তাকবীরে তাশরীক কোন ঘটনা থেকে শুরু হয়েছে তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই অধিক জানেন৷
তবে যতদুর জানা যায় তা হলোঃ হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন তার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে কুরবানী করার জন্য মাটিতে শুয়ায়ে তার গলায় ছুড়ি চালাচ্ছিলেন, ঠিক সে মূহুর্তে আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাঈল (আঃ) কে নির্দেশ দিলেন যে, একটি জান্নাতী দুম্বা নিয়ে দ্রুত হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর কাছে পোঁছার জন্য৷ তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) খুব দ্রুত আসছিলেন৷
কিন্তু দূর থেকেই দেখতে পেলেন হযরত ইবরাহীম (আ:) তার পুত্রের গলায় ছুরি চালাচ্ছেন৷
তখন জিবরাঈল আঃ আশংকা করলেন যে, তিনি পৌঁছার পূর্বেই বুঝি ইসমাঈল (আঃ) জবাই হয়ে যাবেন৷ তাই তিনি ঘাবড়ে গিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন-
الله أكبر، الله أكبر،
হযরত জিবরাঈল (আঃ) এর তাকরীর শুনে হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলে উঠলেন-
لا إله إلاالله والله أكبر،
আর হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর তাকবীর শুনে হযরত ইসমাঈল (আঃ) বলে উঠলেন-
الله أكبر ولله الحمد.
এভাবে তিন জনের যিকিরকে একত্রিত করে হয়েছে তাকবীরে তাশরীক৷
(আশরাফুল হিদায়া ১/৬৩১ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী জেওর ৬/২৩৯ পৃষ্ঠা৷ কুরবানীর ইতিহাস ২২ পৃষ্ঠা৷)
الله أكبر، الله أكبر،
لا إله إلاالله والله أكبر،
الله أكبر ولله الحمد.
অর্থঃ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান৷ আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আল্লাহ মহান৷ আল্লহ মহান এবং সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য৷ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৫৬৯৬ হাদীস৷
তাবারানী শরীফ ৯৫৩৮ হাদীস৷ ইলাউস সুনান ৮/১৫৬ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৫৮ পৃষ্ঠা৷ গুনিয়াতুত তালিবীন ১৯৮ পৃষ্ঠা৷)
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَ اذْكُرُوا اللّٰهَ فِیْۤ اَیَّامٍ مَّعْدُوْدٰتٍ.
আর তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর (আইয়ামে তাশরীকের) নির্দিষ্ট দিনগুলোতে। (সূরা বাকারা ২০৩ আয়াত৷)
১৷ মাসআলাঃ
৯-ই জিলহজ্ব ফজর থেকে ১৩-ই জিলহজ্ব আসর পর্যন্ত ৫-দিনে মোট ২৩-ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর প্রত্যেক বালিগ পুরুষ-মহিলা, মুকীম-মুসাফির, গ্রামবাসী-শহরবাসী, জামাতে নামায আদায়কারী-একাকী নামায আদায়কারী সকলের উপর একবার করে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব৷
(ফতোয়ায়ে শামী ২/১৭৮ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৩৭০ পৃষ্ঠা৷ ইলাউস সুনান ৮/১৫২ পৃষ্ঠা৷ আল ফিকহুল মুয়াসসার ১৭৮ পৃষ্ঠা৷
আল হিদায়া ১/১৬৪ পৃষ্ঠা৷ আল কুদুরী ১/১১৩ পৃষ্ঠা৷ গুনিয়াতুত তালিবীন ১৯৮ পৃষ্ঠা৷)
২৷ মাসআলাঃ
তাকবীরে তাশরীক প্রত্যেক নামাযের পর একবার করে পাঠ করা ওয়াজিব৷
আর একাধিকবার পাঠ করা খেলাফে সুন্নাত তথা বিদআত৷
(ফতোয়ায়ে শামী ২/১৭৮ পৃষ্ঠা৷ ইমদাদুল ফতোয়া ১/৭১১ পৃষ্ঠা৷ আহসানুল ফতোয়া ৪/১৪২ পৃষ্ঠা৷
ফতোয়ায়ে জামেয়া ২/৬১৭ পৃষ্ঠা৷ আশরাফুল হিদায়া ১/৬২৯ পৃষ্ঠা৷)
৩৷ মাসআলাঃ
তাকবীরে তাশরীক পুরুষদের জন্য উচ্চস্বরে এবং মহিলাদের জন্য নিম্নস্বরে পাঠ করা ওয়াজিব৷
সুতরাং পুরুষগণ নিম্নস্বরে এবং মহিলাগণ উচ্চস্বরে পাঠ করলে ওয়াজিব আদায় হবেনা৷
(ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৩৭০ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ৩/১৭৯ পৃষ্ঠা৷ ইলাউস সুনান ৮/১৫২ পৃষ্ঠা৷ আশরাফুল হিদায়া ১/৬৩২ পৃষ্ঠা৷)
৪৷ মাসআলাঃ
তাকবীরে তাশরীক ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর সাথে সাথেই পাঠ করা ওয়াজিব৷
সুতরাং ইমাম তাকবীর বলতে ভুলে গেলে ইমামের জন্য অপেক্ষা না করে মুক্তাদীগণের জন্য তাকবীর বলা ওয়াজিব৷ যেমন ইমাম আবু ইউসুফ রহিঃ বলেছেনঃ আমি আইয়্যামে তাশরীকের মধ্যে একবার নামাযের ইমামতি করছিলাম৷ সালাম ফিরানোর পর আমি তাকবীর বলতে ভুলে গেলাম৷ তখন আমার মুহতারাম উস্তাদ হযরত ইমাম আজম আবু হানিফা রহিঃ উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করলেন৷
তাঁর তাকবীর শুনে আমরা সবাই তাকবীর পাঠ করলাম৷ (আশরাফুল হিদায়া ১/৬৩২ পৃষ্ঠা৷ আল কুদুরী ১/১১৩ পৃষ্ঠা৷
আল মুহীতুল বুরহানী ২/৫০৯ পৃষ্ঠা৷ শরহে বেকায়া ১/৪৯২ পৃষ্ঠা৷ তাহতাবী ২৯৪ পৃষ্ঠা৷)
৫৷ মাসআলাঃ
মাসবুকের জন্যও তার ছুটে যাওয়া নামায আদায় করে সালাম ফিরানোর সঙ্গে সঙ্গেই তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৪/২৩৯ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৩৭০ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ২/১৮০ পৃষ্ঠা৷ তাহতাবী ২৯৪ পৃষ্ঠা৷)
৬৷ মাসআলাঃ
তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলোর কাযা হওয়া নামায পরবর্তীতে আদায় করলে অথবা অন্য কোনো দিনের কাযা নামায তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলাতে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব হবেনা৷
কেননা তাকবীরে তাশরীক নির্ধারিত সময়ের আমল। (ফতোয়ায়ে শামী ২/১৭৯ পৃষ্ঠা৷ তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৪৫ পৃষ্ঠা৷ আল মুহীতুল বুরহানী ২/৫১২ পৃষ্ঠা৷ আল বাহরুর রায়িক ২/১৬৬ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬৪ পৃষ্ঠা৷)
৭৷ মাসআলাঃ
তাকবীরে তাশরীক শুধু ফরয নামাযের পর পাঠ করা ওয়াজিব৷
তাছাড়া অন্য কোন নামাযের পর পাঠ করা ওয়াজিব নয়৷ তবে উভয় ঈদের নামাযের পর একবার করে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা মুস্তাহাব৷
এছাড়া বিতর, জানাযা, তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, আউয়াবীন ইত্যাদি নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা বিদআত৷
(ফতোয়ায়ে শামী ২/১৭৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৩৭০ পৃষ্ঠা৷ ইলাউস সুনান ৮/১৪৮ পৃষ্ঠা৷ আশরাফুল হিদায়া ১/৬৩৩ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী গাওহার ১১/১১৭ পৃষ্ঠা৷ নুরুল ঈযাহ ১০৯ পৃষ্ঠা৷)
৮৷ মাসআলাঃ
তাকবীরে তাশরীকের কাযা নেই৷ তাই যথা সময়ে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে না পারলে অন্য সময়ে পাঠ করা ওয়াজিব হবেনা৷
সুতরাং অনিচ্ছাকৃত তাকবীরে তাশরীক পাঠ তরক হলে গুনাহ হবেনা৷ কিন্তু ইচ্ছাকৃত তাকবীর পাঠ তরক করলে ওয়াজিব তরকের গুনাহ হবে৷
(ফতোয়ায়ে শামী ২/১৮১ পৃষ্ঠা৷ খুলাসাতুল ফতোয়া ১/২১৬ পৃষ্ঠা৷ আল মুহীতুল বুরহানী ২/৫০৯ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬১ পৃষ্ঠা৷)
৯৷ মাসআলাঃ
জামাতে নামায আদায়কালে সালাম ফিরানোর পর যদি সকলেই তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে ভুলে যায়, তবে যতক্ষন মসজিদে থাকবে এবং নামায ভঙ্গ হয় এমন কোন কাজ না করবে, ততক্ষন পর্যন্ত সকলের উপরই তাকবীর পাঠ করা ওয়াজিব৷ আর যারা নামায ভঙ্গ হয় এমন কোন কাজ করে ফেলেছে, তাদের উপর তাকবীর পাঠের ওয়াজিব রহিত হয়ে যাবে৷ আর এ অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য কোন গুনাহ বা দায়বদ্ধ হবেনা৷