প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার আইন সংক্রান্ত বিষয়ঃ
প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার আইন সংক্রান্ত ৪টি বিষয় বেশি জরুরি। যদিও আমাদের দেশে এখনও আইনের এ সংক্রান্ত বিষয়গুলি অস্পষ্ট অথবা অব্যবহৃত। তার পরেও নিম্নলিখিত বিষয়গুলির দিকে গুরুত্ব দিয়ে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা উচিৎ যেমন –
১. রোগীর অনুমতি গ্রহণের বিষয়ঃ অসুস্থ ব্যক্তির অসুস্থতার মাত্রা বিবেচনা করে সম্ভব হলে রোগীর অনুমতি নিতে হবে। যদি রোগীর অনুমতি নেওয়া সম্ভব না হয় তবে রোগীর নিকট-আত্মীয়ের অনুমতি নেওয়া উচিৎ। রোগী যদি বাচ্চা হয় বা এমন কোন প্রেক্ষাপট থাকে যে সে অনুমতি দিতে অপারগ, তবে সে ক্ষেত্রে যথাযথ গার্জিয়ানের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। যদিও পুরো ব্যাপারটি অনেক সময় অবস্থার উপর নির্ভর করে। অনুমতি নিতে গিয়ে যদি কালক্ষেপণ হয় এবং সে কারণে অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষতি হয় সেটিও কাম্য নয়।
২. সঠিক ভাবে স্বাস্থ্যসেবা পালন সংক্রান্ত বিষয়ঃ প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের পূর্বে সেবা প্রদানকারীকে সেবা দানের সঠিকতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। উপকার করতে গিয়ে যেন অপকার না হয়ে যায় সেটি ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জানা থাকলে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য সেবা দেবো, জানা না থাকলে যে জানে তার সাহায্য নেবো অথবা যেখানে সেবা পাওয়া যায় সেখানে পাঠাবো, এ ধরণের মানসিকতা পোষণ করা ভাল। মনে রাখতে হবে, না জানাটা এ ক্ষেত্রে কোন অপরাধ নয়, স্বাভাবিক।
৩. দায়িত্বহীন হওয়া সংক্রান্ত বিষয়ঃ সেবা দেওয়ার যোগ্যতা থাকলে তিনি যেন অবশ্যই সেবা দেন, যদি কারো সেবা দেওয়ার যোগ্যতা থাকার পরেও তিনি সঠিকভাবে সেবা প্রদানের দায়িত্ব পালন না করেন, সে ক্ষেত্রে এটা তিনি সঠিক কাজ করলেন না, এমনভাবে বিষয়টিকে দেখতে হবে।
৪. লিখিতভাবে সমস্ত প্রমাণ সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ঃ হঠাৎ অসুস্থ্ হবার পিছনের সমস্ত ঘটনার বিবরণ যথাসম্ভব সঠিক ভাবে জেনে নিয়ে তা সংক্ষেপে লিখে রাখা উচিৎ। চিকিৎসা প্রদান সংক্রান্ত বিষয়গুলিও যথাসম্ভব লিখিতভাবে সংরক্ষণ করা উচিৎ যেন তা অসুস্থ ব্যক্তিকে অন্যত্র রেফারেল করলে এ লেখাগুলি সেখানকার চিকিৎসকের জন্যে সহায়ক হয়। অস্বাভাবিক ক্ষেত্রে বা দূরভীসন্ধিমূলক ক্ষেত্রে আইন-আদালত সংক্রান্ত প্রয়োজনে এ লেখাগুলি যেন পরবর্তীতে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে সহায়ক হয় সে বিষয়গুলি মাথায় রেখেও বিষয়গুলি লেখা উচিৎ।
তাৎক্ষণিক সেবা প্রদানকারীর গুণাবলীঃ
একজন সফল সেবা প্রদানকারীর বা প্রতিবিধানকারীর অবশ্যই নিম্নলিখিত গুণাবলীর অধিকারী হওয়া আবশ্যক।
১. সাহায্যের প্রয়োজন দেখা দিলেই দ্রুত সাড়া দিতে হবে।
২. পদ্ধতিগত উপায়ে ধীরস্থিরভাবে নিরীক্ষণের কাজ শেষ করে প্রয়োজনীয় প্রতিবিধানের বা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. শ্বাসরোধ, রক্তক্ষরণ, স্নায়বিক আঘাত ইত্যাদির প্রতিবিধান আগে করে তারপর অন্য কাজে হাত দিতে হবে।
৪. নির্ধারিত উপকরণের উপর নির্ভর না করে হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তা দিয়েই প্রতিবিধানের কাজ সমাপ্ত করতে হবে।
৫. পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন- টলায়মান গৃহ, চলমান যানবাহন বা যন্ত্রপাতি, বিপদজনক বৈদ্যুতিক তার, আগুন, বিষাক্ত গ্যাস, প্রতিকূল আবহাওয়া, আশ্রয় স্থান, পর্যাপ্ত আলো ইত্যাদি।
তাৎক্ষণিক সেবা প্রদানের বা প্রতিবিধানের পদ্ধতিঃ
প্রতিটি কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে । অনুরূপভাবে প্রাথমিক প্রতিবিধানের বা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও কিছ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় । যেমন –
১. ক্ষিপ্র গতিতে অথচ ঠান্ডা মাথায় নিঃসংকোচে আগের কাজ আগে এবং পরের কাজ পরে এই নীতিতে কাজ করতে হবে।
২. শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন দেখা দিলে কৃত্রিম পদ্ধতিতে শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. রক্তক্ষরণ থাকলে দ্রুত তা বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. স্নায়বিক আঘাতের চিকিৎসার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
৫. যতটুকু না করলেই নয় শুধু ততটুকু করতে হবে। কোনক্রমেই অধিক নড়াচড়া বা বাড়াবাড়ি করা চলবে না। মনে রাখতে হবে এটা আপাততঃ চিকিৎসা যা প্রকৃত চিকিৎসা হাতের নাগালে না থাকার কারণে দেওয়া হচ্ছে যেন প্রকৃত চিকিৎসা প্রাপ্তি পর্যন্ত অসুস্থ ব্যক্তি তুলনামূলকভাবে সুস্থ্ থাকে।
৬. রোগী এবং উপস্থিত সকলকে যথাসম্ভব আশ্বাস দিতে হবে যেন তাদের মনোবল অটুট থাকে।
৭. অপ্রয়োজনীয় মানুষ যেন দর্শক হয়ে অধিক ভীড় করে অযথা চিকিৎসার বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ।
৮. বিনা প্রয়োজনে অসুস্থ ব্যক্তির কাপড়-চোপড় খোলা বা আলগা করা যাবে না । তবে প্রয়োজনে অবশ্যই এটা করতে হবে।
৯. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে ডাক্তারের নিকট নেয়ার ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে ।
(যুক্তিযুক্তের লিখিত এবং অন্বেষা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘হঠাৎ অসুস্থতায় জরুরি চিকিৎসা’ গ্রন্থ থেকে সঙ্কলিত)