শুক্রবার সকাল সকাল নাস্তা সেড়ে ইমরান ফোন দেয় মারীয়ার বাবার মোবাইল নাম্বারে। ফোন করে বলে, – আংকেল আমরা নয়টার মধ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে যাবো। আসতে যতটা সময় লাগে। আপনারা দশটার মধ্যে রেডী হয়ে থাকবেন।
মারীয়ার বাবা ফোন রেখে মারীয়ার মাকে বলেন, – ইমরান ফোন করে বলল, নয়টার সময় ওরা ঘর থেকে রওনা দিবে, দশটায় আমাদের রেডী থাকতে বলেছে। তখনও মারীয়া নাহিয়ান ওরা ঘুমুচ্ছিল। তাই ওদের ডেকে তুলে প্রস্তুত হবার কথা বললেন। এরপর নীচে গিয়ে হেটে আসার কথা বলে গায়ে শার্ট পরতে পরতে গেইটের কাছে যান।
আগের দিন মারীয়ার মামী আনিকা এসেছে। সেও কেবল ঘুম থেকে উঠে রান্না ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। মিরাজকে বাইরে যেতে দেখে অনুরোধ করে বলে, – দুলাভাই, আমার মোবাইলে একশ’ টাকা ফ্ল্যাক্সি করে দিতে পারবেন?
মিরাজ মুখে কোন কথা না বলে ঘুরে দাঁড়ায়। ঘুরে দাঁড়ালে আনিকা ভিতরে যে ঘরে তার ব্যাগ রাখা আছে সেই ঘরে যায় টাকা আনতে। কি মনে করে মিরাজ আনিকাকে ডেকে বললেন, – আমি দিলে পরে দিয়ে দিও। বলে বেরিয়ে যান। আনিকা টাকা নিয়ে এসে দেখে তার দুলাভাই বাইরে বেরিয়ে গেছেন। মারীয়ার মাকে প্রশ্ন করেন, – ওরা যে আসবে, কয়টার সময় কিছু বলেছে আপা?ফোন করেছিল বললো তো, দশটার সময় প্রস্তুত থাকার কথা বলেছে তোমার দুলাভাইকে।
তখন বাজে কেবল সাড়ে আটটা। বাশি মুখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিছু সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে মারীয়াকে ডেকে তোলে। মারীয়া প্রথম না যাবার অযুহাত খুঁজছিল। তার মামী তাকে বলে বুঝিয়ে ঘুম থেকে তুলে প্রস্তুত হতে বলে নাহিয়ানদের ডাকতে যান। গিয়ে দেখেন নাহিয়ানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমুচ্ছে তার ছোট ভাই। গায়ে হাত দিয়ে ডাকতেই চমকে উঠে নাহিয়ান।
ঘুম থেকে উঠলেও কারো মধ্যে কোন তাড়া নেই। মারীয়া তার মার কাছে গিয়ে আবদারের ভঙ্গীতে বলে, – মা, আমি না গেলে হয় না? আমার না কেন যেনো যেতে মন চাইছে না।
এখন এই কথা। তোর মামী না সকালে তোকে বলে রাজী করিয়েছে?
আসলে আমার নুহাশ পল্লীতে যাবার আগ্রহ কেনো যেনো একদম আর নেই। বলছো তাই যেতে পারি। তবে শর্ত একটা আছে। যাবার পর ছবি তোলা আর তোমাদের মত করে দলে থেকে কিছু করতে বলবে না আমাকে। আমি আমার মত মামীকে নিয়ে আলাদা ঘুরে বেড়াবো। বলে সে তার রুমের ভিতর গিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে। বেশ সময় নিয়ে বের হয়ে মারীয়া আবারো তার মার কাছে গিয়ে নাস্তা চেয়ে জানতে চায়, – ইমরান আর তার মা কখন আসবে?
মারীয়ার মা বলেন, – দশটার মধ্যে প্রস্তুত থাকার কথা বললেও সাড়ে দশটা বাজতে পারে হয়তো। টেবিলে নাস্তা দিয়েছি, দেখ। নাহিয়ান আর তার ছোট ভাইও ফ্রেস হয়ে টেবিলে এসে বসে তার মার কাছে চা চেয়ে বলে তাদের ডিম অমলেট করে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে মারীয়ার বাবা এসে বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, – শুক্রবার দিন মনে করেছিলাম এত সকালে বাজারে ভীড় হবে না বুঝি, গিয়ে দেখি দুনিয়ার ভীড়।
হাতে একটা চটের ব্যাগ, ব্যাগ ভর্তি বাজার। রান্না ঘরের সামনে রেখে বলেন, – তোরা তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে নে। ইমরান ফোন করেছিল, ওরা রওনা দিয়েছে বলল। রাস্তা খালি থাকলে দশটার আগেই চলে আসবে। বলেই মারীয়ার মাকে গরম পানি করে দিতে বললেন, গোসল করবেন।
আনিকা ফ্রেস হয়ে মেক আপ করে বাইরে এসে তার দুলাভাইকে বলছে, – আজকে তাকে পাঞ্জাবী পড়তে। শুক্রবারদিন। পড়লে তাকে নুহাশ পল্লীতে হিমু হিমু মনে হবে।
মারীয়ার বাবার প্রশ্ন, – হিমু মানে?
ওমা, হিমু সম্পর্কে তুমি জান না? নুহাশ পল্লীতে যাবে অথচ হুমায়ুন আহমেদ স্যারের হিমু সম্পর্কে জান না এটা তো হয় না।
জানি না তো কি বলবো? তোমরা তার লেখা পড়েছ তাই জান। আমি তো তার কোন বই পড়ি নাই। টিভিতে একসময় তার নাটক দেখতাম।
ঠিক আছে দুলাভাই আপনার জানার দরকার নেই। আমি বললাম পাঞ্জাবী পড়তে হবে, তাই পড়বেন। বাকীটা নুহাশ পল্লীতে গিয়ে বলবো। মারীয়াও নতুন যে ড্রেস সেদিন কিনেছ সেটা পড়বে, বুঝেছ? আমি নীল শাড়ি পড়বো। আপা তার পছন্দের শাড়ি পড়বে।
মারীয়ার প্রশ্ন, – নাহিয়ান কি পড়বে? একটু থেমে আবার প্রশ্ন, – আর পিচ্ছি?
মারীয়ার মা বললেন, – চুলায় পানি দিয়েছি। এর মধ্যে নাস্তা করে ফেল। ওরা আসতে আসতে গোসল করে রেডী হতে পারবে।
যে যার মত নাস্তা করে ঘরে গিয়ে রেডী হতে থাকলে মারীয়ার মা আনিকা আর মারীয়ার বাবা নাস্তা করতে করতে সাড়াদিনের পরিকল্পনা করেন। মাঝ পথে গাজীপুর চৌরাস্তার কাছে তার এক বন্ধুর বাড়ি, আসার সময় বিকেলে সেখানে যাবে। পরিকল্পনা করে গোসলে যাবার প্রস্তুত হলে ইমরানের ফোন আসে। তারা মহাখালী ক্রস করেছে। বলল, – মার্টিনকে আনতে গিয়ে তাদের একটু দেরী হয়ে গেছে। তবে রাস্তা ফাঁকা, আসতে বেশী সময় লাগবে না। পারলে সবাই যেন নীচে নেমে দাঁড়ান।
কথা শেষ করে সবাইকে ফোনালাপের বিষয় জানিয়ে নিজে গোসলে ঢুকে যান। তাড়াতাড়ি করে গোসল সেরে বেরিয়ে এসে কাপড় চায় আনিকার কাছে। আনিকা তার পড়ার কাপড় এনে দিলে পড়ে নেন।
সবাই কাপড় পড়ে রেডী হলে মারীয়ার মা সবাইকে টেবিলের উপর রাখা ছোট পলিথিনের ব্যাগে ভরা কিছু খাবার সেগুলো নিয়ে নীচে নামতে বলেন। ব্যাগে রয়েছে তাদের সেখানে গিয়ে খাবার জন্য কলা, পিঠা, বাদাম আরো কিছু হাল্কা খাবার। নাহিয়ান আর তার ভাই আগে নীচে নামলেও মারীয়া তার মা আর আনিকার সাথে যাবার জন্য বসে থাকলে তার বাবা বললেন, – আমি নীচে যাই। তোমরা তাড়াতাড়ি আস। বলেই বেরিয়ে চলে যান।
নীচে যাবার একটু পরেই বড় গেইটের সামনে একটি সাদা হায়েজ গাড়ি এসে থামে। থেমে হর্ণ দিতে থাকে ভিতর থেকে যেন খুলে দেয় গার্ড। মারীয়ার বাবা দেখে গার্ড ম্যানকে ইশারা করে গেইট খুলে দিতে বলেন। গার্ডম্যান গেইট খুলে দিলে গাড়ি টেনে তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থামলে মার্টিন তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে মারীয়ার বাবার সামনে এসে তাঁর সাথে হ্যান্ডশেক করে। এরপর নাহিয়ানদের গাড়িতে উঠে বসতে বলে।
হ্যান্ডশেক করে মার্টিন এদিক সেদিক তাকিয়ে আনিকাদের খোঁজছিল। কাউকে তখন দেখতে না পেয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে আনিকা আসছে না কেন। এরপর মার্টিন প্রশ্ন করে, – আংকেল মারীয়া ওরা যাবে না?
ওরা আসছে। বলতে বলতে গাড়ি থেকে ইমরান আর তার মা নেমে এসে মারীয়ার বাবাকে সালাম দেয়। এরমধ্যে আনিকা আর মারীয়া নীচে নেমে আসে। আনিকা এসে মার্টিনকে বলছে, – ভাই আপনার জন্য উপরে অপেক্ষা করছিলাম। ভেবেছি এসে আমাদের নামিয়ে নিতে আসবেন। আপনার জন্য গ্রাম থেকে চলে এলাম আর আপনি এখান থেকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে পারলেন না আমার জন্য?
মারীয়ার মা আস্তে আস্তে নীচে নেমে আসলে ইমরানের মা এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে তার কাধে হাত রেখে বললে, – আপনাকে তো বেশ মানিয়েছে ভাবী। সত্যি খুব সুন্দর লাগছে। আপনাদের মত এমন সুন্দরী জোড়া দেখেই হুমায়ূন আহমেদ লিখতে অনুপ্রানিত হয়েছিলেন মনে হয়।
রসিকতা করতে করতে সবাই গাড়িতে উঠে বসলে ইমরান সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে গিয়ে বসে। সবার সব কিছু ঠিক আছে কী না তা দেখে ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলে ইমরান।
(চলবে) —-