেন।
তুমি কোথায় গিয়েছিলে?
আন্টি আমার ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম।
কোন ইয়ারে পড়ছ?
বিবি এ সেকেন্ড সেমিস্টারে আন্টি। মা বলল আপনি নাকী কলেজে পড়ান?
মারীয়ার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললেন, – শোন, আজ তুমি বরং চলো আমাদের সাথে। বাসায় থেকে কাল সকালে না হয় আমাদের বাসা থেকেই ক্লাসে যেয়ো।
আজ না আন্টি। অন্যদিন না হয় যাবো। আজ শরীর খুব ক্লান্ত। বলে সে তার নিজের ঘরে চলে যায়।
মারীয়া ফ্রেস হয়ে আসতে আসতে তাদের চা খাওয়া হয়ে যায়। ইমরান খুব ন¤্র ছেলের মত চুপচাপ বসে থাকে। সারাদিনে ইমরানের বাবার প্রসঙ্গ নিয়ে কেউ কথা বলেন নি। শেষ বেলা যাবার সময় মারীয়ার বাবা জানতে চাইলেন, – ভাবী ইমরানের বাবা কি বিদেশেই জীবন কাটিয়ে দিবেন নাকী?
আপনিই তো ভালো জানেন তার কথা। সে যে কেনো দেশে আসতে চান না জানি না। উল্টো আমাকে আজকাল বলছেন, তার ওখানে চলে যেতে। আপনিই বলেন দেখি, দেশে এই যে কলেজে পড়াচ্ছি শত শত ছেলে মেয়েদের পড়িয়ে মানুষ করছি এর চেয়ে আনন্দের আর ভালো পেশার আর কোন কাজ হতে পারে? বিদেশ গিয়ে ভাল থাকা যায় জানি, জীবনের নিরাপত্তাও আছে। কিন্তু তার বাইরেও যে জীবন আছে সেটা বোঝার মত জ্ঞান না থাকলেও মন থাকতে হবে। বিদেশ লাইফটা আমি স্বার্থপরের জীবন মনে করি। আমার কাছে সত্যিই খুব স্বার্থপর মনে হয়। সংসার পরিজন রেখে একা সুখে শান্তিতে থেকে মাস শেষে কিছু টাকা পাঠালেই কি সব হয়ে যায়?
মারীয়া ঘর থেকে বের হয়ে আসে। এসে ইমরানের মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে বলে, – আপনারা যে আজকে আসবেন তা আগে বলে আসলে তো আমি কোথাও যেতাম না।
শোন, ইমরান তোমার খুব প্রশংসা করছিল।
ইমরানের কথা বলাতে মারীয়া থেমে যায়। এবার মায়ের কাছে গিয়ে জানতে চায়, চা আছে কি না?
চা বানিয়ে খেতে হবে বলে বললেন, – তোর আন্টিরা চলে যাবেন বলছে, ওনাদের যাবার পর বানিয়ে দিচ্ছি।
ফিস ফিস করে মা মেয়ের কথায় ইমরানের মা কান দিলেন। কথা বলার সুযোগ পেয়ে প্রশ্ন করলেন, – তোমরা শুনেছি হুমায়ুন আহমেদ স্যারের নুহাশ পল্লীতে যাবে বেড়াতে? আমি তো শুনেছি ওখানে কিছু গাছ পালা আর স্ট্যাচু ছাড়া দেখার কিছু নেই। এর চেয়ে বরং দু একদিনের জন্য ঢাকার বাইরে কোথাও বেড়াতে যেতে পারো।
মারীয়ার সেদিকে খেয়াল নেই। তার মা উচ্চ স্বরে বলেন, – তোর আন্টি তোকে কি বলছে, তার উত্তর দেস না কেন।
আন্টি আমার পড়াশোনার চাপ এখন বেশী। আমি কোথাও যাবো না। আপনারা যান বেড়িয়ে আসেন।
মারীয়ার মধ্যে আগের মত কোন আগ্রহ দেখতে না পেয়ে ইমরান ওর দিকে তাকিয়ে দেখে মারীয়া কোন ভাবে তার দিকে তাকায় কি না। সবার চা খাওয়া শেষ হলে, ইমরান তার মাকে বের হবার তাড়া দিয়ে বলে, – মা, চলো বের হই। শেষে রাত বেশী হবে।
ঢাকা শহরে রাত আর দিন কি আবার।
কালকে আমার ক্লাস আছে আন্টি। বলেই তার মাকে বলে, – মা চলো। বলে বিদায় নেবার চেষ্টা করলে মারীয়ার মায়ের চোখে ইমরান আর মারীয়ার মধ্যে কেমন অভিমান ভাব লক্ষ্য করে বলেন, – কিরে মারীয়া, তোর ইমরান ভাইয়া আগামী সপ্তাহের পরের সপ্তাহে নুহাশ পল্লীতে যাবার কথা বলছে। তুই যদি না যাস তাহলে এই প্রোগ্রামের কোন মানেই হয় না। তোর ইচ্ছা দেখেই তো আমরা এই প্রোগ্রাম করার কথা বলছি।
না মা, আমি যাবো না। আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।
এ কি? তুই না আমাকে এত বিরক্ত করতিস? হঠাৎ আবার কি হলো তোর। আমরা সবাই তো যেতে চাইছি। তোর মামীকে ভাবছি আগের দিন চলে আসতে বলবো।
মা, আগে স্যারের সম্পর্কে অনেক কিছু না জেনে, যাবার জন্য পাগল ছিলাম। এখন আমার বান্ধবীরাও ওনার সম্পর্কে ভালো বলে না।
কেন কি হয়েছে?
স্যার তার মেয়ের বান্ধবীকে বিয়ে করে তার আগের স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন তুমি তা জান? তার আগের স্ত্রীর নাম গুলতেকিন। খুব ভালো মহিলা। ওনার কারণেই শুনেছি স্যার এত কিছু করতে পেরেছেন। যারা লেখালেখি করেন তাদের চরিত্র একটু আধটু এমনই হয় শুনেছি। তাই বলে মেয়ের বান্ধবীর সাথে সম্পর্ক করে তাকে বিয়ে করবেন?
তোর না যাওয়ার পিছনে এটাই কি মূল কারণ নাকী অন্য কিছু আছে?
না মা আমার অন্য কোন কারণ নেই।
ইমরান মনে মনে ভাবে, তার সেই ছবিটাই কি মূল কারণ কি না? ভাবে, তাকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে দেখানো কি ঠিক হবে? না কী চেপে যাবে ছবির বিষয়টি? এটা নিয়ে কথা বললে আরো বেশী মাইন্ড করতে পারে তার অবর্তমানে বইখাতা ঘাটার কারণে। তাই চেপে গিয়ে বলে, – মারীয়া আগামী শুক্রবারের পরের শুক্রবার নুহাশ পল্লী যাবার প্রোগ্রাম করছি। পরে আবার না করতে পারবে না।
না, আমি যাবো না। এখনই বলে রাখছি। পরে শেষে আবার কিছু বলতে পারবেন না।
দুজনের রাগান্বিত ভাবে কথা বলতে শুনে মারীয়ার বাবা প্রশ্ন করেন, তোদের আবার কি হয়েছে?
কিছু হয়নি বাবা। তুমি এসব নিয়ে ভেবো না। এসবে কান দিতে গেলে শেষে মুসকিল।
দু’জনের কথার কোন কিছু বুঝতে না পেরে ইমরানের মা বললেন, – শোন, তোমাদের বিষয় তোমরাই ভালো বোঝ, আমরা আজ উঠি। তোমাকে দেখে যাবার ইচ্ছে ছিল, দেখা হয়েছে ভালো লাগলো। তাহলে কি নুহাশ পল্লীতে আমরা সবাই মিলে যাচ্ছি?
মারীয়া কোন হ্যাঁ না উত্তর করে না। এ নিয়ে তাদের মধ্যেও আর কথা বাড়ে না। উঠে গেইটের কাছে গেলে মারীয়ার মা নাহিয়ানকে ডেকে বলেন, – নাহিয়ান, তোর আন্টি চলে যাচ্ছে। আয়, আন্টিদের বিদায় দে।
থাক ওরা ভিতরে খেলছে মনে হয়। ওদের খেলার ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না। আমরা আসি তাহলে। বলে মারীয়ার মার সাথে ইমরানের মা হাগ করেন। মারীয়ার বাবা এগিয়ে এসে প্রশ্ন করেন, – গাড়ি ঠিক করে দিতে হবে? বলেই আবার নাহিয়ানকে ডাকেন, – নাহিয়ান, এই নাহিয়ান।
নাহিয়ান দৌড়ে আসে। আসলে তার বাবা বলেন, – তোমার আন্টিদের জন্য একটা উবার ডেকে দেও তো। বলেই ভিতরে গিয়ে তার মানিব্যাগ খুলে একটা একহাজার টাকার নোট বের করে নাহিয়ানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, – যাও নীচ পর্যন্ত। গিয়ে গাড়ি ঠিক করে দিয়ে গাড়ির ভাড়া দিয়ে আসো।
ইমরানের মা না করলেও নাহিয়ান আগে দৌঁড়ে নীচে চলে যায় টাকা নিয়ে। পরে ইমরান আর তার মা নামতে থাকে। নামার সময় সিঁড়িতে এসে একটু পরপর উপর দিকে তাকায়। সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামছিলেন, মারীয়া আর তার মা উপর থেকে ইমরানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
(চলবে) —–